শুভময় মণ্ডল: কবিগুরু লিখেছিলেন, ‘প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে, কে কোথা ধরা পড়ে কে জানে…’। এ শুধু কবিতা নয়, বর্তমান সময়ে বাস্তবও বটে। তবে এখন প্রেমের নয়, শরীরী ফাঁদের নয়া ‘আতঙ্ক’ ছড়িয়েছে শহর জুড়ে। কিছু পয়সার বিনিময়ে যৌনতার এই অমোঘ টানে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। ম্যাসাজ পার্লারের নামে বিজ্ঞাপনী চমকে অবাধ যৌনতার হাতছানি আর সেই ফাঁদে পড়ছেন শহরের একাধিক যুবক, প্রৌঢ়। নিঃস্ব হয়ে লোকলজ্জার ভয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হচ্ছেন না প্রতারিতরা। কিন্তু প্রতারণার ঘটনা ধামাচাপা থাকছে কই? পুলিশের কাছে খবর পৌঁছলেও প্রমাণের অভাবে প্রতারকদের জালে তোলা যাচ্ছে না। কেমন ধরনের প্রতারণা? কায়দা জানলে চোখ কপালে উঠে যাবে আপনারও।
তিলোত্তমার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা। আর শহরের সেই ব্যস্ততম এলাকার ইতিউতি চোখে পড়বে একটা জিনিস। ছোট লিফলেটের আকারে কাগজ সাটানো দেওয়ালে। সুন্দরী যুবতী বা অভিনেত্রীদের ছবি দিয়ে লেখা, ৫০০ টাকায় বডি ম্যাসাজ আর ১০০০ টাকায় ফুল রিল্যাক্সসেশন। তার নিচে দেওয়া একটি বা দুটি ফোন নম্বর। অবশ্যই মোবাইল ফোনের। ম্যাসাজ পার্লারের এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়েই রোজ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন শহরের একাধিক মানুষ। নম্বরগুলিতে ফোন করলেই কোনও পুরুষ বা মহিলা কন্ঠ দিচ্ছে পার্লারের হদিশ। বলা হচ্ছে, ১৫০০ টাকায় দুটি মহিলার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হবে। আর তাতেই কাজ হাসিল হয়ে যাচ্ছে। ১৫০০ টাকার বিনিময়ে দুটি মহিলার সঙ্গে যৌনতার টানে ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকেই। তারপরই ম্যাসাজ পার্লারের ঠিকানা জানতে চাইলে বলা হচ্ছে, গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন বা লিবার্টি সিনেমা হলের কাছে আসতে হবে। সেখানে এসে বিজ্ঞাপনে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হবে।
এইভাবেই ফাঁদে ফেলা হচ্ছে বহু মানুষকে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কথামতো গিরিশ পার্কে পৌঁছলেই বাইক সওয়ার দুই যুবক আসবে নিতে। একা থাকলেই বিপদ। দুই বা ততোধিক কাস্টমার দেখলেই আর কাছে ঘেঁষবে না তারা। বাইকে চাপিয়েই ঘুরপথে সোনাগাছি নিষিদ্ধ পল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কোনও নির্জন জায়গায় বাইক থেকে নামিয়ে প্রথমেই শুরু হবে বেদম মার। তারপর সঙ্গে টাকা-পয়সা, মোবাইল, দামী জিনিস যা আছে সবই কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। প্রতিরোধ করার চেষ্টা বৃথা। উলটে জুটবে আরও মার। তাই কথা মেনে নেওয়া উপায় নেই। তারপর পুলিশের ভয় দেখিয়ে ওই বাইক আরোহীরা না কি চম্পট দেয় সেখান থেকে। লোকলজ্জার ভয়ে প্রতারিতরা পুলিশের কাছে যেতেও ভয় পান। যৌনতার আনন্দ নিতে এসে শেষে এমন দুরাবস্থা হবে তা ভাবতেও পারেন না অনেকে। কিন্তু এমনটাই হচ্ছে শহরে।
এমন প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায় কী? দালালদের এই নয়া ছকে চিন্তায় পড়েছেন সোনাগাছির যৌনকর্মীরা। ভয়ে নাকি এই তল্লাটে আসছে না গ্রাহকরা। ব্যবসায় ক্ষতি দেখে তাঁরাও পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এমনকী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দূর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির কানেও গিয়েছে এমন প্রতারণাচক্রর কথা। তারাও যৌনকর্মীদের কথা ভেবে দ্বারস্থ পুলিশ ও স্থানীয় কাউন্সিলরের। কিন্তু প্রতারণার অভিযোগ দায়ের না হলে পুলিশ কী করবে? স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। কিন্তু তাতেও এই প্রতারণাচক্রর উপর লাগাম টানা যাচ্ছে না। স্থানীয় কাউন্সিলর সুনন্দা সরকার জানিয়েছেন, প্রশাসনের তরফ থেকে সচেতনা অভিযান করার কথা ভাবা হচ্ছে। মানুষ যাতে বিজ্ঞাপন দেখে ফাঁদে পা না দেন তার জন্য খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। কিন্তু এজিনিস নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত দুষ্কর মানছেন তিনিও।
অন্যদিকে, ভুক্তভোগীরাও বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করতে চাইছেন না। সম্মান রক্ষার তাগিদে হৃত জিনিস নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে চাইছেন না। তাতে আরও ইন্ধন পাচ্ছে এমন প্রতারণা চক্র। শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ম্যাসাজ পার্লার আগেই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল প্রশাসনের। এবার ম্যাসাজ পার্লারের নামে নয়া এই প্রতারণা চক্র উদ্বেগ বাড়িয়েছে শহরবাসীর। রোজই কেউ না কেউ এই ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। প্রতারিত হওয়ার আগে এই প্রতিবেদন পড়ুন। আমরা সজাগ করতে পারি মাত্র। উপদেশ মানা সম্পূর্ণ সবার ব্যক্তিগত।
ছবি- অভিষেক রক্ষিত
The post ১৫০০ টাকায় দুই মহিলার সঙ্গে যৌনতার হাতছানি, শরীরী ফাঁদের নয়া চক্র শহরে appeared first on Sangbad Pratidin.