সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি নিজে আফগানিস্তানের (Afghanistan) থেকে অনেকখানি দূরে। কিন্তু আফগানভূমে আটকে পড়া মহিলা ফুটবলারদের কথা ভাবলেই বুকের ভিতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠছে তাঁর। বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে দুই দশক আগের তালিবানি (Taliban) তাণ্ডবের সব স্মৃতি। বন্দুকের নল সামনে রেখে সরকার চালানোর অঙ্গীকারবদ্ধ যারা, তাদের কাছে কতখানি নিরাপদ আফগান নারীরা? উত্তরটা ভেবেই শিউরে উঠছেন প্রাক্তন আফগান ফুটবলার খালিদা পোপাল। তাই তো মহিলা ফুটবলারদের উদ্দেশে তিনি চিৎকার করে বলতে চাইছেন, লুকিয়ে পড়ো সবাই।
আফগানিস্তান দখলের পর নারী নিরাপত্তা, তাঁদের শিক্ষা, সম্মানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছে তালিবান। মহিলারা যাতে সব অধিকার পান, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি কি পালিত হবে? নাকি বাস্তব ছবিটা হবে অন্যরকম! সন্দিহান আফগানিস্তানের প্রাক্তন ফুটবলার খালিদা (Khalida Popal)। তাঁর মতে, তালিবানি তাণ্ডব প্রভাব ফেলতে পারে মহিলা ফুটবল দলের উপরও। কারণ দু’দশক আগের ভয়ংকর ছবিটার সঙ্গে পরিচিত তিনি। ছোট্ট পোপালকে নিয়ে সেই সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন তাঁর বাবা-মা। সেই সব বিভীষিকাময় রাতের কথা ভাবলে আজও কেঁপে ওঠেন। ২০টা বছর পেরিয়ে ফের সেই ভয়াবহ অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। তাঁর কাছেও ফোন করে সাহায্যের আর্তি করছেন অনেকে। ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। ডেনমার্কের বাড়িতে বসে যা শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না তিনিও। সেই সব মহিলা ফুটবলারদেরই লুকিয়ে পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পোপাল।
[আরও পড়ুন: বাড়ি ফেরার আগেই অসুস্থ Neeraj Chopra, তড়িঘড়ি ভরতি করা হল হাসপাতালে]
পোপাল বলেন, ‘‘নিজেদের লুকিয়ে ফেলুক দেশের মহিলা ফুটবলাররা। পাড়া-পড়শি যাঁরা তাঁদের চেনেন, তাঁদের থেকে নিজেদের গোপন করে রাখুক। নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে আগে বাঁচতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছবি-সহ সমস্ত তথ্য মুছে ফেলা উচিত ওদের। এভাবেই ধীরে ধীরে নিজেকে উধাও করে ফেলতে হবে। ওদের জীবন বিপন্ন।’’
১৯৯৬ সালে আফগানিস্তান থেকে পালাতে হয়েছিল পোপালকে। ২০ বছর পর দেশে ফিরে শরণার্থী শিবিরে থেকে ফুটবল খেলা শুরু করেছিলেন। আফগানভূমের প্রথম মহিলা ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন তিনি। নতুন দিনের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন। ফুটবলকে হাতিয়ার করেই পাহাড়ে ঘেরা বারুদের গন্ধে ভরা দেশে নারী স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু করেছিলেন। পোপাল বলেন, ‘‘আমাদের প্রজন্ম স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। নতুন উচ্চতায় ফুটবলকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল ছেলে-মেয়েরা। মহিলাদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার ছিল ফুটবল।’’ কিন্তু এক ঝটকায় যেন আবার অনেকখানি পিছিয়ে গেল দেশের সভ্যতা।