বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: উত্তরের তিন জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টির লাল সতর্কতা। সিকিমে ভারী বৃষ্টি, ভূমিধসের দুর্যোগ অব্যাহত। ধসে নতুন করে একাধিক রাস্তা অবরুদ্ধ। পাহাড়ি রাস্তায় হাজার হাজার পর্যটক আটকে পড়েছে। রাস্তার দু'পাশে যানবাহনের সারি। সিকিম প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের অনুরোধ করে কোন রাস্তা খোলা আছে জানতে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এদিকে পাহাড়ে একটানা বৃষ্টির জেরে সমতলে বাড়ছে তিস্তা-সহ বিভিন্ন নদীর জলস্তর।
মঙ্গলবার সকাল থেকে রাতভর বৃষ্টির জেরে ভূমিধসে সিকিম রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন রাস্তা অবরুদ্ধ হয়েছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছে পর্যটকরা। বিভিন্ন রাস্তায় তাদের আটকে পরার খবর মিলেছে। যদিও সিকিম প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তাদের ঘুরপথে গ্যাংটকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা হয়। তবে এখন যারা সিকিমে যাচ্ছেন তাদের চরম ধকল পোহাতে হচ্ছে। কোন রাস্তা কতক্ষণ ঠিক থাকবে বলা মুশকিল। বৃষ্টি হয়েই চলেছে। সিরিসে ডারায় ইয়াংগাং থেকে সিংটাং রাস্তা অবরুদ্ধ হয়েছে। ধস না সরানো পর্যন্ত সিংটাংয়ের দিকে যাওয়া পর্যটকদের গাগয়ং হয়ে বেরিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ডিকচু সিংটাং সড়কের অবস্থাও ভালো নেই। এই রাস্তায় ঝাপিয়ে পড়েছে উত্তাল তিনটেক খোলা। সেখানে একটি পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে পড়ায় বুধবার দিনভর যান চলাচল বন্ধ থাকে। সেনাবাহিনী এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরা অনেক চেষ্টার পর বিকেল নাগাদ ট্রাকটি ক্রেন দিয়ে টেনে তুলেছে। টানা বর্ষণের জন্য সড়কটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই কারণে সিকিম প্রশাসনের তরফে ট্রাক তোলা হলেও পর্যটকদের বিকল্প রুটে যাতায়াতের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: কন্যাশ্রীর ধাঁচে ‘নিযুত ময়না’ প্রকল্প হিমন্তের, প্রতি মাসে ছাত্রীদের স্টাইপেন্ড সরকারের]
বুধবার সিকিম রাজ্য সরকারের তরফে পর্যটকদের জন্য সিকিম প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য পথ নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে উত্তর সিকিমের মঙ্গন থেকে রাকডং হয়ে গ্যাংটক পর্যন্ত তিনটি রাস্তায় শুধুমাত্র হালকা যানবাহন চলাচল করতে পারবে। মানগাঁও থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত ফোডং রোড স্বাভাবিক আছে। মঙ্গন থেকে চুংথাং হয়ে টুং যাওয়ার নাগা রুট ধসে অবরুদ্ধ হয়েছে। মঙ্গন থেকে সাংকলং হয়ে চুংথাং পর্যন্ত সিপগিয়ার সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সাংকলং থেকে চুংথাং রাস্তা খোলা থাকবে সকাল ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা এবং দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। আবার চুংথাং থেকে সাংকলং রুট সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে অ্যাম্বুলেন্স এবং দমকল সহ জরুরি পরিষেবার যানবাহন সবসময় যেতে পারবে। লাচেন থেকে চুংথাং রাস্তা সকাল ৮টা থেকে ১০টা এবং বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে লাচেন থেকে থাঙ্গু পর্যন্ত জিমা রাস্তা বন্ধ আছে। থাঙ্গু থেকে গুরুদুংমার পর্যন্ত রাস্তা খোলা। চুংথাং থেকে লাচুং, লাচুং থেকে জিরো পয়েন্ট এবং মাঙ্গন থেকে সিংথাম সড়কে যান চলাচলে সমস্যা নেই। মঙ্গলবার রাতে সিকিমের গ্যাংটকে ৬১ মিলিমিটার এবং ডাংথাংয়ে ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
[আরও পড়ুন: জামাইষষ্ঠীতে গরমে পুড়ছে শহর, ঝুপ করে সুইমিং পুলে ডুব কাঞ্চন-শ্রীময়ী!]
এদিকে সিকিমে অবিরাম বর্ষণের জেরে উত্তরের সমতলে তিস্তার জলস্তর ক্রমশ বেড়ে চলেছে। অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলায় আজ, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এবং আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলায় শুক্রবার পর্যন্ত অতিরিক্ত ভারী বর্ষণ হতে পারে। এখানে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এখানে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও জলপাইগুড়ি জেলায় ১৬ জুন এবং আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলায় ১৭ জুন পর্যন্ত অতিভারী বর্ষণের কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় ১৪ জুন পর্যন্ত ভারী বর্ষণের হলুদ সতর্কতা সতর্কতা রয়েছে।