কলহার মুখোপাধ্যায়: সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালেই প্রথম চোখে পড়ে খবরটা। চিকিৎসার জন্য আগরতলা থেকে কলকাতায় এসে আটকে পড়েছেন মানসী রায়। কোনওক্রমে স্টেশন চত্বরেই দিন কাটছে তাঁর ও তাঁর পরিবারের। খবরটা পড়ে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মানসীদেবীর দিকে।
রানির মতো ছিলেন প্রাসাদে। অতিথি আপ্যায়ণে ভোজন পর্বটা সারা হতো তাঁর পরামর্শমতো। ত্রিপুরার কনভেন্ট স্কুলের ‘ম্যাডাম’ হিসেবেও জনপ্রিয়তা কম ছিল না তাঁর। কিন্তু লকডাউনের দিনগুলো যে এভাবে কাটাতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। এখন ফুটপাথে দিন কাটাতে হচ্ছে মানসী ও তাঁর পরিবারকে। আরও অনেকের সঙ্গে পাতে পড়ছে ত্রাণের খাবার। তবে দুর্দশাগ্রস্ত মানসীদেবী ও তাঁর পরিবারের পাশে আগেই দাঁড়িয়েছিলেন এক সহৃদয় মহিলা। তুলে দিয়েছিলেন টাকা। এবার পাশে পেলেন অগ্নিমিত্রা পলকেও। চাল-ডিম ইত্যাদি খাবার তুলে দেন তাঁর হাতে। সেই সঙ্গে আর্থিক সাহায্যও করেন ফ্যাশন ডিজাইনার। খবর পেয়ে তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারায় সংবাদ প্রতিদিন-কে ধন্যবাদও জানান তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘সাংসদ তহবিলের পুরো অর্থই খরচ করব করোনা মোকাবিলায়’, ঘোষণা দেবের]
বলেন, “খবরটা শুনে ভীষণ খারাপ লাগল। একবার রানিক্ষেত গিয়ে আমরাও এরকম আটকে পড়েছিলাম। ফেরার সময় টাকা-পয়সা চুরি হয়ে যায়। কোনওক্রমে ট্রেনে আসানসোল ফিরি। কলা খেয়েই থাকতে হয়েছিল। তাই মানসীদেবীর অবস্থাটা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছি। যতটুকু পেরেছি, সাহায্যের চেষ্টা করেছি।” কিন্তু থাকার ব্যবস্থা? অগ্নিমিত্রা জানালেন, আপাতত মানসীদেবীর পরিবার খানিকটা সময় স্টেশন চত্বর আর বাকি সময় মন্দিরেই থাকছে। একটা ঘরের ব্যবস্থা করে তাঁদের রাখার চেষ্টাও করা হচ্ছে।
আগরতলার মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের মানসীদেবী অসুস্থ ছোট ছেলে অভিজ্ঞানের পড়াশোনায় সাহায্য করবেন বলে বছর পাঁচ আগে ছেড়ে দেন শিক্ষকতা। পারিবারিক কেটারিং ও ডেকরেটিংয়ের ব্যবসা সামলাতেন। সবই চলছিল স্বাভাবিক ছন্দে। হঠাৎ অভিজ্ঞানের গলায় টিউমার ধরা পড়ে। চিকিৎসার জন্য মানসীদেবীকে আসতে হয় কলকাতায়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁরা সপরিবারে অর্থাৎ মানসীদেবী, স্বামী গোপালচন্দ্র রায় এবং তিন ছেলে আসেন কলকাতায়। এক বেসরকারি হাসপাতালে অভিজ্ঞানকে ভরতি করানো হয়। পরে সরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে।
২৯ মার্চ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু লকডাউনে বাধা পড়ে ফেরায়। প্রথম দুটো দিন শিয়ালদহ স্টেশনে কাটিয়েছিলেন ৫ জন। সেখান থেকে লাগেজ খোয়া যায়। সহযাত্রীদের কথা শুনে চলে আসেন কলকাতা স্টেশনে। ব্যাস, সেই থেকে স্টেশন এবং স্টেশন লাগোয়া ফুটপাথই ঠিকানা। হাতে কিছু টাকা ছিল। করোনা আবহে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন মানসী দেবী। সেই টাকায় মাস্ক কিনে শ্যামবাজার এলাকায় বিক্রি করছেন। কিনেছেন একটি স্টোভ। ফুটপাথে বসে চাল-ডাল ফুটিয়ে দিনের বেলার খাবারটুকুর ব্যবস্থা করছেন। রাতে ত্রাণের ভরসা। এমন দুর্দিনে মানসীদেবীর পাশে দাঁড়ান ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা শুভা দেববর্মণ। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা তাঁদের জন্য ৫০০০টাকা পাঠান। এবার অগ্নিমিত্রা পলের থেকে সাহায্য বলে বুকে বল পেলেন তিনি। বলছেন, “এমন মেয়ে যেন প্রত্যেক ঘরে জন্মায়।”
[আরও পড়ুন: বলিউডে যেন মৃত্যুমিছিল, প্রয়াত ‘কাহানি ঘর ঘর কি’ খ্যাত অভিনেতা শচিন কুমার]
The post সংবাদ প্রতিদিন-এর খবরের জের, বাংলায় আটকে পড়া ত্রিপুরার পরিবারের পাশে অগ্নিমিত্রা পল appeared first on Sangbad Pratidin.