শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: ছাত্রীকে বিয়ের দাবিতে চাপ। সালিশি সভাও বসানো হয়। জোর করে আয়োজন করে ফেলে দেয় বিয়েরও। তবে অপমান সহ্য করতে পারেননি শিক্ষক (Teacher)। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। রেললাইনের পাশ থেকেই উদ্ধার হল ওই শিক্ষকের দেহ। পরিবারের দাবি, লজ্জায়, অপমানে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারির দাবিতে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে দফায় দফায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা।
উত্তর দিনাজপুরের (North Dinajpur) ইসলামপুরের গাইসলের ধনতলায় একটি কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন বছর তেইশের মুজ্জাকির ইসলাম। অভিযোগ, সপ্তাহখানেক আগে ওই কোচিং সেন্টারে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী ওই শিক্ষকের ঘাড়ে হাত দেওয়া অবস্থায় ভিডিও রেকর্ডিং করে। তারপর ওই ছাত্রীকে বিয়ে করার জন্য শিক্ষকের উপর চাপ তৈরি করা হয়। কিন্তু বিয়েতে রাজি হননি শিক্ষক। তার জেরে ধনতলার কোচিং সেন্টারে ভাঙচুর করে কম্পিউটারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শিক্ষক। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার গাইসল পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী তৃণমূলের মহম্মদ সাব্বির আহমেদের উদ্যোগে সালিশি সভা বসে। উপস্থিতি ছিলেন ওই পঞ্চায়েতের সদস্য মহম্মদ কাইজার আলম-সহ জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি ফারহাত বানুর স্বামী তথা তৃণমূল নেতা জাভেদ আখতার এবং পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য জাফরুল ইসলাম।
[আরও পড়ুন: টিকাকরণের আগেই রাজ্যের কোভিড গ্রাফে স্বস্তি, একধাক্কায় অনেকটা কমল দৈনিক সংক্রমণ]
সালিশি সভায় ওই শিক্ষককে বিয়ে করার নিদান দেওয়া হয়। রবিবার ওই ছাত্রীর বিয়ের আয়োজনও করা হয়। তবে বিয়ে করতে যাননি শিক্ষক। বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গাইসোল রেললাইন থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতের মামা হাসালুন হকের অভিযোগ, “জোর করে প্রধান ও তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য ভাগ্নেকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ভিডিও ভাইরাল করে বিয়ে করতে চাপ দেয়। সেটা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।” মৃতের বাবা দবিরুল ইসলামপুরের অভিযোগ,”আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছিল। সেটা সহ্য করতে না পেরে অপমানিত হয়ে রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা (Suicide) করেছে। দোষীদের শাস্তি চাই।” এই ঘটনার প্রতিবাদে ইসলামপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। পুলিশ সুপার শচীন মক্কার বলেন, “দেহ নিয়ে পথ অবরোধ কিছুক্ষণ চলছিল। তবে মৃতের পরিবার তরফে অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”