shono
Advertisement

Breaking News

সনিকা-কাণ্ডের জেরেই কি পিছোল বিক্রমের সিনেমার মুক্তি?

আইনি জটিলতায় কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁর সিরিয়ালও?
Posted: 12:18 PM May 12, 2017Updated: 06:48 AM May 12, 2017

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের আসন্ন সিনেমা ‘খোঁজ’-এর মুক্তি এক সপ্তাহ স্থগিত রাখা হল। লেক মলের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মডেল সনিকা সিং চৌহান। সে গাড়ির চালক ছিলেন অভিনেতা বিক্রম। স্বভাবতই তা দুর্ঘটনা নাকি বিক্রমের গাফিলতিতে মৃত্যু হল সনিকার, এ প্রশ্ন উঠতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে সিনেমার পরিচালক অর্ক গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আপাতত সিনেমার মুক্তি এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ২৬ মে ওই সিনেমার মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। সিনেমাটি মুক্তি পাবে ২ জুন ।

Advertisement

পরিচালকের যুক্তি, দু্র্ঘটনাজনিত ট্রমা কাটিয়ে বিক্রম যাতে সিনেমার স্পেশ্যাল স্ক্রিনিংয়ে উপস্থিত থাকতে পারেন, তাই এই সিদ্ধান্ত। তবে টলিপাড়ার অনেকেই মনে করছেন, বিক্রম চট্টোপাধ্যায় গাড়ি দুর্ঘটনা মামলায় জড়িয়ে পড়ার জেরেই এই সিদ্ধান্ত। নানা আইনি জটিলতায় ক্রমশই আটকে পড়ছেন বিক্রম। টলিপাড়ায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, ওই একই কারণে নাকি বিক্রমের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ইচ্ছেনদী’-ও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যদিও যে চ্যানেলে ওই ধারাবাহিকটি সম্প্রচারিত হয়, তার এক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে তিনি জানিয়েছেন, “আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।” সিরিয়ালটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার যে খবর অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, “যে সংবাদমাধ্যম ওই খবর প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে কেউই অন্তত আমার সঙ্গে কথা বলেনি।”

[সনিকা-কাণ্ডে নয়া তথ্য, সিটবেল্ট বাঁধা না থাকায় খোলেনি এয়ারব্যাগ]

গাড়ি দুর্ঘটনায় মডেল সনিকার মৃত্যুর তদন্তে পুলিশ এখনও পর্যন্ত ২০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে৷ বৃহস্পতিবার সনিকার চার বন্ধু আলিপুর আদালতে গিয়ে গোপন জবানবন্দি দেন৷ তাঁরা হলেন অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পৃথা গুহ, নাজিয়া পারভিন ও সিরিন আসফাক৷ দুর্ঘটনার রাতে বিক্রম সনিকার সঙ্গে যে পার্টিতে গিয়েছিলেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁরা৷ ওই চার বান্ধবীকে আগেই পুলিশ জেরা করে জেনেছিল, দু’টি নৈশক্লাবে বিক্রম মদ্যপান করেছিলেন৷ যার পরিমাণ অতিরিক্ত ছিল বলেও দাবি করেছিলেন তাঁরা৷ সেটা নিয়ে নৈশক্লাবে প্রশ্নও তোলেন বিক্রমের সঙ্গীরা৷ সনিকার বান্ধবীদের দাবি অনুযায়ী, অতিরিক্ত মদ্যপানের জেরেই এই দুর্ঘটনা৷ যদিও বিক্রম পরে স্বীকার করেন মদ্যপান করার কথা৷ বিক্রম এও বলেন, মদ্যপান করে কখনওই বেসমাল হয়ে পড়েননি তিনি৷ তাই বান্ধবীদের গোপন জবানবন্দির ভিত্তিতে পুরো বিষয়টি যাচাই করা হবে৷ বিক্রমের রক্তের নমুনার পরীক্ষার রিপোর্ট এলেও এই বিষয়ে তদন্তে কিছুটা আলোকপাত করতে পারে মত তদন্তকারীদের৷ তার ভিত্তিতে পরে বিক্রমের বিরুদ্ধে আরও কড়া ধারা লাগু করা যেতে পারে কি না, তা নিয়েও পুলিশকর্তারা আলোচনা করছেন৷

পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটার বেগে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি ফুটপাথে উঠে দোকান ও বেদিতে ধাক্কা মারে৷ যার ফলে মৃত্যু হয় বিক্রমের সহযাত্রী তথা বান্ধবী মডেল সনিকা সিং চৌহানের৷ বিক্রম নিজেও আহত হন৷ পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গাড়ির বেপরোয়া গতির বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণও মিলেছে৷ অথচ জেরার মুখে টালিগঞ্জ থানার পুলিশকে বিক্রম জানান, দুর্ঘটনার সময় তাঁর গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে৷ দুর্ঘটনার পর গাড়ির ‘ক্র্যাশ ডাটা রিট্রিভার’ বা সিডিআর উদ্ধার করেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা৷ দুর্ঘটনার ২.৬ সেকেন্ড আগে পর্যন্ত গাড়ির বিভিন্ন ‘ডেটা’ রেকর্ড করেছে সিডিআর৷ মিলেছে দুর্ঘটনা সম্পর্কে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্যও৷

কী রকম?

বিশেষজ্ঞরা জেনেছেন, দুর্ঘটনার ৬ সেকেন্ড আগে বিক্রমের গাড়িটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটার৷ সেই কারণে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারান৷ ওই গতিতেই গাড়িটি রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা মারে৷ দুর্ঘটনার ৬ সেকেন্ড আগে ব্রেক চেপেও পা তুলে নিয়েছিলেন চালক বিক্রম৷ তার পরই গাড়িটি দোকানে ধাক্কা দিয়ে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত অভিমুখে (অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ) ঘুরে যায়৷ গাড়ির পিছনের অংশ ধাক্কা মারে বেদিতে৷ বেপরোয়া গতিতে ধাক্কা মারার পরও কেন এয়ারব্যাগ খুলল না, দুর্ঘটনার সময় সিটবেল্ট লাগানো ছিল কি না কিংবা গাড়িতে যান্ত্রিক কোনও ত্রুটি ছিল কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার সকালে টালিগঞ্জ থানার সামনে তৃতীয়বারের জন্য গাড়িটি পরীক্ষা করেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা৷ পুলিশের বার্তা পেয়ে এদিন একই সময়ে বেঙ্গালুরু থেকে আসেন গাড়িটির নির্মাতা সংস্থার তিন বিশেষজ্ঞও৷ তাঁরা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করেন৷ কিছু অংশ বেঙ্গালুরুতে পরীক্ষার জন্য নিয়েও যান৷ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও তদন্তকারীদের সঙ্গে তাঁরা আলোচনাও করেন৷

[গাড়ি চালিয়ে সনিকাকে নিয়ে রাজডাঙায় কেন গিয়েছিলেন বিক্রম?]

লালবাজারে গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ জানান, ফরেনসিকের চূড়ান্ত রিপোর্ট ও বিক্রমের মেডিক্যাল রিপোর্টের জন্য পুলিশ অপেক্ষা করছে৷ গতকালই বিকেলে বিক্রম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে সেলাই কাটান৷ দুর্ঘটনার পর এই হাসপাতালেই বিক্রম ট্যাক্সি করে সনিকাকে নিয়ে যান৷ পরে এখানেই বিক্রম ভর্তি হন৷ এদিনই পুলিশের একটি টিম গিয়ে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ পুলিশ তাঁদের কাছে জানতে চায়, দুর্ঘটনার পর বিক্রম ও সনিকার কী অবস্থা ছিল? শরীরে কোথায় কোথায় চোট ছিল৷ কী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল তাঁদের? পুলিশ চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে, বিক্রম ও সনিকা ভোর চারটের মধ্যেই হাসপাতালে যান৷ সনিকার কান ও মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল৷ তাঁকে এমারজেন্সি থেকে নিয়ে গিয়ে বিশেষ বিভাগে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়৷

যদিও ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই মৃত্যু হয় সনিকার৷ বিক্রমের মাথাতেও চোট ছিল৷ তাঁর মাথায় পাঁচটি সেলাই করতে হয়৷ কিন্তু ঘটনার অনেকক্ষণ পর বিক্রম হাসপাতালে ভর্তি হন৷ একটি সূত্রে পুলিশ জেনেছে, বিক্রম হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন৷ যদিও পুলিশের কাছে বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি জানিয়েছেন, সারাক্ষণ হাসপাতালেই ছিলেন৷ বান্ধবীর চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন৷ যার জেরে তিনি ভর্তি হতে পারেননি৷ বিক্রমের হাসপাতালের উপস্থিতি নিয়ে ধন্দ কাটাতে পুলিশ সিসিটিভির সাহায্য নিতে পারে বলেও জানা গিয়েছে৷ এখনও অবধি সনিকার একটি মোবাইলের সন্ধান মেলেনি৷ বিক্রম সেটি কার হাতে দিয়েছিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷

এর পাশাপাশি, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে হওয়া বিক্রমের গাড়ির বিরুদ্ধে হওয়া সাতটি মামলা পুলিশ খতিয়ে দেখছে৷ দুর্ঘটনার কয়েকদিন আগেও একটি মলের বেসমেন্টে এক মহিলাকে বিক্রম ধাক্কা দেন৷ তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থাও তিনি করেন৷ বেপরোয়া গতি ও ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের একাধিক মামলা রয়েছে গাড়িটির বিরুদ্ধে৷ অন্যদিকে, সনিকার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তদন্তকারীরা৷ কারণ, সনিকার পরিবারের পক্ষ থেকেও বিক্রমের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পর পরবর্তী কোনও পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷

[মদ্যপান করেছিলেন বিক্রম, জেরায় স্বীকার অভিনেতা অনিন্দ্যর]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement