নির্মল ধর: পরিচালক রাজর্ষি দে’র সুনাম রয়েছে টালিগঞ্জে, তিনি তারকাখচিত ছবি করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন বেশি। ‘বীরপুরুষ’, ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’ আর সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি ‘মায়া’ (Mayaa)। রাজর্ষির চিত্রনাট্যের মূল উৎস শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’ নাটক। মাত্র এক বছর আগেই অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য তাঁরই নির্দেশনায় পরিচালনার কাজে হাতেখড়ি দিয়েছিলেন ওই একই নাটককে আশ্রয় করে। দক্ষিণ বাংলার মাছ চাষীদের গ্রামকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছিল চিত্রনাট্য। আর এবার রাজর্ষি গল্প সাজিয়েছেন হিন্দিভাষী দরবার সিং আর তার স্ত্রী মায়াকে নিয়ে।
নতুন এই ছবির অন্তত আশিভাগ সংলাপ হিন্দিতে, ফলে আরও একটি ছবির কথা মনে পড়ছে, ‘মকবুল’। যার পরিচালক ছিলেন বিশাল ভরদ্বাজ। শেক্সপিয়ারের রচনা এমনই বহুমাত্রিক যে তাঁর অধিকাংশ নাটককে যে কোনও ভাষায় যে কোনও লোকালে ফেলে দেওয়া যায়। যেটা করা যায় না তা হল ‘ম্যাকবেথ’কে মূল রচয়িতার সুর মেজাজ, চরিত্রগুলোর আন্তরসম্পকের জটিলতাগুলোকে বাংলায় ও বাঙালির জীবনের সঙ্গে জুড়ে দিতে। সম্ভবত সেই অস্বস্তি থেকেই রাজর্ষি প্রায় সব চরিত্র অবাঙ্গালি করেছেন, আবার বাঙালি দর্শকের কথা ভেবে পরিবেশ ও পটভূমিতে রেখেছেন এই কলকাতা শহর ও শহরতলীকে।
[আরও পড়ুন: জেহাদে শহিদ হলে সত্যিই কি জন্নতে জুটবে একঝাঁক সুন্দরী? প্রশ্ন তুলল ‘৭২ হুরে’, পড়ুন রিভিউ]
ছবিতে ম্যাকবেথের নাম হয়েছে দরবার সিং (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়), যে নিজের বউ লেডি ম্যাকবেথ অর্থাৎ ‘মায়া’কে ছাড়াও তিনজন রক্ষিতা রেখেছে। পারমিতা(কনিনিকা), তনুশ্রী (মৃণালিনী) এবং সামিয়া (রিচা), সবাইকে দরবার জোগাড় করেছে তাঁর নিজের প্রোডাকশন হাউসে নায়িকা করার লোভ দেখিয়ে। এরপরও নিজের ছেলে ময়ঙ্কের (রাহুল) স্ত্রী রেশমির (সুদীপ্তা) দিকে নজর দেয়। ফলে বাবা ও ছেলের মধ্যে বিস্তর বিরোধ। আসলে এমন মানুষ ও তাঁর সংসারের কাঠামোর সঙ্গে বাঙালি দর্শক কতটা রিলেট করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় থাকছে। রাজর্ষির পরিচালনার কাজটিও গল্পের মতোই দুরুহ ও জটিল।
তবে স্বীকার করতেই হবে, ঘটনার ঘনঘটা ও নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরির মুন্সিয়ানায় রাজর্ষি দর্শককে বসিয়ে রাখেন পাক্কা দু’ঘন্টা পঞ্চান্ন মিনিট। বাংলা ছবির নিরিখে যা অতিরিক্ত। রনজয় ভট্টাচার্যের আবহ অনেক সময়েই কানে লাগে। তবে দু’টি গানের ব্যবহার এবং সুর পরিবেশনানুগ। তবুও একটা কথা বলছি, নীরবতাও অনেক সময় ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করতে পারে। হিচককের কিছু ছবিই তার প্রমাণ।
[আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্রের লাশ’, পঞ্চায়েত ভোট হিংসা নিয়ে গর্জে উঠলেন ঋদ্ধি, পালটা শুনতে হল ‘বুদ্ধিজীবী’ খোঁটা]
তারকাখচিত ছবি, আর রাজর্ষি একাধিক তারকা নিয়ে কাজ করতে পটু, সেটা জানাই আছে। এই ছবিতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। লর্ড ও লেডির চরিত্রে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এবং রফিয়াত রাশিদ মিথিলা খুবই ভাল। মিথিলার পোশাক ও সাজসজ্জা শেক্সপিরিয় সময়কে
মনে করায়। অভিনেতা কমলেশ্বরকে পার্শ্ব চরিত্রে আমরা দেখেছি, এখানে তিনি প্রধান পুরুষ চরিত্রে। তাঁর অভিনয় যথেষ্ট ব্যালান্সড। তিনি ভিলেন হয়ে ওঠেননি। অন্য পুরুষ চরিত্রের মধ্যে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন দু’জন – রাহুল ও গৌরব। দু’জনেই ভাল ও সাবলীল। মহিলা ব্রিগেডের মধ্যে নাম চরিত্রে রফিয়াতকে দিয়ে ‘নাটকীয়’ কায়দায় অভিনয় করিয়েছেন রাজর্ষি। পরিচালকের আজ্ঞা তিনি অনুগত শিল্পীর মতো অনুসরণ করেছেন। তনুশ্রী, সুদীপ্তা, কনীনিকা, সায়ন্তনীরা নিজ নিজ ভূমিকা পালন করেছেন।
ছবি – মায়া
অভিনয়ে – কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, রাফিয়াত রাশিদ মিথিলা, তনুশ্রী চক্রবর্তী, গৌরব চক্রবর্তী, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায়, ইশান মজুমদার, সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা, দেবলীনা কুমার।
পরিচালনা – রাজর্ষি দে