ব্যাঙ্ক ও গ্রাহকের সম্পর্ক চোর-পুলিশের নয়। তা-ও গ্রাহকের কষ্টার্জিত অর্থ অজান্তে অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে দেদার। সরকার চুপ।
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নানা সময় গ্রাহক-ক্রেতাকে বিজ্ঞাপনে ভুলিয়ে, ভুল বুঝিয়ে, বাড়তি মুনাফা করে বলে অভিযোগ ওঠে। তা সবসময় যে মিথ্যা, তা-ও নয়। অতীতে এমন কাণ্ডে বহু সংস্থাকে ভর্ৎসিত, আইনি জটে শাস্তিও পেতে হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাও যদি গ্রাহকের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করে, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?
সম্প্রতি, গ্রাহকের অজান্তে সরকারি বিমার গ্রাহক বানিয়ে তঁার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রিমিয়ামের টাকা কেটে নেয় জনপ্রিয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করায় প্রাথমিকভাবে তা অস্বীকার করা হয়। কিন্তু আইনি পথে যাওয়ার কথা শুনে অবশেষে কেটে নেওয়া টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ফেরত দেওয়া হয়। শুধু ওই ব্যাঙ্ক নয়, অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বিরুদ্ধে এমনই নানাবিধ অভিযোগ উঠছে। অনেকের দাবি, সরকারি বিমাগুলির বিক্রি বাড়াতে ব্যাঙ্কগুলিকে ‘চাপ’ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই বেআইনি হলেও এভাবেই বিক্রি বাড়ানোর পথে হাঁটছে ব্যাঙ্ক।
[আরও পড়ুন: সংসদে মিথ্যা ভাষণের অভিযোগ, এবার মোদির বিরুদ্ধে নালিশ কংগ্রেসের]
হয়তো প্রিমিয়ামের অর্থ অল্প বলে অনেকে তা বুঝতে পারছেন না। আবার অসংখ্য গ্রাহক ততখানি সজাগ ও সচেতন নয়। সেই সুযোগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি দেদার পকেট কাটছে। এ-বিষয়ে গ্রাহকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যাপ, নেট ব্যাঙ্কিং ও প্রথাগত পাস বই আপডেট করে লেনদেন খতিয়ে দেখার কথা বলছেন তঁারা। ব্যাপারটা যেন এমন– চুরি তো অবধারিত, গৃহস্থকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কিন্তু ব্যাঙ্ক ও গ্রাহকের সম্পর্ক চোর-পুলিশের নয়। গ্রাহকের যদি কষ্টার্জিত অর্থ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থাই না-থাকে, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় ‘লালবাতি’ জ্বলতে পারে। যে কোনও আর্থিক সংস্থাই চলে গ্রাহকের বিশ্বাসের উপর ভর করে। সংস্থাগুলি যেমন গ্রাহকের অর্থের নিরাপত্তা দেয়, তেমনই আকর্ষণীয় নানা পরিষেবা দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ আরও নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু যদি পরিষেবায় ত্রুটি থাকে বা সেই আস্থার জায়গা টলে যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও তার সুবিশাল কর্মীবৃন্দের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।
এককালে ভারতীয় ডাকব্যবস্থা ছিল সারা দেশের অসংখ্য মানুষের ভরসার কেন্দ্র। কিন্তু দুর্বল পরিষেবা, এজেন্ট-কর্মীদের দুর্নীতির জেরে তার নিদারুণ অবস্থা। তা থেকেও কি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি কোনও শিক্ষা নেবে না? সরকারি নীতির ফলে এখন দেশে বহু বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রমরমা। প্রতিযোগিতা চরমে। সেই লড়াইয়ে কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি ধীরে-ধীরে পিছিয়ে পড়ছে পরিষেবার কারণে। একমাত্র বিশ্বাসযোগ্যতাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সবেধন নীলমণি। সেটাও যদি কোনও কারণে ধাক্কা খায়, তাহলে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার কারণ আছে বইকি! তাই সময় থাকতে প্রয়োজন সতর্কতা অবলম্বন।