নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: একুশের ভোটে তৃণমূলের অভাবনীয় সাফল্যের অন্যতম কাণ্ডারী তিনি। এবার জাতীয় স্তরেও দলের বড় দায়িত্ব তাঁর হাতে অর্পণ করেছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee)। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এখন দলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এই মুহূর্তে তিনি দিল্লিতে, সংসদের বাদল অধিবেশনে যোগ দিতে। বৃহস্পতিবার সেখানে দু’ দফায় দলের সাংসদদের নিয়ে জরুরি বৈঠক সেরেছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে এদিন সংসদের ভিতরে, বাইরে একাধিক ইস্যুতে আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়িয়েছে তৃণমূল। সূত্রের খবর, একুশের বিধানসভা ভোটে এই অভাবনীয় সাফল্যের পর কেন্দ্রবিরোধী সুর আরও চড়ানোর বার্তা দিতে এবারের অধিবেশন চলাকালীন অভিষেক দিল্লিতে (Delhi) সাংবাদিক বৈঠক করবেন, জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলির মুখোমুখি হবেন। এটাই রাজধানীর বুকে অভিষেকের প্রথম সাংবাদিক বৈঠক হতে চলেছে। দু’বার সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর আগে কখনও তিনি দিল্লিতে এ ধরনের সম্মেলন করেননি। ফলে জাতীয় রাজনীতিতে আরও এগিয়ে যেতেই যে অভিষেকের এই পদক্ষেপ, তা খানিক স্পষ্ট।
সংসদের বাদল অধিবেশনে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তৃণমূলের হাতে একাধিক ইস্যু। নয়া মাত্রা যোগ করেছে পেগাসাস (Pegasus) বিতর্ক। মঙ্গলবার সংসদের বাইরে পোস্টার হাতে এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর পর বুধ ও বৃহস্পতিবার সংসদের অভ্যন্তরে চাপ বাড়িয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা। এদিন তো রাজ্যসভাতেও (Rajya Sabha) ফোনে আড়ি পাতা প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে চাপে ফেলেছেন সাংসদ শান্তনু সেন (Shantanu Sen)। কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর (Ashwini Vaishnaw) হাত থেকে বক্তৃতার কাগজ ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলতে দেখা গেল তাঁকে। পরে তিনি সেটি ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহের আসনের দিকে ছুঁড়ে দেন। এভাবেই ধীরে ধীরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নিজেদের অস্ত্রে আরও শান দিচ্ছেন তৃণমূল সাংসদরা। আর তার নেপথ্যে অবশ্যই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লিতে হাজিরা এবং তাঁর ‘ভোকাল টনিক’।
[আরও পড়ুন: Pegasus বিতর্কে ধুন্ধুমার সংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তৃতার কাগজ ছিঁড়লেন তৃণমূল সাংসদ]
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হওয়ার পর এটাই অভিষেক বন্দ্যপাধ্যায়ের প্রথম দিল্লি সফর। রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে TMC যখন সর্বভারতীয় স্তরে আরও প্রবলভাবে নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে চাইছে, তখন দিল্লি সফরে অভিষেক কী ভূমিকা নেন, সেদিকে নজর ছিলই রাজনৈতিক মহলের। এদিন সকাল থেকে দলের অন্য সাংসদদের সঙ্গে সংসদেই ছিলেন অভিষেক। সরকার বিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন তিনি। সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ ভবনে তৃণমূলের কার্যালয়ে তিনি একটি বৈঠক করেন। এরপর আবার অধিবেশন সাময়িক মুলতুবি হতেই সোজা অভিষেক-সহ TMC সাংসদরা চলে যান রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের দিল্লির বাড়িতে। সেখানে মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন করেছিলেন আরেক রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। সেখানেও প্রশান্ত কিশোরদের নিয়ে জরুরি আলোচনা সারেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। জোড়া বৈঠকেই তিনি স্থির করে দিয়েছেন সংসদে দলের রণকৌশল। এবার তাঁর নিজের সাংবাদিক বৈঠকে ঠিক কী বার্তা দেন, সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।