রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: দলের বিদ্রোহে এবার নয়া মোড়। বাংলার বিজেপি (BJP) বর্তমান রাজ্য নেতাদের হাতে নিরাপদ নয়। তাই বঙ্গ বিজেপিকে বাঁচাতে কলকাতায় ‘চিন্তন বৈঠকে’র প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করল বিক্ষুব্ধদের একাংশ। ‘বিজেপি বাঁচাও মঞ্চে’র ব্যানারে সেই বৈঠকে থাকার উদ্যোগীদের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছে বঙ্গ বিজেপির একদা বর্ষীয়ান নেতা তথাগত রায়-সহ সদ্য বিদ্রোহী দুধকুমার মণ্ডল, পি সি সরকার, মোহিত রায়, অম্বুজ মোহান্তি-সহ কয়েকজন প্রাক্তন রাজ্য নেতাদের সঙ্গে। সেই সব পুরোনো নেতা, যাঁদের এখন দলে সন্মান বা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাঁদেরকে বিজেপি বাঁচাও ‘চিন্তন বৈঠকে’ সামিল করার চেষ্টা চলছে। বাংলায় বিজেপির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার নির্যাস পাঠিয়ে দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ত্ব যদি বাংলায় দলকে বাঁচাতে পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আগামিদিনে রাজ্য বিজেপির পালটা এই মঞ্চের লড়াই চলবে।
বঙ্গ বিজেপির বিদ্রোহীদের তালিকায় রবিবারই নতুন নাম সংযোজন হয়েছে। তিনি হচ্ছেন বীরভূম (Birbhum) জেলায় বিজেপিকে শক্তিশালী করার অন্যতম প্রধান কারিগর দুধকুমার মণ্ডল। ফেসবুক পোস্ট করে দলে তাঁর অনুগামী নেতা-কর্মীদের বসে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন। আর এই ক্রমশ বাড়তে থাকা বঙ্গ বিজেপির বিক্ষুব্ধ শিবিরকে এক মঞ্চে আনতে এবার মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ। এই মঞ্চের তরফে দলের সংখ্যালঘু মোর্চার প্রাক্তন রাজ্য নেতা সামসুর রহমান জানালেন, “বর্তমান কতিপয় রাজ্য নেতাদের হাত থেকে বাংলার বিজেপিকে বাঁচাতে আমরা কলকাতায় শীঘ্র চিন্তন বৈঠক ডাকছি। এ রাজ্যে যাঁরা বিজেপিকে গড়ে তুলেছেন, দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তাঁদের পরামর্শ নেব। বঙ্গ বিজেপির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা তথাগত রায়, পি সি সরকার, অম্বুজ মোহান্তি, অসীম সরকার ও দুধকুমার মণ্ডলদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কয়েকজনের সঙ্গে কথাও হয়েছে। ভবিষ্যতে বঙ্গ বিজেপিকে বাঁচাতে কি করতে হবে সেই পরামর্শ আমরা পুরনো নেতা, যাঁরা দলে ব্রাত্য তাঁদের থেকে নেব। সে জন্যই চিন্তন বৈঠক।”
[আরও পড়ুন: নিয়ম ভেঙে প্রাইভেট টিউশন চালিয়ে বিপাকে, তদন্তের মুখে ৬১ জন প্রাথমিক শিক্ষক]
বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের বক্তব্য
১) দলের পুরনোদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে না।
২) অমিতাভ চক্রবর্তীকে অবিলম্বে সরাতে হবে।
৩) রাজ্য সভাপতিকে বেশিরভাগ সময় কলকাতায় দিতে হবে। তিনি সামনে থাকলেও দল চালাচ্ছে অন্যরা।
৪) বিভিন্ন মিছিলে অন্য জেলা থেকে লোক এনে ভিড় দেখিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।
৫) রবিবার বারাকপুরে শুভেন্দু অধিকারীর মিছিলে বাইরে থেকে লোক এনে ভিড় দেখানো হয়েছে।
একুশের ভোটে হারের পরই বঙ্গ বিজেপিতে সংঘাতের সুর। বিদ্রোহ চরমে। শুরু হয়েছে মুষল পর্ব। নেতৃত্বের নিচুতলা থেকে উপরতলা সর্বত্র দ্বন্দ্ব। তিটি বিরক্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এরই মধ্যে বিক্ষুব্ধরা কি এবার সংঘবদ্ধ হচ্ছে। সুকান্ত-অমিতাভ শিবিরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে তারা কি পাকাপাকিভাবে পৃথক মঞ্চ গড়ে তুলতে চাইছে। বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের ব্যানারে সেই উদ্যোগ থেকে এটাই স্পষ্ট। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা অবশ্য বিক্ষুব্ধদের জোট বাঁধার বিষয়কে গুরুত্ব দিতে নারাজ। ওই নেতার কথায়, দলের বাইরে কারও কোনও গুরুত্ব নেই। সামনের মাসে অর্থাৎ জুলাইতে এই চিন্তন বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সামসুর রহমান জানালেন, “বিভিন্ন জেলা ও মণ্ডলের নেতা-কর্মীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আর রাজ্য কমিটিরও বাদ পড়া এবং পুরোনো নেতৃত্ব সকলের সঙ্গেই আমরা যোগাযোগ করছি।”