কৃষ্ণকুমার দাস: বিপিএল-এর সঙ্গে আধার কার্ড জুড়ে দেওয়ায় এবার চরম বিপাকে কলকাতা-সহ রাজ্যের পুর এলাকার গরিব বাসিন্দারা৷ কারণ, বাড়িতে সাইকেল, টিভি বা বিদ্যুত্ সংযোগ থাকা এবং ছেলে-মেয়েরা কোন স্কুলে পড়ছে সেই বিষয়টিও শহরের বিপিএল তালিকা তৈরির শর্ত হিসাবে দেখা হবে৷ কেন্দ্রের নয়া ফরমান কার্যকর হলে কলকাতা ও শহরতলির মাত্র ২ শতাংশের মতো মানুষ সংশোধিত বিপিএল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন৷ বিপিএল তালিকা সংশোধনের এই নয়া ফতোয়ায় চরম ক্ষুব্ধ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে আপত্তি জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন৷ বিপিএল তালিকা সংশোধনের নামে আধার কার্ড জুড়ে কার্যত ‘গরিবদের তালিকা সংক্ষিপ্ত’ করার কেন্দ্রীয় কৌশলের এ খবর মঙ্গলবার বিধানসভা ভবনে জানান রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ তবে শুধু মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েই থামেননি, আগামী ২৮ জুন বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের আপত্তি জানাতে দিল্লি যাচ্ছেন সুব্রত৷ সেখানে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী বীরেন্দ্র সিং-এর বৈঠকে আধার কার্ড তুলে নিয়ে গরিবদের বঞ্চনা করার নয়া ফতোয়া প্রত্যাহারের দাবি জানাবেন তিনি৷ কেন্দ্রীয় সরকার ‘আচ্ছে দিন’ দেখানোর লক্ষ্যে বিপিএল তালিকা সংশোধনের নামে নানা আজগুবি শর্ত জুড়ে দিয়ে দেশের গরিব মানুষের সংখ্যা কমাতেই এমন ফরমান দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী৷
২০০২ সালে সমীক্ষার ভিত্তিতে গোটা দেশে বিপিএল তালিকা তৈরি হয়৷ পরিবারের মাসিক রোজগার, শিক্ষা, শৌচালয়-সহ সাতটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে তালিকা হয়েছিল৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সেই তালিকা তৈরিতে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছিল বলে সেই সময় অভিযোগ করে তৃণমূল৷ পরে তৃণমূলের তরফে একাধিকবার বিপিএল তালিকা সংশোধনের দাবি করা হয়েছিল৷ বছর আড়াই আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটি সমীক্ষা হয়৷ কিন্তু সেই সমীক্ষাও অসম্পূর্ণ বলে অভিযোগ৷ যদিও পশ্চিমবঙ্গে ডিডিটাল রেশন কার্ড তৈরি করতে গিয়ে বিপিএল বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে এসপিএইচএইচ নামে গরিবদের জন্য বিশেষ তালিকা তৈরি করেছে খাদ্যদফতর৷ দিন কয়েক আগে একবার কেন্দ্রীয় সরকার নারেগা প্রকল্পে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক বলে নির্দেশ দেয়৷ সঙ্গে সঙ্গে তীব্র আপত্তি জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ কার্যত মমতার চাপে পড়ে পরদিনই কলকাতায় এসে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন সচিব জানিয়ে দেন আপাতত নারেগায় আধার কার্ড বাধ্যতামূলক নয়৷
কিন্তু শহর ও শহরতলির গরিবদের জন্য নতুন করে কেন্দ্রের তরফে বিপদবার্তা এসেছে বিপিএল তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে আধার কার্ড জুড়ে দেওয়ায়৷ সেক্ষেত্রে বাড়িতে টিভি থেকে শুরু করে সাইকেল, বিদ্যুত্ সংযোগ থাকাও একটি শর্ত হিসাবে কাজ করছে৷ আসলে বিপিএল কার্ড না থাকলে কেরোসিন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গ্রামীন স্বাস্থ্য যোজনার কোনও সুবিধাই পাওয়া যাবে না৷ বস্তুত এই কারণেই কেন্দ্রের আপত্তি তুলেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ মন্ত্রী সুব্রতবাবু বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে গরিবদের সংখ্যা কমিয়ে মোট জনসংখ্যার ২৭-২৮ শতাংশ করতে৷ কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন বিপিএল তালিকায় রাজ্যের ৪২-৪৩ শতাংশ মানুষকে রাখতে৷” মুখ্যমন্ত্রীর এই সদিচ্ছার পিছনে যুক্তি হল, বাম আমলে গ্রামীণ ও শহর উভয় এলাকায় উন্নয়নে রাজ্য যেমন পিছিয়ে গিয়েছে তেমনি মানুষের গড় আয়ও বৃদ্ধি পায়নি৷ কিন্তু গত পাঁচ বছরে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের শর্ত হিসাবে ৯৭ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুত্ চলে গিয়েছে৷ সেক্ষেত্রে বিদ্যুত্ থাকলে যদি বিপিএল তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় তবে চরম অনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার৷ বস্তুত এই কারণেই গ্রাম ও শহরের প্রকৃত গরিব মানুষের তালিকা করতে আধারকার্ড জুড়ে দেওয়া কেন্দ্রীয় প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে রাজ্য সরকার৷
The post বিপিএল-এ জুড়ছে আধার কার্ড, বিপাকে পুর-গরিবরাও appeared first on Sangbad Pratidin.