অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: এক ভিডিওই কাল হল। লগ্ন পেরিয়ে গেলেও এল না বর। ছাদনাতলায় মালা গলায় একাই বসে থাকলেন কনে। কারণ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ হইচইয়ের পর জানা গেল, হবু বউয়ের আপত্তিকর এক ভিডিও পাত্রের মোবাইলে গিয়েছে, যা দেখে নাকি বেঁকে বসেছেন তিনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিয়ে থেকে সরে আসার। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় তোলপাড় হাওড়ার (Howrah) উনসানি দক্ষিণপাড়া।
হাওড়ার শেখ আবদুর রজ্জাকের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল এলাকারই হোমায়রা ইয়াসিনের। মঙ্গলবার ছিল বিয়ে। পাত্রীর বাড়িতে তখন প্রস্তুতি তুঙ্গে। জমজমাট বিয়ের আসরে বাজছে সানাই। চেয়ার টেবিল সাজানো হচ্ছে। বাহারি খাবারের গন্ধে চারিদিক ম ম। এমনই আনন্দের মুহূর্তে বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মতো এসে আছড়ে পড়ে চরম দুঃসংবাদ, জানা যায় পাত্রপক্ষ বিয়ে বাতিল করেছে। কারণ, হবু স্ত্রীর আপত্তিকর এক ভিডিও পেয়েছেন শেখ আবদুর। পরিণাম যা হওয়ার তাই। হুলস্থুল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ক্ষুব্ধ কনের বাড়ির লোকেরা অভিযোগ জানায় সাঁতরাগাছি থানায়।
[আরও পড়ুন: উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়ে ছেলেরা ‘মৃত’! বিশ্বাসই হচ্ছে না পুরুলিয়ার ২ শ্রমিক পরিবারের]
মেয়ের দাদা শেখ নুরুল হাসান বলেন, “ছেলেটির মোবাইলে যে ভিডিওটি গিয়েছে সেটি আমার বোনের নয়। সম্পূর্ণ এডিট করা একটি ফেক ভিডিও। এটা বিয়ে না করার একটি বাহানা।” এদিকে বিয়ের জোগাড়ে বিপুল খরচ হয়ে গিয়েছে হোমায়রার পরিবারের। চার লক্ষ টাকাও তাঁরা ফেরত চেয়েছে পাত্রপক্ষের কাছ থেকে। আচমকা পাত্রের এমন সিদ্ধান্তে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে মেয়ের বাবা আবদুল হালিম লস্করের। তিনি বলেছেন, “একটা ভিডিওর কথা তুলে হঠাৎ আমাদের জানানো হয় তারা এই বিয়ে করবে না। আমরা অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু তাঁরা বিয়েতে নারাজ। এটা ঠিক নয়।”
এখানেই শেষ নয়, অভিযোগ মেয়ের বাড়ির থেকে পাত্রপক্ষকে জোরাজুরি করলে ছেলের বাড়ি থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, “এ বিয়ে হলে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বিপদে পড়তে পারে মেয়ে।” মেয়ের বাবার প্রশ্ন, নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎকে কীভাবে অন্ধকারে ঠেলে দেব? প্রশ্ন উঠছে ওই ভিডিও আসল কি নকল যাচাই না করেই কেন এক বাক্যে বিয়ে করতে বেঁকে বসল ছেলে? মনোবিদ সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “প্রেম অথবা বিয়ে ভেঙে ফেলা এখন অত্যন্ত সামান্য বিষয়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দৌলতে সম্পর্ক এখন অত্যন্ত ভঙ্গুর।” সাঁতরাগাছি থানা সূত্রের খবর, এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। যে নম্বর থেকে ভিডিওটি এসেছে তার পরিচয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।