গৌতম ব্রহ্ম: পোষ্যদের চিকিৎসা করতে নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয় চিকিৎসকদের। তার মধ্যে প্রধান হল, জরুরি ক্ষেত্রে রক্তের অভাব। সেই সমস্যা এবার সমাধানের পথে।
ডিইএ ১.১, ডিইএ ১.৭, ডিইএ ২.২, এগুলো সবই রক্তের (Blood) গ্রুপ। কিন্তু মানুষের নয়। নিশ্চয়ই ভাবছেন তবে কার? এগুলি সারমেয়দের। তাদের শরীরে মিলেছে এমনই তেরোটি গ্রুপের রক্ত। আর এই রক্তের গ্রুপের জন্যই ডেটা ব্যাংক তৈরি হল কলকাতায় (Kolkata)। আজ থেকে এই তথ্য ব্যাংকের কাজ শুরু করছে দক্ষিণ কলকাতার অনিল রায় রোডের একটি বেসরকারি পশু হাসপাতাল। সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, “পোষ্যরা দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে বা অন্য কোনও কারণে “ব্লাড লস” হতে পারে, সেক্ষেত্রে ঘাটতি মেটাতে মানুষের মতোই রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কুকুরদের ক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ বেশি হওয়ায় চটজলদি ম্যাচিং করানো মুশকিল। রক্তের তথ্য ব্যংক হাতে থাকলে রক্তদাতার জন্য আর হাতরাতে হবে না। পোষ্যের মালিককে ফোন করলেই সমাধান হয়ে যাবে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ।”
[আরও পড়ুন: বাইপাসের ধারের হোটেল বৈঠক বিজেপির, সপরিবারে সেখানেই হাজির জিতেন্দ্র তিওয়ারি]
এতদিন পোষ্যদের ক্ষেত্রে মান্ধাতার আমলের পদ্ধতি অবলম্বন করা হতো। অর্থাৎ দাতা ও গ্রহীতার রক্তের দু ফোঁটা স্লাইডে নিয়ে সেগুলো মিশিয়ে দেখা হতো জমাট বাঁধছে কি না। এই ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ পদ্ধতি সময় সাপেক্ষ। সব সময় সঠিক ফলও দেয় না। ফলে গ্রহীতার শরীরে অ্যালার্জি তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তথ্য ব্যাংক তৈরি হলে এই সমস্যা কাটানো যাবে বলেই মত পশু চিকিৎসকদের। রাজ্য প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ডা সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, “গোটা দেশে এই ধরণের তথ্য ব্যাংক ও ব্লাড ব্যাংক রয়েছে একমাত্র দক্ষিণ ভারতে, তামিলনাড়ু ইউনিভার্সিটি অব ভেটেরেনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সে (TANUVA)। কলকাতায় এহেন ব্যাংক তৈরি হলে পোষ্যদের চিকিৎসায় বিপ্লব আসবে।” তার পর্যবেক্ষণ, রক্তে মজুত অ্যারিথ্রোসাইট (Erythrocyte) অ্যান্টিজেনের উপর ভিত্তি করেই হয় কুকুরদের রক্তের গ্রুপ। ডগ অ্যারিথ্রোসাইট অ্যান্টিজেন ১.১, ২.২ এগুলো সবই এক একটি অ্যান্টিজেনকে নির্দিষ্ট করে। বিড়ালের ক্ষেত্রে অবশ্য রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ নমুনা তুলনামূলক সহজ। কারণ তাদের মাত্র চারটি গ্রুপ, এ, বি, এবি ও সি। এ আর বি মেজর গ্রুপ, সি দুষ্পাপ্য। তাই এই গ্রুপের কোনও বিড়ালের রক্তের প্রয়োজন হলে সমস্যায় পড়তে হয়। ব্লাড ব্যাংক রেজিস্ট্রেশন তৈরি হলে এই সমস্যা মিটবে বলেই মনে করছেন তিনি।
ওই বেসরকারি হাসপাতালের তরফে অধিকর্তারা বলেন, “এক অভিনেতার জন্মদিনকে সামনে রেখে আমরা এই রক্তের তথ্য ব্যাংক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যেই এখানে একটি বিড়াল ও চারটি সারমেয়র শরীরে সফল ভাবে রক্ত সঞ্চালন করা হয়েছে। পূর্ব ভারতে এমন উদ্যোগে এই প্রথম। এখানে অস্ত্রপচোরও হচ্ছে।” মনে করা হচ্ছে, সত্যিই পোষ্য চিকিৎসায় বিপ্লব এনে দিতে চলেছে এই রক্তের তথ্য ব্যাংক।