চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা নিশিকান্ত মণ্ডল খুনের ঘটনায় বেকসুর খালাস হলেন আট অভিযুক্ত। শনিবার হলদিয়া মহকুমা আদালত এই রায় ঘোষণা করে। দীর্ঘ ১৪ বছর মামলা চলার পর এহেন রায়ে অভিযুক্তরা খুশি হলেও অখুশি নিহত নিশিকান্ত মণ্ডলের পরিবার। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে প্রকৃত খুনি কে বা কারা?
২০০৯ সালে ২২ সেপ্টেম্বর নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া এলাকার হালদার পাড়ায় খুন হয়েছিলেন সেই সময়ের নন্দীগ্রাম জমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা, তথা সোনাচূড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান নিশিকান্ত মণ্ডল। ঘটনার পিছনে মাওবাদীদের প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে বলে সন্দেহ জোরালো হয়। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম জমি রক্ষা আন্দোলনে মাওবাদীদের যোগ ছিল বলে চাউর হয়েছিল। সেই ঘটনায় খেজুরি, নন্দীগ্রাম-সহ অন্যান্য জায়গা মিলে পুলিশি তদন্তে নজনের নাম উঠে আসে । তাঁরা হলেন নন্দীগ্রামের গাংড়ার গৃহবধূ রিনা প্রধান, টালিগঞ্জের তারক মিত্র লেনের বাসিন্দা দেবলীনা চক্রবর্তী (পাপাই), গাংড়ার যুবক বাসুদেব মণ্ডল, শুভ দাস (সঞ্জয়, পুকুন), প্রাণতোষ দাস (প্রমোদ, প্রমথ), খেজুরির সাহেবনগরের যুবক কেবল দাস, খেজুরির সাতখন্ড গ্রামের বাসিন্দা রাজকমল পাত্র (ভীম), হলদিয়ার দুর্গাচকের বাসিন্দা নারায়ণ মণ্ডল (মধুসূদন, রবি, সেলিম, মাস্টার) এবং অন্ধ্রপ্রদেশের প্রকাশম জেলা ও থানার কোপ্পল গ্রামের উচ্চশিক্ষিত যুবক ভেঙ্কটেশ্বর রেড্ডি (দীপক রাও, চন্দন রাও, তেলেগু দীপক, গৌরাঙ্গ, দীপঙ্কর, প্রশান্ত)। সেই সময় গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক থেকে দেড় বছর জেলে ছিলেন অভিযুক্তরা। তার পর তাঁরা জামিন পেয়ে যান। কিন্তু মামলা চলতে থাকে।
হলদিয়া মহকুমা আদালতের নির্দেশ মতো তাঁরা হাজিরা দিয়েছেন। মামলায় শনিবার এই আদালতের নির্দেশে বেকসুর খালাস হলেন সমস্ত অভিযুক্ত। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী শুভাশিস রায় জানিয়েছেন,”নিশিকান্ত মণ্ডল খুনের ঘটনায় আমার সমস্ত মক্কেলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আদালত তাদের সকলকে বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করেছেন।” বেকসুর খালাস হওয়ার পর এ বিষয়ে এদিন মধুসূদন মণ্ডল জানিয়েছেন,”অন্তঃসারশূন্য মামলা। তদন্ত সঠিক পথে এগোলে প্রকৃত আসামী ধরা পড়ত। এই মামলাতে ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশ আমাদের জড়িয়ে দিয়েছে। আমরা কোনওভাবে জড়িত ছিলাম না। ৩৭ জন সাক্ষীর দেওয়া বয়ান থেকেও আদালত কিছুই সত্যতা খুঁজে পায়নি। আমিও জানতাম, আমি দেখসুর খালাসের রায় পাব। আদালতের ওপর আস্থা ছিল।”
নিশিকান্ত মণ্ডলের পরিবারের লোকজন আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট । তাঁর ছেলে সত্যজিৎ মণ্ডল জানিয়েছেন,”পুলিশি তদন্ত ঠিক পথে এগোলে প্রকৃত দোষী ধরা পড়ত এবং তাঁর শাস্তি হত। পুলিশি তদন্তের মধ্যেই ফাঁক থেকে গিয়েছে। প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে খুনি কে? এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা হাই কোর্টে যাচ্ছি ।”একই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন প্রয়াত নেতার স্ত্রী মানসী মণ্ডল।