অর্ণব আইচ: এক গ্লাস জল। খেলেই চোখে নেমে আসে হালকা নেশা। কিন্তু গন্ধ শুঁকেও বোঝার উপায় নেই যে লোকটি নেশাগ্রস্ত। অথচ এই নেশার কারণে হাতে স্টিয়ারিং থাকা অবস্থায়ও বুজে আসতে পারে চোখের পাতা। আর তার ফলেই হয়ে যেতে পারে বড় ধরনের পথ দুর্ঘটনা। এভাবে একাধিক দুর্ঘটনা কলকাতা ও বিভিন্ন জেলায় হয়েছে বলে অভিযোগ। আর এই নেশার পিছনে যে বস্তুটি রয়েছে, সেটি হচ্ছে ‘পপি স্ট্র’ বা পোস্ত দানার খোসা (মাদক)। আড়াই মাস আগে কলকাতার উপকণ্ঠে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ এই নেশার বস্তু উদ্ধার করেছিল। ‘পপি স্ট্র’ পাচারের উৎসের সন্ধান করে চক্রের এক মূল পাণ্ডাকে বিহারের গয়া থেকে গ্রেপ্তার করলেন গোয়েন্দারা।
ধৃতের নাম অমিত কুমার। ওই ব্যক্তি জড়িবুটির ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন নেশার বস্তু পাচার করত বলে অভিযোগ। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষে হাওড়া স্টেশন থেকে ১২ কিলো ‘পপি স্ট্র’ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় ওড়িশার ভদ্রকের বাসিন্দা বৃন্দাবন সাহুকে এনসিবি গ্রেপ্তার করে। তাকে যে ব্যক্তি ওই নেশার বস্তু বিক্রি করেছিল, রাজারহাটে তার ডেরায় হানা দেন গোয়েন্দারা। উদ্ধার করা হয় ৪৩৬ কিলো ‘পপি স্ট্র’। এই পোস্তার খড়ের মধ্যে আট কিলো গুঁড়ো করে রাখা হয়েছিল। পোস্তর খোসার দাম কিলো প্রতি ১২০০ টাকা করে।
[আরও পড়ুন: কারা এজলাসে ঢুকতে বাধা দেন? সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্তকরণের নির্দেশ বিচারপতি মান্থার]
গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, এই রাজ্য থেকে শুরু করে বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খন্ড ও অন্যান্য রাজ্যেও রাস্তার উপর বহু ধাবায় গোপনে বিক্রি হয় ওই পোস্তর খোসা। একদিন জলে ভিজিয়ে রাখা হয় ওই ‘পপি স্ট্র’। এরপর তা ছেঁকে জল আলাদা করে রাখা হয়। সেই নেশার জল গোপনে ট্রাক, লরি বা অন্যান্য গাড়ির চালকদের কাছেও বিক্রি করে ধাবার কর্মীরা। এই নেশার জল হাইওয়ে, কখনও বা কলকাতায় দুর্ঘটনার মূল কারণ। ওই পোস্তর খোসা উদ্ধার করার পর ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, বিহারে রয়েছে এই পপি স্ট্র চক্রের কিংপিন। প্রথমে গা ঢাকা দিয়েছিল অমিত কুমার। সম্প্রতি এলাকায় ফিরে আসার পর গোয়েন্দারা গয়ায় তল্লাশি চালিয়ে তাকে ধরে ফেলেন।
জানা যায়, জড়িবুটির দোকান ও দশকর্মা ভান্ডারের মালিক হওয়ার কারণে জড়িবুটির আড়ালেই এজেন্টদের কাছ থেকে সে বিপুল পরিমাণ ‘পপি স্ট্র’ সংগ্রহ করত। সেই নেশার বস্তু সে লোক মারফৎ পাচার করত কলকাতা-সহ কয়েকটি শহরে। সেখান থেকে বিভিন্ন রাজ্যে চলে যেত নেশার বস্তুটি। বৃহস্পতিবার অমিত কুমারকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাকে একদিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। শুক্রবার ফের তাকে তোলা হবে বিশেষ মাদক বিষয়ক আদালতে। তার সঙ্গীদের খোঁজ করছে এনসিবি।