ব্রেক-আপ হলেই কি মারমুখী হতে হবে? প্রাক্তন প্রেমিক জয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভে উত্তেজিত সায়ন্তিকা! সামনে শম্পালী মৌলিক।
লাস্ট উইকএন্ড। বিশ্বকাপের নক আউটের বাজার। কিন্তু ফুটবল ছাড়াও চাঞ্চল্য ছড়াল শহরে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরে প্রকাশ্য রাস্তায় ঝামেলা। কারণ, কুশীলব টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিনেতা জয় মুখোপাধ্যায়। গাড়ি থামিয়ে অভিনেত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে জয় গ্রেপ্তার হন। পরে জামিনে ছাড়াও পান। কিন্তু কী এমন ঘটল যে, একদা কাপল বলে পরিচিত সায়ন্তিকা-জয়ের সম্পর্ক এমন তলানিতে ঠেকল? ঘটনার পর সায়ন্তিকা ধরা দিলেন মোবাইলে। গাড়ি করে জিমে যাওয়ার পথে উগরে দিলেন মনের ক্ষোভ।
“কোনও দিন এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে আমার নাম জড়িয়েছে শুনেছেন? প্রভাত রায়ের মতো পরিচালকের ছবি দিয়ে আমি ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি। চিরকাল একটা ডিগনিটি মেনটেন করে এসেছি। একান্ত নিরুপায় হয়ে আমাকে মুখ খুলতে হল। অভিযোগ জানাতে হল।” বলছেন সায়ন্তিকা।
[রাজীব গান্ধীকে অপমানের অভিযোগ, কাঠগড়ায় ওয়েব সিরিজ ‘সেক্রেড গেমস’]
আপনি কি এখনও ট্রমাটাইজড?
ট্রমাটাইজড থাকলে তো চলবে না। যখন সমস্যা হয়েছে এ বারে কিছু করার নেই। ইউ হ্যাভ টু মুভ অন। আমি তো কাজ না করে বসে থাকতে পারব না। আমাকে সমস্যাটার সঙ্গে মানিয়ে নিতেই হবে। অকারণে বসে থেকে লাভ নেই।
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই ঘটনার পর?
এ রকম অভিজ্ঞতা তো আগে হয়নি। বন্ধ গাড়ির দরজা খুলে ফেলছে! ম্যানেজারের উপর চড়াও হচ্ছে! তাও এই অভিজ্ঞতা কার কাছ থেকে হল? যার সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছিল। এটাই সবচেয়ে শকিং। আমরা সকলেই শিক্ষিত-সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে এসেছি। যতটুকু সম্মান অর্জন করেছি ইন্ডাস্ট্রিতে কঠোর পরিশ্রম দিয়েই। কাজেই পাবলিকলি আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কারণ আমরা উদাহরণ তৈরি করি, লোকে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
জয় কেন আক্রমণাত্মক হলেন মনে হয়?
এই ধরনের অভব্যতা তো আমি করিনি, তাই জানি না জয়ের মাথায় কী খেলেছিল। কী থেকে এটা করল! সাধারণত আমরা পাবলিকলি এ রকম কেউ করব না। যত ঝামেলা অশান্তিই হোক না কেন। আমি খুব পজিটিভ মানুষ, কোনও দিন এটা করতে পারব না। কিছু বলার নেই। ইটস ভেরি স্যাড, হার্টিং অ্যান্ড আনফরচুনেট ইন্সিডেন্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে যে কনসিকোয়েন্সটা হল, সেটা কিন্তু আমি চাইনি। আমার পরিবারও চায়নি। বাধ্য হলাম পুলিশে অভিযোগ করতে।
এর আগেও তো ঝামেলা হয়েছিল?
হ্যাঁ, এর আগেও এক-দু’বার ঘটেছে, কিন্তু পাবলিকলি ঘটেনি। আমার বাড়িতে, মানে ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাটে ঘটেছে। কিন্তু ওই সময় ইগনোর করেছিলাম। কারণ, চাইনি পাবলিকলি কাদা ছোড়াছুড়ি হোক। না আমার উপর, না জয়ের উপর। আমাদের সল্টলেকের বাড়িতেও একবার আমার অনুপস্থিতিতে আমার মায়ের সঙ্গে ঝামেলা করেছিল।
একটা সময় তো কোনও সমস্যা ছিল না!
কারণ আমরা সম্পর্কের মধ্যে ছিলাম। আজ যে কোনও কারণেই হোক আমরা একসঙ্গে নেই, সেটার জন্য প্রকাশ্যে এ সব করতে হবে কেন! এর আগেও সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার নামে পোস্ট করা হচ্ছিল। আমার কানে এল। ভাল করে দেখিনি কিন্তু জানতাম। আজকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাঁচজন হয়তো আমাকে পছন্দ করে, আবার আরও পাঁচজনও থাকতে পারে যারা আমাকে পছন্দ করে না। ওই ভাবেই হ্যান্ডেল করছিলাম। চুপ থেকে। কারণ জানি কাদা ছেটাছেটি শুরু হলে থামে না, বরং বাড়ে। তার চেয়ে নীরবতা অনেক বেশি কথা বলে। ডিগনিটি মেনটেন করে চুপ থাকতে চেয়েছিলাম। চাইনি জয়ের সম্মানটাও নষ্ট হোক। পার্সোনালি যা-ই হয়ে থাক না কেন, কখনও চাইব না সোশ্যালি বা কাজের ক্ষেত্রে কারও সম্মান নষ্ট হোক। আজকে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক না থাকলেও চাইব না। কিন্তু যদি কমপেল করা হয় বারবার, যখন সেফটি ইস্যু চলে আসে, আমি বাধ্য হয়েছি স্টেপ নিতে।
জয়ের সঙ্গে আপনার প্রায় আট বছরের সম্পর্ক না? গন্ডগোলটা কোথায় হল?
হ্যাঁ, আট বছরের। কয়েক মাস আগে ব্রেক-আপ হয়েছে। কিন্তু এমন কিছু তো ঘটেনি যে মারমুখী হতে হবে। আরও দশজনের তো ব্রেক আপ হয়। কী গন্ডগোল হয়েছে সেটা অ্যাবসোলিউটলি পার্সোনাল, সেটা আমি প্রাইভেট-ই রাখতে চাই। যখন আমি সম্পর্কটায় ছিলাম, ওপেনলি বলেছি। কিন্তু প্রবলেমগুলো প্রকাশ্যে বলতে যাইনি। হ্যাঁ, প্রবলেম হয়েছিল তাই আজ একসঙ্গে নেই, এটা এবার অ্যাকসেপ্ট করতে হবে। আমরা সকলেই ম্যাচিওরড। আজ একসঙ্গে নেই কিন্তু কখনওই তার ক্ষতি চাইব না। বা সেও আমার ক্ষতি করুক চাইব না। দিস ইজ মাই পয়েন্ট অফ ভিউ। সে এবং তার পরিবার ভাল থাকুক। আমরা তো এক সময় বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম! প্রথম দিন থেকেই। এমনকী বিচ্ছেদের আগের দিন পর্যন্ত। মোর দ্যান প্রেমিক-প্রেমিকা আমরা বেশি বন্ধু ছিলাম। সেইখান থেকেও আমি খুব আহত। আসলে কী জানেন যে খুব প্রিয়, তার থেকেই খুব দুঃখ পেতে হয়।
আট বছর ধরে একটা মানুষকে কাছ থেকে দেখার পর তাঁকেই রাস্তায় এমন অচেনা মেজাজে দেখলেন। এতে পুরুষ সম্বন্ধে আপনার ধারণা কি বদলে গেল?
জেন্ডার ওয়াইজ পুরুষ সম্বন্ধে কোনও ধারণা বদলেছে এমন বলতে পারি না। আমি এমন মনে করি না। নারী হলেও তাই বলতাম। একটা মানুষ হিসেবে কারও অ্যাটিটিউড পালটে যদি এতটা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়, দ্যাটস ডিজহার্টেনিং।
এর পর কী?
আমি মনে করি পাস্ট ইজ পাস্ট, প্রেজেন্টটা ভাবতে হবে। আমি বা আমার পরিবার চেষ্টা করছি মিউচুয়ালি মিটিয়ে নিতে। আমরা খুব শান্তিপ্রিয়। একটা আট বছরের সম্পর্ক অনেক গভীর। তার অনেক ডিটেল থাকবে। আমাদের ব্রেক আপটা মিডিয়াও পরে জেনেছে। চাইও না মিডিয়ায় এ সব নিয়ে চর্চা হোক। কিন্তু বাই ডিফল্ট আমরা পাবলিক ফিগার।
আরও একটা বিষয় শোনা যাচ্ছে, আপনারা নাকি একসঙ্গে একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, যেটায় আপনাদের দু’জনের ফিফটি-ফিফটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। সেখানে আপনি নাকি দেননি?
দেখুন, একটা কথা বলব। অনেকে অনেক কথা বলবে। কিন্তু কথা বললে তার প্রমাণও দিতে হয়। আমি কোথায় আমার টাকা ইনভেস্ট করেছি বা ফিফটি-ফিফটি বা সিক্সটি-ফর্টি, কতটা দেওয়ার কথা ছিল, সে সব আমি মিডিয়ার কাছে ডিসকাস করব না। এটাই বলব, একটা আট বছরের কাপলের প্ল্যান ছিল সেটল করার। আমার ফ্যামিলিও জানত। উই ইউজড টু লিভ টুগেদার। দেন উই হ্যাড টু গেট ম্যারেড। তখন সেই সম্পর্কে একসঙ্গে অনেক ইনভেস্টমেন্ট আমরা করেছি। বা একসঙ্গে করার প্ল্যানিং করেছি। সেখানে টাকা-পয়সার লেনদেনও থাকবে ডেফিনিটলি। কিন্তু সম্পর্কটা যখন থাকছে না, সেগুলোয় দাঁড়ি টানতে হয়। সেই লেনদেনগুলো অলমোস্ট কমপ্লিট। মিউচুয়ালি এই কথাগুলো আগেই আমাদের হয়ে আছে।
ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার বন্ধুরা কী বলছে?
সকলে একটা বিষয় নিয়েই বদার্ড, যেন সেফ থাকি। আমি ঠিক আছি কি না, সবাই জানতে চেয়েছে। প্রকাশ্যে এই ঘটনা ঘটেছে বলে আমি খুব আপসেট। আমি এটা চাইনি। জয়ের বিরুদ্ধেও নেগেটিভ কথা হোক পাবলিকলি চাইনি। এগুলো পার্সোনালি মেটাতে হয়।
আপানাদের গার্ল গ্যাং মানে মিমি, নুসরত, তনুশ্রী – ওঁরা কী বললেন?
মিমি আমাকে টেক্সট করেছিল, আমি ঠিক আছি কিনা। ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার যারা ওয়েল উইশার আছে, সকলে আমাকে ফোন করেছে।
নুসরত বা তনুশ্রীর সঙ্গে কথা হয়নি?
না।
বুঝলাম। সায়ন্তিকার তো পুরুষ অনুরাগী কম নয়…
এমা! আমি লজ্জা পাচ্ছি।
তারা একটা সময় পর্যন্ত জানত আপনি এনগেজড। তারপর জানল আপনি সিঙ্গল। তখন থেকে আপনার কাছে মেসেজ-টেসেজ আসেনি।
না, না আসেনি (হাসি)। যে ভালবাসাটা ফ্যানদের থেকে পেয়েছি, সবাই বলেছে যেন সব ঠিক হয়ে যায়। আমি যেন ঠিক থাকি।
কেউ কাঁধটা বাড়িয়ে দেয়নি এই সময়? প্রেম নিবেদন?
না, গো (হাসি)। সবাই জানে আমার ফ্রেম অফ মাইন্ডটা এখন কেমন। মানুষ এই সময় প্রবলেমেটিক জোনে থাকে। বাট ইউ হ্যাভ টু মুভ অন। যেটা আগেও বললাম। না কেউ তেমন মেসেজ করেনি (হাসি)।
লাস্ট কোয়েশ্চন। হু আর ইউ সিইং নাউ?
নোবডি। আই অ্যাম সিইং মাই ওয়ার্ক নাউ।
[কেমন করে অশীতিপর ব্যোমকেশ হলেন আবির, ফাঁস রহস্য]
The post ব্রেক-আপ হলেই কি মারমুখী হতে হবে? প্রশ্ন ক্ষুব্ধ সায়ন্তিকার appeared first on Sangbad Pratidin.