অর্ণব আইচ: আলিপুরের রাস্তা ধরে ছুটছিল কনভয়টি। একটি গাড়িকে মাঝখানে রেখে অন্য গাড়িগুলির তৎপরতা। সামনে ও পিছনে দু’টি গাড়িতে সতর্ক কমান্ডোরা। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি গাড়িতে কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স ও গোয়েন্দারা। মোট পুলিশের সংখ্যা পঞ্চাশের কম নয়। আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে প্রেসিডেন্সি জেলের গেটের সামনে এসে দাঁড়াল কনভয়। প্রিজন ভ্যান থেকে যাকে নামানো হল, রাজ্যের ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দিদের মধ্যে তাকে অন্যতম বললেও ভুল বলা হয় না।
মঙ্গলবার সকালে আলিপুর জেল থেকে প্রেসিডেন্সি জেলে সরানো হল আমেরিকান সেন্টারে হামলা ও খাদিমকর্তা অপহরণ মামলার মূল অভিযুক্ত আফতাব আনসারিকে। জেলের গেটের অন্যপাশে তৈরি ছিল কারারক্ষীদের বিশেষ টিম। কারারক্ষীরা কর্ডন করে তাকে নিয়ে যান ১-২২ সেলে। সেখানেই সাত নম্বর ঘরটি তৈরি রাখা হয়েছিল আগে থেকেই। আফতাবকে সেলে ঢুকিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলেন কারাকর্তারা। এদিন বিকেলে প্রেসিডেন্সি জেলে যান কারা দপ্তরের ডিজি। তিনি নিজেই গিয়ে আফতাবের সেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। কীভাবে ওই সেলের নিরাপত্তা বজায় রাখা হবে, তা নিয়ে ডিজি (কারা) প্রেসিডেন্সি জেলের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
[সিরিয়ায় ফসফরাস বোমা ফেলেছে আমেরিকা, অভিযোগে সরব রাশিয়া]
বহু বছর ধরে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের এক নম্বর সেলের ঘরটিই প্রায় স্থায়ী বাসস্থান হয়ে উঠেছিল আফতাবের। আলিপুর সেন্ট্রাল জেল বারুইপুরে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করার পর থেকেই কীভাবে আফতাব আনসারির মতো ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দিদের সরানো যেতে পারে, তা নিয়েও বৈঠক করেন কারাকর্তারা। সেই একই নিরাপত্তা যাতে প্রেসিডেন্সি জেলেও বজায় রাখা যায়, তার ব্যবস্থা নিতে শুরু করা হয়। কয়েকদিন আগে আফতাব আনসারির সেলের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় তিনটি মোবাইল, চার্জার ও প্রায় ৩০টি সিমকার্ড। এর পর আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে তাকে তাড়াতাড়ি সরানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কারা সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেই বিশেষ ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দির জন্য ওই সেলটি ঘিরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আফতাবের সেলের সামনে বসানো হয়েছে একাধিক সিসিটিভির ক্যামেরা। এ ছাড়াও পালা করে ২৪ ঘণ্টার জন্য তার সেলের সামনে ডিউটিতে থাকছেন কারারক্ষী। এদিন ডিজি (কারা) ওই সিসিটিভির ক্যামেরা ও ফুটেজও খতিয়ে দেখেন। জানা গিয়েছে, কারারক্ষীদের সঙ্গে সঙ্গে লালবাজারের গোয়েন্দারাও ওই ফুটেজের মাধ্যমে নজর রাখবেন আফতাবের উপর।
কারা দপ্তর সূত্রে জানিয়েছে, ২০০২ সালে আফতাবকে জেল হেফাজতে পাঠানোর পর সে মূলত প্রেসিডেন্সি জেলেই ছিল। এর পর ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে তাকে সরানো হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের বিশেষ সেলটিতে। ওই সেলে বসেও সে যে মোবাইলে পাকিস্তানে যোগাযোগ রাখছে, তা জানতে পেরেছিলেন গোয়েন্দারা। এর পর থেকে তার উপর আরও কড়া নজর রাখা হয়। ২০১২ সালে তাকে একটি মামলায় দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে তাকে আর কোথাও সরানো হয়নি। শুধু চোখ আর দাঁতের চিকিৎসার জন্য তাকে কিছুক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েও বিশেষ পাহারায় কিছুদিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিল সে। জানা গিয়েছে, ১-২২ সেলের অন্য ঘরগুলিতেও রয়েছে আরও বন্দি। দিনে দু’বেলা তারা ঘর থেকে বেরিয়ে সামনের উঠোনে ঘুরে বেড়াতে পারে। তাদের কেউ যাতে আফতাবের সেলের সামনে গিয়ে তাকে বিরক্ত করতে না পারে, সেই নির্দেশ দিয়েছেন কারাকর্তারা। আলিপুরের মতো যাতে প্রেসিডেন্সি জেলে তার হাতে মোবাইল বা কোনও নিষিদ্ধ বস্তু এসে না পৌঁছায়, সেই বিষয়েও কারারক্ষীদের সতর্ক করা হয়েছে। এদিকে, আফতাবের সঙ্গী ও আমেরিকান সেন্টারে হামলার অন্য অভিযুক্ত জামিলউদ্দিন নাসেরকে দমদম জেল থেকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তার উপরও কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
[বন্ধ বার্ধক্য ভাতা, জীবিত থাকার প্রমাণ দিতে হল অশীতিপর বৃদ্ধাকে]
The post হাজতে বসেই পাকিস্তানে ফোন, কমান্ডো প্রহরায় আফতাবের জেল বদল appeared first on Sangbad Pratidin.