শেখর চন্দ, আসানসোল: সাজতে ভালোবাসেন শ্রেয়া পাল। বার্নপুরের এই কলেজ ছাত্রীকে মাঝেমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রাইডাল মেকআপে (Bridal Makeup) কিংবা পার্টি লুকে দেখা যায়। সাদামাটা মেয়েটিই অনন্যা হয়ে ওঠে যখন মা দুর্গা কিংবা উমার বেশ ধারণ করে। তারপরেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে বয়ে যায় লাইক আর কমেন্টের বন্যা। তবে আর দশটা এইচডি মেকআপ আর্টিস্ট বা মডেলদের সাজের থেকে তাঁর বিষয়বস্তু সব সময়ই আলাদা থাকে। শ্রেয়ার সাজে থাকে সামাজিক সচেতনতার বার্তা। যা তাক লাগিয়ে দেয় সবাইকে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটল না।
করোনা আবহে দুর্গা পুজো (Durga Puja Makeup) আসন্ন, চোখ রাঙাচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। উমা সাজে দশ ভূজা শ্রেয়ার হাতে দেখা মিলল স্য়ানিটাইজার, মাস্ক, স্টেথোস্কোপ ও ভ্যাকসিন। সংকটকালে বিশ্বকে বাঁচাতে মহিষাসুরমর্দিনীরূপ নিয়েছিলেন মা দুর্গা। আর করোনাকালে ডাক্তার সমাজকর্মীরাই হয়ে উঠেছেন মানবসমাজের রক্ষাকর্তা। সেই রূপই ফুটে উঠেছে কলেজ ছাত্রীর সাজে। তবে শুধু সাজে বা ফটোশুটেই দুর্গারূপে থাকা নয়। বাস্তবেও কলা বিভাগের এই ছাত্রী যেন দশভুজা।
দশরকম সামাজিক কাজে সদাব্যস্ত কলেজ ছাত্রী শ্রেয়া। কখনও কোভিড কিচেন, কখনও ত্রাণ বিলি, কখনও দুঃস্থদের পাঠশালায় কখনও বা ছুটছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে। আবার তাঁর দেখা মিলছে রক্তদান শিবিরেও। ‘অঙ্গীকার’ ফাউন্ডেশনের অন্যতম সক্রিয় সদস্য শ্রেয়া পাল। শুধু করোনাকালে ঝাঁপিয়ে পড়া নয়, বার্নপুর রামবাঁধ এলাকার এই যুবতীর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমফান ও যশ বা ইয়াস বিপর্যয়ের পরেও। বন্ধুদের সঙ্গে রাতের পর রাত জেগে প্যাকেটবন্দি করেছেন বিপর্যস্ত মানুষদের ত্রান। বার্নপুরের আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া বা প্রান্তিক এলাকায় গেলে দেখা মিলবে শ্রেয়া পালের। কারও কাছে দিদি, কারও বোন, কারও কাছে আবার মেয়ে। কলেজ ছাত্রী শ্রেয়া সদা ব্যস্ত সমাজের কাজে। শ্রেয়ার বাবা সামান্য পানের দোকান চালিয়ে সংসার চালান। মা গৃহবধূ। বোন ছাত্রী। অর্থাৎ আর্থিকভাবে যে খুব স্বচ্ছলতা রয়েছে তা কিন্তু নয়। তবু এই বয়স থেকেও শ্রেয়া পাল ঝাঁপিয়ে পড়েছে সমাজের কাজে। আবার পুজোর মুখে দেখা মিলছে মা দুর্গার সাজেও।
[আরও পড়ুন: Beauty Tips: দীর্ঘদিন যৌবন ধরে রাখতে চান? রূপচর্চায় রোজ রাখুন গোলাপের পাপড়ি]
শ্রেয়ার মেকওভার আর্টিস্ট পাপিয়া নাথ বলেন, ‘সাধারণ মেয়েটিকে যেভাবেই সাজাই না কেন প্রত্যেকটি সাজে মানিয়ে যায় তাঁকে। পাপিয়ার মতে, মা দুর্গার যে রূপ আমরা দেখতে অভ্যস্ত তা যুদ্ধংদেহী রূপ। গয়না, বর্মা বা মুকুট পরিহিত যুদ্ধের সাজের সঙ্গে ভাইরাসের মোকাবিলায় মাস্ক, স্যানিটাইজার, ভ্যাকসিন এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ। অসুররূপী করোনার বিরুদ্ধেই তাই এই সাজ দেওয়া হয়েছে। শ্রেয়ার পাশে সবসময় যাঁরা থাকেন সেই ‘অঙ্গীকার’ ফাউণ্ডেশনের সদস্য সৌভিক ঘোষ ফটোশুট করেছেন। তিনি বলেন, “বিশ্বকবি বাংলা মায়ের এক মূর্তি কল্পনা করেছিলেন। সাহসী বঙ্গ জননী লড়াইয়ের বার্তা দিচ্ছেন। এও এক লড়াইয়ের গল্প। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা লড়াইয়ের বদলে এখন মানুষের লড়াই করোনার বিরুদ্ধে। এমন লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে। করোনা আবহে মাস্ক, ভ্যাকসিন মাস্ট। তাই মা দুর্গার সাজে এই অস্ত্রগুলোই আমরা তুলে দিয়েছি মডেলের হাতে। অঙ্গীকার ফাউণ্ডেশনের সদস্যরা বলেন, দেবীর এই সাজ দেখে যেন হুঁশ হয় নাগরিকদের। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।” তবে দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে বার্নপুরের মডেল ও সমাজকর্মী শ্রেয়া পালের সোশাল মিডিয়ায় পোস্টই এখন হটকেক। তাঁর মতে সচেতনতার বার্তা দিতেই মা দুর্গার এই রূপ দেখানো হয়েছে।