সন্দীপ্তা ভঞ্জ: 'অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচ', সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে হইচইতে। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, দুলাল লাহিড়ি-সহ একাধিক দক্ষ অভিনেতার সমাহার সিরিজে। কেমন হল?
চোখে যা দেখা যায় সেটাই কি একমাত্র সত্যি? নাকি সাদা-কালোর মাঝে একটা ধূসর আস্তরণ থাকে? একটা খুন। পনেরো জন প্রত্যক্ষদর্শী। সেই অভিযুক্তর পাশে অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচ। শৈশব থেকেই আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগা কোর্ট চত্বরের মামুলি এক আইনজীবী। মুহুরি বাবার কাছে সে অপদার্থ, কুলাঙ্গার। সেই অচিন্ত্য বুকের পাটা দেখিয়ে অগ্নিপরীক্ষা দেওয়ার মনোস্থির করে এমন এক কেস নিয়ে বসল, যার প্রতিপক্ষ আইনজীবীর নামে কাঁপে গোটা শহর। আর কাদের বাড়ির বিরুদ্ধে সেই মামলা, যাঁদের বাস কিনা ক্ষমতার অলিন্দে। সীতারাম গাঙ্গুলির ছয় নম্বর সহকারী পরিচালক তার ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে প্রতিপক্ষ মামলা লড়তে যায়। থ্রিলার সিরিজের শুরুয়াৎ এভাবেই।
বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রহস্য-রোমাঞ্চের কোনও অভাব নেই। গোয়েন্দা গল্পের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। থ্রিলার ঘরানার সিরিজ 'অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচ'। গল্পের প্রথমেই একটি খুন ঘটে যায়। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সেই অঘটনকে কেন্দ্র করেই গোটা সিরিজটি আবর্তিত। প্লট একাধিক। অনেকগুলো সুঁতোকে একসূত্রে বাঁধার চেষ্টা করেছেন পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। ঢিমে আঁচে জ্বাল দেওয়া রান্না যেমন হয়, 'অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচ'-এর চিত্রনাট্যও সেরকম। অতি চেনা গল্প। টলিউডে না হোক, অন্তত বলিউডের ফ্রেমে এধরনের গল্প অতি পরিচিত। দেখতে দেখতে অন্তত ছকভাঙা বলতে সিরিজে সেরকম কিছু চোখে পড়ল না ঠিকই, তবে হেরে গিয়েও 'বাজিগর' হওয়ার বার্তা দেয় 'অচিন্ত্য আইচ'।
মোট সাতটি পর্বের সিরিজ। শেষের দুটি বাদ দিলে প্রতিটাই নাতিদীর্ঘ। চিত্রনাট্যের বাঁধন আরেকটু জমাট বাঁধলে মন্দ হত না। ক্রাইসিস মোমেন্টের ট্রিটমেন্ট আরও ভালো হতে পারত। তবে এই গোটা সিরিজে জেলের দৃশ্যগুলো বড্ড চোখে লাগে! নতুন কয়েদিকে অত্যাচারের ঘটনা অন্যভাবেও দেখানো যেত। বহু বাস্তব ঘটনা রয়েছে। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য জেলের দৃশ্যগুলির মধ্যে সবথেকে যে বিষয়টি অত্যন্ত নিম্নমেধার পরিচয়, সেটা হল জেলের কয়েদির হাতে পেন। স্পেশাল কয়েদি হলে আলাদা বিষয়। কিন্তু একত্রে এক সেলে বন্দিদের মাঝে কলম! ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অভিজ্ঞ পরিচালকের তরফে তথা যুক্তি-বুদ্ধির মারপ্যাঁচের সিরিজে এহেন দৃশ্য আশানুরূপ নয় মোটেই।
[আরও পড়ুন: বৈশাখের দহনজ্বালায় মিষ্টি প্রেমের সুবাস আনল মিমি-আবিরের ‘আলাপ’, পড়ুন রিভিউ]
ঢিমে তালে চলা সিরিজের গতি বাড়ে পাঁচ নম্বর পর্ব থেকে। আইনজীবী অচিন্ত্য কখন যে গোয়েন্দা অচিন্ত্য হয়ে যাবে এই সিরিজে ধরতে পারবেন না! কোর্টরুমে দুই আইনজীবীর 'ফেস অফ' বেশ ভালো। এই সিরিজের প্লাসপয়েন্ট ঋত্বিক, শাশ্বত, সুরঙ্গনা থেকে দুলাল লাহিড়ী, সকলের অভিনয়। জাঁদরেল আইনজীবী শাশ্বত এবং ভীতু থেকে আত্মবিশ্বাসী উকিলের উত্তরণে ঋত্বিকের পারফরম্যান্স দারুণ। এই দুজনের অভিনয় নিয়ে অবশ্য আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। মধ্যবিত্ত সংসারের শান্ত, সহজ-সরল মেয়ের বিত্তশালী শ্বশুরবাড়ির পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝে চলার অভিনয় বেশ দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়। অচিন্ত্য আইচের সহকারীর ভূমিকায় দেবরাজ ভট্টাচার্যের অভিনয় এবং সংলাপ দুটোই এই সিরিজে রিলিফ দেয়।