সময়ের আগে ভাবতে পারেন তিনি। তাই তো লিখতে পারেন 'জানে ভি দো ইয়ারো'র চিত্রনাট্য। তৈরি করতে পারেন 'ইস রাত কি সুভা নেহি', হাজারও খোয়াইশে অ্যায়সি'র মতো সিনেমা । পরিচালক সুধীর মিশ্র। তাঁর পরিচালনাতেই শ্রীলেখা মিত্রর (Sreelakha Mitra) নতুন কাজ। এবার হিন্দি ওয়েব সিরিজে অভিনেত্রীকে। সিরিজ নিয়ে এখনই কিছু বলা বারণ। তবে সুধীর মিশ্র ও তাঁর টিমের সঙ্গে কাজ করে মুগ্ধ অভিনেত্রী। স্বরূপা ঘোষ, আদিত্য ভট্টাচার্যর মতো মানুষদের সঙ্গে দিব্যি বন্ধুত্ব হয়ে গেল তাঁর। সেই সমস্ত কথা জানালেন সুপর্ণা মজুমদারকে।
এর আগে বিজয় নাম্বিয়ারের পরিচালনায় কাজ করেছেন। এবার সুধীর মিশ্রর মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা।
দারুণ অভিজ্ঞতা। হ্যাঁ, বিজয় নাম্বিয়ারের সঙ্গেও তো কাজ করলাম। এমন চরিত্র যা বড় না হলেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থপূর্ণ। কলকাতায় কী করেছি না করেছি তার কোনও ব্যাগেজ নেই। আবার নতুন করে শুরু করছি। আমার তো কোনও পিআর, ম্যানেজার বা তেমনভাবে বলার লোক নেই। তবে এঁদের সঙ্গে কাজ করলে বোঝা যায় যে আমাদের এখানকার মানুষ কেমন কূপমণ্ডুক। কুয়োর ব্যাং এবং ওইটুকুতেই তাঁদের লাফানো-ঝাঁপানো। এমন মানুষদের সঙ্গে কাজ করলে এক্সপোজার পাওয়া যায়। একটা কথা মনে পড়ে গেল, প্রথম দিন যখন আমি সুধীর মিশ্রকে বললাম, 'আপনাকে কী বলে ডাকব? সুধীরদা, সুধীরজি না সুধীর স্যার?' উনি বললেন, 'যা খুশি বলে ডাক। সুধীর বলে ডাক।' এই ধরনের মানুষ উনি।
নিজস্ব চিত্র
পরিচালক হিসেবে সেটে কেমন?
কীভাবে শুরু করি বলো তো। উনি কেমন পরিচালক আমি কে বলার? ওনার সম্পর্কে যদি বলতে হয় কোথা থেকে শুরু করি বলো তো? আমি প্রথমে নিজেকে চিমটি কেটে ভাবছিলাম এটা সত্যি কি না। এদের ছবি দেখেছি, ভালোবেসেছি। ছবির একটা অন্যরকম ধরন এরা এনেছে। সেই আট-নয়ের দশকের সময়ে একদম অন্য ধারার ছবি করত। যে ছবিতে সে বিশ্বাস করত। সেই ছবি সময়ের আগে ছিল। সমকালীন রাজনীতি, আরও কত কী বিষয় থাকত। আর এই বয়সেও কী এনার্জি! ছিপছিপে গড়ন, লম্বা...উচ্চতা ছফুট হয়তো হবে। একটু ক্ষ্যাপাটে। একজন প্রকৃত শিল্পী যেমন হয় সেরকমই। রসিক মানুষ। সেটে মজাও করতেন। সত্যি! এত উঁচু দরের একজন পরিচালক।
স্বরূপা ঘোষের (Swaroopa Ghosh) সঙ্গে তোমার ছবি দেখলাম। 'We met...we clicked' বিষয়টা হল কীভাবে?
এমনিই ক্লিক হয়ে গেল। টাচ উড! এই জন্যই লিখেছি, 'We met...we clicked'। লখনউ, কানপুরে শুটিং হয়েছে। হোটেল থেকে লোকেশনে যেতে হবে। নিচে গিয়ে দেখলাম উনিও ওয়েট করছেন। ফোনে কথা বলছিলেন। আমি নিচে যাওয়ার পর যখন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। আমি বললাম, 'হাই আমি শ্রীলেখা।' ব্যস! এর কিছুক্ষণ পর শুনলাম কলটাইমটা পিছিয়েছে। তখন ঘরে না গিয়ে বললাম, 'চলো আড্ডা মারি।' উৎসাহী হয়ে বললেন, 'চল, চল!' তার পর তো আড্ডা ভোররাত তিনটে পর্যন্ত হতো। রাত দুটো, আড়াইটেতে প্যাক আপ হতো। তার পর চলতে আড্ডা সেশন। আদিত্যদার সঙ্গেও।
নিজস্ব চিত্র
[আরও পড়ুন: মৃত্যুবার্ষিকীর মাসে সুশান্তর স্মৃতিতে কাতর অঙ্কিতা, লিখলেন নিজেদের ‘পবিত্র রিশতা’র গল্প]
আদিত্যদা?
আদিত্য ভট্টাচার্য (Aditya Bhattacharya)। বিমল রায়ের কন্যা রিঙ্কি ও জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক বাসু ভট্টাচার্যর ছেলে। অনীকদার (অনীক দত্ত) কাজিন। আদিত্য নিজেও তো জাতীয় পুরস্কারজয়ী 'রাখ' সিনেমা পরিচালনা করেছেন। সেই ছবিতে আবার আমির খান রয়েছে।
আমির খানের কথায় তোমার সেই পুরনো বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ল।
হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার মেয়ে একবার বলেছিল। 'মা তুমি কী করে এত বোকা হলে যে আমির খানের সঙ্গে অক্টোবরে বিজ্ঞাপন করে নভেম্বরে বাবাকে বিয়ে করে ফেললে?' আমি বলেছিলাম, 'বাবু আমি তোর বাবাকে ভালোবেসেছিলাম।' আর আমি তো অ্যাম্বিশিয়াস, কেরিয়ার ওরিয়েন্টেড কোনওদিনই ছিলাম না। আজও নই। তাই হিসেব করে কিছু করিনি। ভালোবেসেছি, বিয়ে করেছি। আর ওরা মানুষের কদর বোঝে। এইটা বোঝে যে কে কী, তুমি কোন লবির? তুমি কেন এই? এরা এরকম নয়। প্রতিভা বোঝে। আমাকে তো এখানে সবাই খুব ভালোবেসেছে। মানে একেবারে স্পটবয় থেকে আমার মেকআপের শিল্পা, সন্তোষ। সবাই ভালো। আমি তো এবার ভোট দিতে পারলাম না। তাও আদিত্য ফোন করে প্রোডাকশনের সঙ্গে কথা বলে কত চেষ্টা করল। জানতে চাইত 'ঘুম ঠিক হয়েছে?', 'খেতে যাবি তো?' স্বরূপাদির কথা আর কী বলব। আমাকে অডিশন দিতে হবে বলে হিন্দি ঠিক করিয়ে রাড তিনটের সময় একহাতে স্ক্রিপ্ট আরেক হাতে ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিউ দিয়ে গেল।
নিজস্ব চিত্র
আর...
নাসিরউদ্দিন শাহর ছেলে ভিভিয়ান ছিল। নাসির সাহেবের ভাইজি আবার সায়রা হালিম। ওর হয়ে আমি প্রচারে গিয়েছিলাম শুনে উচ্ছ্বসিত হয়েছিল। একদিন প্রচণ্ড গরম ছিল, হ্যান্ডফ্যান দিয়ে হাওয়া খাচ্ছিলাম। হঠাৎ রজত কাপুর এসে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে লাগলেন। এভাবেই কেটে গেল কটা দিন। প্যাকআপের পর সুধীর স্যারকে বললাম, 'আমি না প্রণাম-টনাম করি না। কিন্তু আপনাকে একটা প্রণাম করব।' তার পর তো সে এক কাণ্ড! সেটে আমি প্রণাম করতে দৌঁড়াচ্ছি, আর উনি প্রণাম এড়াতে দৌড়চ্ছেন। (হাসি) দুজনে গোলকার বৃত্তে দৌড়ে বেড়াচ্ছিলাম। তার পর বলেন, 'এই দ্যাখো আমাদের স্টার অফ বেঙ্গল'। আমি বললাম, 'স্টার নই, আমি অভিনেত্রী।' উনি বললেন, 'ভাগ্যিস! যদি স্টার হতে তোমার সঙ্গে কাজ তো করতে পারতাম না।' বহু বছর বাদে কাজ শেষ করে চোখে জল চলে এল। এটা কেরিয়ারের প্রথম দিকে হোতো। একটা অন্য ভালোলাগা নিয়ে ফিরছি (রবিবারই অভিনেত্রীর ফেরার কথা)। কাজ দেখে কদরটা দিতে জানে। সুধীর মিশ্রও আবার পেট লাভার। তাই মৃণাল সেন থেকে বাম রাজনীতি, প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা, সবই ক্লিক করে গিয়েছে।
নিজস্ব চিত্র