কৃষ্ণকুমার দাস: রক্তে মাত্র ৯ শতাংশ অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ে ভরতি হওয়া ১৩১ কেজি ওজনের করোনা (Corona Virus) রোগীকে সুস্থ করে ইতিহাস গড়ল কলকাতা (Kolkata)। শুধু তাই নয়, ECMO চিকিৎসা পদ্ধতি ১০০ জন রোগীর উপর প্রয়োগ করে এশিয়ান জোনে রেকর্ডও করলেন তিলোত্তমার চিকিৎসকরা। একমাত্র তাইওয়ানের একটি সেন্টারই এর চেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে বলে দাবি শহরের ECMO সেন্টারের ডিরেক্টর ডাঃ কুণাল সরকারের।
করোনা ভাইরাস যেহেতু ফুসফুসকে অকেজো করে দেয়, তাই বিকল হওয়া অঙ্গ সচল রেখে শরীরে অক্সিজেন যোগান দেওয়া হল ECMO’র প্রধান কার্যকারিতা। ECMO’র পুরো নাম হল-‘এক্সট্রা কর্পোরাল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন’। নয়া যন্ত্রটি এর আগে সার্স ও সোয়াইন-ফ্লু রোগে ফুসফুস ও হার্টকে সচল রেখে বিশ্বে অনেক রোগীর প্রাণ বাঁচিয়েছে। এবার করোনা আক্রান্তর ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব সাফল্য দেখাচ্ছে। বিক্ষিপ্তভাবে দেশে দুই একটি হাসপাতালে নয়া চিকিৎসা পদ্ধতি চালু হলেও মুম্বইয়ের রিদ্ধি বিনায়ক ও কলকাতার মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি প্রতিষ্ঠানিকভাবে অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে করোনা রোগীকে সুস্থ করার ক্ষেত্রে ডাঃ কুণাল সরকারের টিম ECMO ব্যবহার করে চমকে দেওয়া সাফল্য পেয়েছেন। এমনই একজন রোগী হলেন রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের বর্ধমানের জোনের ইঞ্জিনিয়ার অতনু দত্ত। বয়স মাত্র ৩৪, ওজন ছিল ১৩১ কেজি। ভারী চেহারার ইঞ্জিনিয়ার করোনা আক্রান্ত হয়ে যখন মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। তখন তাঁর শরীরে অক্সিজেন ছিল ৯ শতাংশ। ভেন্টিলেশনে দিয়েও ফুসফুসকে সক্রিয় করা সম্ভব হচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে ECMO মেশিনে নিয়ে যাওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: নিউটাউনে রাম মন্দিরের ভূমিপুজো উদযাপনে বিজেপিকে বাধা ‘তৃণমূলে’র, চলল গুলি]
সেন্টারের কো-ডিরেক্টর ডাঃ অর্পন চক্রবর্তী জানান, “১৫ থেকে ২৫ জুলাই ECMO-তে ছিলেন অতনু। করোনা আক্রান্ত কমবয়সী রোগীর ক্ষেত্রে ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ বেশি হওয়ায় অতনুর চিকিৎসায় ঝুঁকি ছিল। চিকিৎসার দ্বিতীয় সপ্তাহে ভাইরাসের নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে এই ঝড় হচ্ছে।” প্রতিদিন ডাক্তাররা ভিডিও কলিং করে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলাতেন অতনুকে। তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল, শহরে শুধুমাত্র ভারী চেহারার জন্য গত তিনমাসে বেশ কয়েকজন কমবয়সী কোভিড রোগী মারা গেলেন। সেক্ষেত্রে অতনুকে শুধু সুস্থ নয়, প্রায় ২০ কেজি ওজন কমিয়ে বাড়ি পাঠালেন চিকিৎসকরা। দিন কয়েক আগে ৪০ বছর বয়সী একজন রোগীকে একইভাবে সুস্থ করে পাঠিয়েছেন।
এখন মেডিকায় যে চারজন ECMO-তে ভরতি তাঁরা সবাই কিন্তু করোনা আক্রান্ত। এর মধ্যে একজন ৪০, অন্যজন ৩৫ বছরের কোভিড পজিটিভ রোগী। তবে শুধু করোনা নয়, জটিল নিউমোনিয়াতেও এই চিকিৎসা পদ্ধতি যে অত্যন্ত কার্যকরি তারও প্রমাণ রাখছেন মেডিকার ECMO টিম। ডাঃ কুণাল সরকার বলেন, “ভেন্টিলেশন বা আইসিইউতে কিছু সময় নজরে রাখলেই হয়। কিন্তু এই চিকিৎসায় ২৪ ঘণ্টাই সমস্ত প্যারামিটার ও যন্ত্রের উপর নজর রাখতে হচ্ছে বিশেষজ্ঞ টিমকে।” বিশ্বে একমোর সাফল্য ৪০-৪২ শতাংশ, কিন্তু ডাঃ সরকারের টিম ১০০জন রোগীর মধ্যে ৪৬ জনকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: চেম্বারে বসে হাওড়া হাসপাতালের নামে ভুয়ো করোনা রিপোর্ট! পুলিশের জালে চিকিৎসক]
The post করোনা চিকিৎসায় ECMO’র কামাল, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন ১৩১ কেজি ওজনের যুবক appeared first on Sangbad Pratidin.