আজ থেকে বারো বছর আগের বিশ্বকাপে এই আমেদাবাদে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নকআউট যুদ্ধে নেমেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। এবারের মতো ফাইনালে নয়, কোয়ার্টার ফাইনালে। আর সেই ম্যাচে যুবরাজ সিংয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে ভারতকে জিতিয়েছিলেন যিনি, তাঁকে আজও ভোলেনি দেশ। তিনি সুরেশ রায়না। যাঁর সেই বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ২৮ বলে ৩৪ নটআউট এখনও বিস্মৃত হয়নি। সেই বিশ্বজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য সুরেশ রায়না শুক্রবার ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর পাঠানো প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন নিচে তুলে দেওয়া হল। অবশ্যই রোববারের ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল নিয়ে।
’১১-র বিশ্বকাপে এই আমেদাবাদে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা
আমার মতে, ২০১১ সালের অস্ট্রেলিয়া টিম হিসেবে প্রবল শক্তিশালী ছিল। সেই সময় ওরা চার বারের বিশ্বজয়ী টিম। লিগ পর্বের পর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যখন বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে নামলাম আমরা, জয় ছাড়া আর কিছু মাথায় ছিল না। যুবি ভাই (যুবরাজ সিং) আর গোতি (গৌতম গম্ভীর) দারুণ খেলেছিল। মাঝের ওভারে রান করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল।
[আরও পড়ুন: ‘২০১১-র থেকেও এই টিম অনেক বেশি নিখুঁত খেলছে’, বন্ধুদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডায় বললেন ধোনি]
ধোনি আউট হয়ে যাওয়ার পর আমার কাজ ছিল রান করে টিমকে জেতানো। ভাজ্জু পাজি (হরভজন সিং) তখন বসেছিল ড্রেসিংরুমে, আমার পাশে। আমাকে ভাজ্জু পাজি বলেছিল, জিতিয়ে ফিরতে। আমি জানতাম, চাপ কীভাবে সামলাতে হয়! আগ্রাসী টিমের বিরুদ্ধে আপনাকে সব সময় আগ্রাসী ক্রিকেটই খেলতে হয়। আর আমি ঠিক করি যে, সে ভাবেই খেলব। দেখুন, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট ব্র্যান্ডই হল স্লেজিং! জানপ্রাণ দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে লড়েছিল ওরা। কিন্তু আমি জানতাম, চাপ নিলে সমস্যায় পড়ে যাব। তাই চাইছিলাম বিপক্ষ শিবিরে চাপটাকে ফেরত পাঠাতে। ঠিক করেছিলাম, কোনও ভাবে উইকেট দিয়ে আসব না।
ডেভিড হাসি একটা থ্রো করেছিল মনে আছে? যা ধরতে গিয়ে অস্ট্রেলীয় ফিল্ডাররা আমার সামনে চলে আসে। আমি তখন রান নিতে ছুটছিলাম। ধাক্কা লেগে যাওয়ায়, আমাকে স্লেজ করা শুরু করে ওরা। আমি ঠিক করি, পালটা মারব। পরের ওভারেই শন টেট বল করতে এলে পর পর শট খেলা শুরু করে দিয়েছিলাম। আসলে আমি আর যুবি পা (যুবরাজ) জানতাম, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়তে হলে আগ্রাসনই দেখাতে হবে।
[আরও পড়ুন: ODI World Cup 2023: ‘পয়মন্ত’ নন, তবু সেই আম্পায়ারই ফাইনালে! খুশি নন ভারতীয় ফ্যানরা]
সেই অস্ট্রেলিয়া আর এই অস্ট্রেলিয়া
২০১১ সালের অস্ট্রেলিয়া টিমে তারকার ছড়াছড়ি ছিল। রিকি পন্টিং, শেন ওয়াটসন, ব্রেট লি, মিচেল জনসন, শন টেট, মাইকেল ক্লার্ক, হাসি–কে ছিল না? যেমন ওদের পেসার ছিল, তেমনই স্পিনার। মনে আছে, টেট-জনসনরা ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটার গতিতে বল করছিল! মোতেরার পুরনো মাঠে ওই আক্রমণ সামলানো সহজ ছিল না।
মনে আছে, ইনিংসের ২৭ থেকে ৩৩ ওভারের মধ্যে বল অন্য রকম আচরণ করছিল। প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়াও অকুতোভয় ক্রিকেট খেলতে সিদ্ধহস্ত। ট্রাভিস হেড, ডেভিড ওয়ার্নার ফর্মে রয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় ট্রাম্পকার্ড হল স্টিভ স্মিথ। ও পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে পারফর্ম করতে তৈরি থাকে। সঙ্গে ম্যাক্সওয়েল-লাবুশেনরা তো আছেই। আসলে অস্ট্রেলিয়া টিমটাই আলাদা। ওরা জানে কখন আক্রমণ করতে হবে, আর কখন ডিফেন্স।
অস্ট্রেলিয়া বোলিংও অসম্ভব ভাল। স্টার্ক-হ্যাজেলউড-কামিন্স সম্মিলিত ওদের পেস ব্যাটারি দারুণ। স্পিনার হিসেবে অ্যাডাম জাম্পাও অসাধারণ। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের শুরুর দিকে তেমন ছন্দে ছিল না। কিন্তু পরে খেলায় উন্নতি করে ফাইনালে পৌঁছেছে, যে ভাবে শেষ কয়েকটা ম্যাচ টানা জিতেছে, তার পর ওদের নিয়ে সতর্ক না হয়ে উপায় নেই। বিশেষ করে স্মিথ-জাম্পাকে নিয়ে। জানি না, ভারত কী টিম ফাইনালে নামাবে। হয়তো ফাইনালে একই টিম রাখবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার স্পিন-দুর্বলতার কথা ভেবে অশ্বিনকেও রাখা যেতে পারে। ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকা স্পিনারদের সামনে অস্ট্রেলিয়ার কী হাল হয়েছে, নিশ্চয়ই খেয়াল করেছে রোহিতরা। তাই অশ্বিনকে খেলানো হবে কি না, সিদ্ধান্তটা দ্রুত নিতে হবে।
শামিই কি রবিবাসরীয় ফাইনালের সম্ভাব্য এক্স ফ্যাক্টর
আমি শ্রেয়স আইয়ারের কথা আগে বলব। সোজা ব্যাটে খেলছে শ্রেয়স। ইতিমধ্যে দুটো সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে। স্বপ্নের ব্যাটিং করছে ও। বিরাট-রোহিতের সঙ্গে শ্রেয়সও টানছে ভারতীয় টিমকে। তবে শামির কথাও একই সঙ্গে বলব। শামি যে লেংথে বল করছে, যে আগ্রাসন দেখাচ্ছে, তা তুলনাহীন। প্রথম বল থেকেই স্টাম্পে করছে শামি। প্লাস, ওর যেমন বল সুইং করাতে পারে, তেমনই স্কিড করাতে পারে। আর একটা জিনিস দেখছি।
বিপক্ষ দলের ব্যাটার বাঁ হাতি হলে প্রথম থেকে রাউন্ড দ্য উইকেট আসছে শামি। অধিনায়কের সঙ্গে দুর্দান্ত বোঝাপড়া আছে বলেই এমন বোলিং করতে পারছে শামি। সেমিফাইনালে শামি নিউজিল্যান্ডের চার জনকে রাউন্ড দ্য উইকেট এসে আউট করেছে। বিশেষ করে ল্যাথামকে যে ডেলিভারিটায় আউট করল, অসাধারণ।
আগ্রাসী রোহিত, শান্ত বিরাট
অকুতোভয় ব্যাটিং করছে রোহিত। ভারতীয় দলের ‘টেম্পো’ একাই সেট করে দিচ্ছে ওপেন করতে নেমে। ওর ২৫ বলে ৪০, ৪০ বলে ৭০ রানের ইনিংসগুলোই কিন্তু ভারতীয় ইনিংসের ভিত গড়ে দিচ্ছে। দেখুন, প্রথম আট-দশ ওভারে আশি-নব্বই রান উঠে গেলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। বিরাটও অসাধারণ। বড় ম্যাচের প্লেয়ার ও। মঞ্চ যখনই বড় হয়, বিরাট পারফর্ম করে। মনে রাখবেন, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে পছন্দ করে বিরাট।