অভিরূপ দাস: গায়ে জল ঢালতেই অদ্ভুত ঠান্ডা স্পর্শ। বাথরুমের আয়নায় দেখা গেল গলা জড়িয়ে পেল্লায় ফণাধর! শুধু এখানেই থেমে ছিল না। হেঁশেলে ঘরচিতি। খাটের তলায় পুয়ে। কেউ কুণ্ডলি পাকিয়ে শুয়ে। কেউ সোফায় বসে ফণা তুলছে। যে দিকে চোখ পড়ছে কিলবিল করছে বায়ুভূক। প্রত্যন্ত কোনও গাঁ গঞ্জের গল্প নয়। কলকাতা পশ্চিমের বেহালার অদূরেই শিবরামপুরের ঘটনা। সাপের অত্যাচারে নতুন বাড়ি ছেড়ে পালালেন দাস দম্পতি।
অগুনতি জলা, ডোবা-খাল বিল আর জংলা ঝোপে কলকাতা পশ্চিমের এ জায়গা সাপেদের স্বর্গরাজ্য। কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ড ১২৭। বিয়ের পর এখানেই নতুন বাড়ি বানিয়ে ঘর বেঁধেছিলেন রিয়া আর অমিত। কিন্তু বেশিদিন আর থাকা গেল না। সাপের উপদ্রব এতটাই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছল যে কড়কড়ে ১০ লক্ষ টাকা খসল গাঁটের কড়ি থেকে। বেহালার রায় বাহাদুর রোডে ছোট্ট এক কামরার ফ্ল্যাট কিনে পালিয়েছেন ওই দম্পতি। দম্পতির কথায়, নতুন বাড়ি বানিয়ে বিয়ের পর সুখে সংসার করবো ভেবেছিলাম। সাপের উপদ্রবে আর থাকা যাচ্ছিল না। অগুনতি সাপ আমরা পুড়িয়ে মেরেছি। পরের দিন আবার এক ঘটনা। শেষমেশ কোনওরকমে লাখ দশেক টাকায় একটা ফ্ল্যাট কিনে পালিয়েছি রায়বাহাদুর রোডে।
চেতলার রিয়া বসুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল এলাকারই ব্যবসায়ী অমিত দাসের। বিয়ের পর শিবরামপুরে নতুন বাড়ি করে অমিত। প্রথমে সব ঠিকই ছিল। গোল বাঁধল একদিন রান্নাঘরে। রিয়ার কথায়, আর পাঁচজনের মতো সাপ নিয়ে একটা আতঙ্ক আমারও ছিল। এখানে এসেও দুচার জনের মুখে গল্প শুনেছিলাম। কিন্তু সেই সাপ যে একেবারে আমাদের ঘরে চলে আসবে কখনও ভাবিনি। এক সকালে রান্নাঘরে রান্না করছিলেন রিয়া। গ্যাসের পাশে জলের জার সড়াতেই দেখা যায় কালো মোটা হিলহিলে একটা জন্তু। বুঝতে দেরি হয়নি কী জিনিস ঢুকেছে।
কার্বলিক অ্যাসিড আনা হয় সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু সামান্য অ্যাসিড কত সাপ আটকাবে। রিয়ার কথায়, বাড়ির আশপাশে যা সাপ ছিল একটা গোটা অ্যাসিডের কারখানা লাগত। এরপর কখনও জানলার শিকে। কখনও কোলাপসিবল গেটের গায়ে জড়িয়ে থাকতে দেখা যেত এমনই সরীসৃপকে। তবে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে যায় একদিন বাথরুমে। স্নান করছিলেন অমিত। মগে করে জল তুলতে গিয়েই শিরদাঁড়া দিয়ে নেমে গেল একটা হিমশীতল স্রোত। বালতি জুড়ে শুয়ে রয়েছে পেল্লায় এক জলঢোড়া। সেদিনের কথা বলতে গিয়ে এখনও ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় অমিতের। তাঁর কথায়, তারপরেই ঠিক করি আর এখানে নয়। যতই কষ্ট হোক। প্রয়োজনে ধার নিয়ে ফ্ল্যাট কিনব। বর্তমানে ছোট্ট ফুটফুটে এক মেয়ে হয়েছে দম্পতির। তাঁকে আগলে রেখেই বলছেন, মরে যাব তবু আর ও বাড়িতে ফিরব না।
[আরও পড়ুন: প্রেসক্রিপশনের চেয়ে বেশি ওষুধ দিতে গররাজি, মেটিয়াবুরুজে আক্রান্ত ফার্মাসিস্ট!]
The post ঘরজুড়ে শুধু সাপ আর সাপ! ফ্ল্যাট কিনে পালালেন বেহালার দম্পতি appeared first on Sangbad Pratidin.