অরিঞ্জয় বোস, পুরী: ওড়িশায় প্রায় আড়াই দশক ধরে মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। বিজু পট্টনায়েকের ছেলে অবশ্য এর আগে সাংসদ হয়েই জাতীয় রাজনীতির পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। কিন্তু এবারের লোকসভা নির্বাচনের আবহে বার বার তাঁকে অবসর নেওয়ার 'পরামর্শ' দিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। ৭৭ বছরের রাজনীতিক সম্পর্কে আরও একটা খোঁচা আগাগোড়াই দিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। সেটা বিজেডি সুপ্রিমোর 'কাছের' এক মানুষকে নিয়ে, যিনি ক্রমেই ওড়িশার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে উঠেছেন। আইএএস অফিসার থেকে রাজনীতির মঞ্চে যাঁর অনায়াস অবতরণ, তিনি ভি কার্তিকেয়ান পান্ডিয়ান। তামিল এই আমলার প্রতিই আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। তালিকায় রয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। উঠে পড়েছে তাঁর 'ভূমিপুত্র' না হওয়ার প্রসঙ্গ।
কে এই পান্ডিয়ান? ২০০০ সালে পাঞ্জাবের ক্যাডার হিসেবে তাঁর আইএএস অফিসারের কেরিয়ার শুরু। যদিও অচিরেই ওড়িশায় পোস্টিং হয় তাঁর। মনে করা হয়, স্ত্রী সুজাতা ওড়িয়া হওয়াতেই এই রাজ্যে বদলি হতে চেয়েছিলেন পান্ডিয়ান। নবীন পট্টনায়েক তখন সবে এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ওড়িশায় আসার পর থেকেই প্রশাসনের নজরে পড়ে যান পান্ডিয়ান। এর পর নবীন পট্টনায়েকের পৈতৃক জেলা গঞ্জামের কালেক্টর হন তিনি। ২০১১ সালে তিনিই হন নবীনের ব্যক্তিগত সচিব।
[আরও পড়ুন: ভোটগণনায় কড়া নজরদারির সিদ্ধান্ত, বাংলায় আসছে ১৩৮ জন পর্যবেক্ষক]
কিন্তু কী করে এতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠলেন পান্ডিয়ান? আসলে দেশের অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীদের মতো ক্যাবিনেটের সদস্যদের উপরে সবথেকে বেশি ভরসা করাটা নবীন পট্টনায়েকের অভ্যাস নয়। বরং তিনি আমলাদের উপরই বেশি ভরসা করেন। আর সেই কারণেই পান্ডিয়ান যে দ্রুত ওড়িশার (Odisha) মন্ত্রীদের থেকেও 'শক্তিশালী' হয়ে উঠবেন, সেটাই স্বাভাবিক ছিল। স্থানীয় সাংবাদিকরা তাঁকে 'সুপার চিফ মিনিস্টার' বলে থাকেন। মসনদে না থেকেও আড়াল থেকে তিনিই যেন ওড়িশা প্রশাসনের মুখ।
আর তাই ভোটপ্রচারে বিজেপি আক্রমণ শানানোর জন্য পান্ডিয়ানকেও যে নিশানা করবে সেটাও স্বাভাবিকই ছিল। একদিকে নবীনকে 'প্রবীণ' বলে খোঁচা দিয়ে অবসরের 'পরামর্শ', অন্যদিকে পান্ডিয়ানের তামিল পরিচয় তুলে কটাক্ষ। এবার প্রচারে এসে জগন্নাথ মন্দিরের রহস্যময় রত্নভাণ্ডারকে ইস্যু করে তুলেছেন মোদি। ২০১৮ সাল থেকে রত্নভাণ্ডারের একটি চাবি পাওয়া যাচ্ছে না। সেপ্রসঙ্গ তুলে মোদির খোঁচা, ''জগন্নাথের শ্রীরত্ন ভাণ্ডার নিয়ে গোটা ওড়িশা রেগে রয়েছে। লোকেরা বলছে, রত্নভাণ্ডারের চাবি তামিলনাড়ুতে চলে গিয়েছে।'' সরাসরি নাম না করলেও মোদি কাকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছেন সকলেই বুঝেছেন।
[আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি ভবনে নয়, এবার কর্তব্য পথে শপথের পরিকল্পনা মোদির! আগেভাগে চূড়ান্ত দিনক্ষণও]
এমন খোঁচায় কেবল পান্ডিয়ানই নয়, নবীন পট্টনায়েকও ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, এটা তামিলনাড়ু ও তামিলদের অপমান। কিন্তু বিজেপি তাদের প্রচার চালিয়ে গিয়েছে। অমিত শাহকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি নবীন পট্টনায়েককে কোনও বার্তা দিতে চান কিনা। শাহর সরস জবাব ছিল, ''সেটা ওঁর কাছে পৌঁছবে না। আমি তো তামিল বলতে পারি না।'' এখানেও সরাসরি নাম না নিয়ে সেই পান্ডিয়ান ইস্যুকেই হাতিয়ার করার প্রবণতা।
কিন্তু কী ভাবছে ওড়িশার মানুষ? এই ইস্যুতে স্পষ্টতই দ্বিধাবিভক্ত ওড়িয়া জনগণ। অনেকের মতে, যাঁরা এখানকার ভূমিপুত্র তাঁদের পক্ষে এখানকার জল-হাওয়া-মাটিকে বোঝা বেশি করে সম্ভব। তাই তেমন মানুষের প্রতিই তাঁদের সমর্থন থাকবে। আবার অনেকে বলছেন, বাইরের রাজ্য থেকে ওড়িশায় এসে অনেকেই তো চাকরি করছেন। পান্ডিয়ানের ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠবে কেন। স্কুলের বৃত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ওড়িশা সরকারের পদক্ষেপকে অনেকেই মনে করেন পান্ডিয়ানেরই পদক্ষেপ। এই ধরনের কাজের 'সুফল' যাঁরা পেয়েছেন, পাচ্ছেন তাঁদের কাছে পান্ডিয়ান ওড়িয়া না তামিল (Tamil), এটা কোনও ফ্যাক্টর নয়। কাজেই শেষপর্যন্ত বিজেপির (BJP) কটাক্ষের কোনও প্রভাব ভোটে পড়ল কিনা সেটা বুঝতে আপাতত কয়েক দিন অপেক্ষা করতেই হবে।