রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: অমিত শাহের সফরের ঠিক আগেই বিজেপির নেতাদের নিশানায় শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। নন্দীগ্রামে বুথ সংগঠনে ব্যর্থতা নিয়ে দলীয় বৈঠকে তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নাম না করে আঙুল তুললেন শুভেন্দুর দিকে। নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েত ভোটের আগাম প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়াটা শুভেন্দুর স্বেচ্ছাচারিতা বলেও অভিযোগ তুললেন ওই জেলা সভাপতি। পাশাপাশি আবার শুভেন্দুর মহাজোটের তত্ত্বকেও এদিন খারিজ করে দিয়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। আজ, শুক্রবার রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার আগে বৃহস্পতিবার সল্টেলেকে ইজেডসিসি-তে পঞ্চায়েত ও বুথ নিয়ে বঙ্গ বিজেপির বৈঠকে দলীয় কোন্দল, সংগঠনের বেহাল অবস্থা ও শুভেন্দু বিরোধিতায় সরগরম হয়ে উঠল।
বুথ সংগঠন গড়তে নন্দীগ্রাম ও ময়না বিধানসভা ফেল। এই দুই বিধানসভা এলাকায় দলের বুথ সশক্তিকরণ কর্মসূচির পারফরম্যান্স ভাল না হওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার দলীয় বৈঠকে নাম না করে শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বিধায়ক অশোক দিন্দার দিকেই আঙুল তুলেছেন বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, দলীয় সূত্রে এমনই খবর। এদিন সল্টলেকে ইজেডসিসি-তে পঞ্চায়েত নির্বাচন ও বুথ সশক্তিকরণ নিয়ে বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসলের সামনেই সরব হয়েছেন তমলুকের জেলা সভাপতি। নাম না করে পরোক্ষে শুভেন্দুকে নিশানা করলেও ময়নার বিধায়ককে অবশ্য তিনি সরাসরি আক্রমণ করেন। তমলুকের জেলা সভাপতি বলেন, ময়নার বিধায়ক তো ক্রিকেট খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। দলীয় বৈঠকে নন্দীগ্রামে সংগঠনের কাজে শুভেন্দুর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গেই পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্যকে বলতে হয়, বিধায়ক-সাংসদরা না থাকলেও সংগঠন সংগঠনের মতো চলবে।
[আরও পড়ুন: সাড়ে তিন বছরেই ঠোঁটস্থ সব রাজ্যের রাজধানী, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডে নাম তুলল বালুরঘাটের খুদে]
তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আরও প্রশ্ন তোলেন, নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থীদের নাম আগাম কীভাবে ঘোষণা করে দিলেন বিরোধী দলনেতা। নন্দীগ্রামে আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়াটা শুভেন্দুর স্বেচ্ছাচারিতা বলেই মনে করছেন দলের অনেকে। এই প্রশ্ন ওঠায় বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। তাঁরা বলেন, দলীয়স্তরে সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে। নন্দীগ্রামে যাঁদের প্রার্থী হিসেবে আগাম ঘোষণা করা হয়েছে সেই তালিকায় এখনই চূড়ান্ত নয়। উল্লেখ্য, দলের নিয়মের বাইরে গিয়ে সম্প্রতি নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েতে কারা প্রার্থী হবেন সেই তালিকা জেলা পার্টিকে না জানিয়ে ঘোষণা করে দেন শুভেন্দু অধিকারী। দলের আদিরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সরবও হন। পঞ্চায়েতে শুভেন্দুর মহাজোটের তত্ত্বকেও এদিন খারিজ করে দিয়েছে বিজেপির পঞ্চায়েত নির্বাচনী কমিটির দায়িত্বে থাকা সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। সিপিএম-কংগ্রেসকে আঁকড়ে ধরতে পঞ্চায়েতে নিচুতলায় মহাজোটের বার্তা দিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেটা যে বিজেপি অনুমোদন করে না তা এদিন স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
মনে করা হচ্ছে, সাগরদিঘির নির্বাচনে শুভেন্দুর স্ট্র্যাটেজিতে এই মহাজোটে গিয়ে নিজেদেরই যাত্রা ভঙ্গ হয়েছিল বিজেপির। বিজেপির জমানতজব্দ হয়। বৈঠকে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, একের বিরুদ্ধে এক লড়তে হলে বিজেপির প্রতীকে লড়তে হবে। কারণ, বিজেপিই পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র বিরোধী দল। এদিন বৈঠকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা রাজ্য নেতাদের কাছে জানতে চান, যাঁরা ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তাঁরা অনেকেই কেন বসে গিয়েছেন? তারা কোথায়, তাদের সঙ্গে দলের কেউ যোগাযোগ রাখেন না কেন? গত পঞ্চায়েতে জয়ী প্রার্থীদের দল কি যোগ্য সন্মান দিয়েছে? কেন্দ্রীয় নেতাদের এই প্রশ্ন ও তোপের মুখে পড়ে রাজ্য নেতারাও অস্বস্তিতে পড়েন। দক্ষিণবঙ্গের এক বিধায়ক বলেছেন, বুথ সশক্তিকরণ কাগুজে বাঘ। বাস্তবের সঙ্গে কোনও মিল নেই। নিচুতলায় বামেরা গেলেও বিজেপি যে পৌঁছতে পারছে না সেটা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই বিধায়ক। তাঁর আরও অভিযোগ, নিচুতলার সঙ্গে নেতাদের যোগাযোগ নেই। নেতারা অন্য পৃথিবীতে থাকেন।