অর্ণব আইচ: বর্ষবরণের রাতে বন্ধু তথা সহকর্মীদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় এসে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন তরতাজা তরুণী। পানাহারের শেষে রেস্তরাঁর সামনে বন্ধুদের সামনে কথা বলতে বলতেই অসুস্থতা। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে হঠাৎই মৃত্যু হয় তরুণীর। মৃত্যুর প্রায় দু’মাস পর তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে তাঁদের মেয়েকে। হত্যার অভিযোগের আঙুল মেয়ের বন্ধু তথা জনা দশেক সহকর্মীর বিরুদ্ধে। এই ব্যাপারে দক্ষিণ কলকাতার কসবা থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তরুণীর দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। কেউ শ্বাসরোধ করে বা গলা টিপে খুন করেছে, এমন কোনও চিহ্নও মেলেনি। কিন্তু মৃত্যুর আগে যে তরুণীর শ্বাসকষ্ট হয়েছিল, সেই তথ্য পুলিশ পেয়েছে।
পুলিশের ধারণা, এই মৃত্যুর ‘ভিলেন’ চিংড়ি। অ্যালার্জি থাকা সত্ত্বেও বুঝতে না পেরে চিংড়ি খেয়ে ফেলেছিলেন তরুণী। এর পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যদিও অভিযোগকারী ওই তরুণীর বাবা ও পরিবারের লোকেরা এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তদন্ত করে পুলিশের সামনে এসেছে দু’টি ওষুধের দোকানের নাম, যে দোকানের কর্মীরা চাওয়া সত্ত্বেও ওই তরুণীদের বন্ধুদের ওষুধ দেননি। কী কারণে ওষুধ দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত। যদিও মৃত্যুর আসল কারণ গলা টিপে হত্যা, না কি চিংড়ি, সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করানো হচ্ছে তরুণীর দেহের। এ ছাড়াও হবে ভিসেরা পরীক্ষা।
[আরও পড়ুন: মাধ্যমিকে প্রশ্নফাঁস রুখতে কোন কোন জেলায় বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট? দেখে নিন তালিকা]
পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণীর নাম মৌমিতা দাশগুপ্ত। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরে। কলকাতার একটি নামী বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন তিনি। গত ডিসেম্বর মাসের শেষেই ওই তরুণী ও তাঁর জনা দশ সহকর্মী মিলে বর্ষবরণের সন্ধ্যাটি পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। পানাহার করার জন্য তাঁরা কসবা কানেক্টরের উপর নামী শপিং মলের অদূরেই একটি রেস্তরাঁ ও পানশালায় যান। পরে পুলিশ ভিতরের সিসিটিভি পরীক্ষা করে ভিতরের সিসিটিভিতে তাঁদের একসঙ্গে পানাহার করতে দেখে। বাইরে বেরিয়ে ওই তরুণী তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে যে হাঁটাহাঁটি করছিলেন, সেই ফুটেজও ধরা পড়ে। হঠাৎই ফুটপাথের উপর অসুস্থ হয়ে বসে পড়েন তিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তরুণীর কয়েকজন বন্ধু পুলিশকে জানান, তরুণী অসুস্থ অবস্থায় বলতে থাকেন, পানাহারের সময় তিনি চিংড়ি খেয়ে ফেলেন। চিংড়িতে তাঁর অ্যালার্জি রয়েছে। তাই তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বলে বন্ধুদের জানিয়ে দু’টি ওষুধ এখনই তাঁদের কিনে আনতে বলেন। বন্ধুরা জানিয়েছেন, তাঁরা পরপর দু’টি ওষুধের দোকানে যান। কিন্তু দোকানের কর্মীরা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াও ওই ওষুধ দিতে রাজি হননি। ক্রমে অসুস্থতা বাড়তে থাকায় একটি ট্যাক্সি করে তাঁকে বাইপাসের উপর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা যুবতীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশের সূত্র জনিয়েছে, খবর পেয়ে রাত এগারোটা নাগাদ হাসপাতালে যান তরুণীর পরিবারের লোকেরা। তাঁরা কয়েকজন বন্ধুর নাম জানতে পারেন। পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, তরতাজা মেয়েটি সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হল। রাতে পাওয়া গেল তার দেহ। শ্বাসরোধ করে তাঁদের মেয়েকে খুন করা হয়েছে। সম্প্রতি খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর পুলিশের এক আধিকারিক জানান, প্রাথমিকভাবে ময়নাতদন্তে কেউ শ্বাসরোধ করে খুন করেছে, এমন তথ্য মেলেনি। যদিও শ্বাসকষ্ট যে তাঁর হয়েছিল, তা জানা গিয়েছে। ফুটপাথে তাঁর মৃত্যু হয়নি। সেই ক্ষেত্রে যদি ‘খুন’ অথবা অসুস্থতায় মৃত্যু হয়, তবে গাড়ির মধ্যে হয়েছে। তাই গাড়ি ও তার চালককেও পরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, অ্যালার্জি থাকা সত্ত্বেও কেউ চিংড়ি বা কাঁকড়া খেলে তাঁর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করে এই ব্যাপারে পুলিশ চিকিৎসকদের চূড়ান্ত মতামত নিচ্ছে। ময়নাতদন্তে তরুণীর পেটে যে তরল বস্তু মিলেছে, সেটিও পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।