নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: ‘আপনা বুথ সবসে মজবুত’। এই লক্ষ্য সামনে রেখেই এখন কাজ করতে হবে। নির্বাচনের হাওয়া তুলতে হবে নতুন বছরের শুরু থেকে। বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমনটাই নির্দেশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর (Amit Shah)। রাজ্যের প্রতিটি বুথে নিজেদের সংগঠন মজবুত করা, নির্বাচনের দিন ভোট করানো, বিজেপির ভোট যাতে ইভিএম মেশিনের পদ্ম চিহ্নেই পড়ে তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি, বুথের ভিতরে ও বাইরে যাতে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সঙ্গে কড়া টক্কর দেওয়া যায় সেই বিষয়টিকে পাকা করার উপরেও জোর দিয়েছেন তিনি। তার জন্য সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন শাহ।
এই ডিসেম্বরে মধ্যেই বাংলায় বুথ স্তরে সংগঠন মজবুত করার কাজ সেরে ফেলতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন শাহ। আপাতত অন্য বিষয়গুলিকে পিছনে রেখে বুথে শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে জন সংযোগ রক্ষা, এই দুটি বিষয় নিয়ে বাংলার নেতাদের এগোতে বলেছেন তিনি। বাংলার নির্বাচনী রণকৌশল ঠিক করার দায়িত্ব শাহ বহুদিন আগেই নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। বিজেপি (BJP) সূত্রের খবর, একসময় ঠিক যেভাবে দেশের সবথেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকারকে ক্ষমতায় আনতে বুথ স্তরের মতো ‘মাইক্রো লেভেল ম্যানেজমেন্টে’র ঘুঁটি সাজিয়ে ছিলেন, ঠিক সেই কৌশলেই বঙ্গ বিজয়ের রাস্তায় হাঁটতে চলেছেন শাহ।
[আরও পড়ুন: ওয়েইসির খাসতালুকে থাবা বসাবে বিজেপি? হায়দরাবাদ পুরনিগমের নির্বাচনে নজর গোটা দেশের]
রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ৭৯ হাজার (৭৮,৯০৩) বুথ রয়েছে। দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে সদ্য বিহার বিধানসভা নির্বাচনের মতোই বাংলার নির্বাচনের সময়েও বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই এগোতে বলেছেন শাহ। বুথ স্তরের সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্যেই সুনীল দেওধর-সহ সংগঠনের একগুচ্ছ কেন্দ্রীয় নেতাকে ইতিমধ্যেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা জোরকদমে নিজেদের কাজও শুরু করে দিয়েছেন। ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার নয়, প্রতিটি বুথে বিজেপির লোক তৈরি করার উপরেই তাঁরা জোর দিচ্ছেন। সূত্রের খবর, রাজ্যের প্রায় হাজার দশেক বুথে এখনও পর্যন্ত বিজেপির সেভাবে কোনও কর্মী সমর্থক নেই। অথচ ভোটের দিন যে বুথের হিসাব নিকেশের উপরেই যে অনেক কিছু নির্ভর করে, সেই বিষয়টি সকলেরই জানা। তাই দলের কর্মীদের ‘আপনা বুথ সবসে মজবুত’ স্লোগান মনে বসিয়ে নিয়ে কাজ করতে হবে এবং এইটির উপরেই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনী হাওয়া তোলার ক্ষেত্রে আপাতত ধীরে চলার নীতিও শাহর রণকৌশলেরই অঙ্গ। নতুন বছরের শুরু থেকেই সেই কাজ আরম্ভ করার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। এখনই নির্বাচনী হাওয়া না তুললেও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বাংলা সফর লাগাতার চলবে। জনসভার বদলে তাঁরা সাংগঠনিক বৈঠকের উপরেই বেশি জোর দেবেন বলে ঠিক হয়েছে। তবে খুব বেশি হলে সাংবাদিক সম্মেলন করে শাসকদলকে নিশানা করবেন তাঁরা। সেই সঙ্গে শাসক দলের উপর আক্রমণ ও রাস্তায় নেমে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে বলেই শাহ জানিয়ে দিয়েছেন। নির্বাচনী হাওয়া তোলার ক্ষেত্রে দলবদলের মতো বিষয়গুলি নিয়ে এখন থেকে হইচই নয়, বরং সেই সংখ্যা যাতে আরও বেশি হয় সেই বিষয়টির উপরেই জোর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
[আরও পড়ুন: আগামী বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই ভ্যাকসিন পাবেন ৩০ কোটি ভারতীয়, দাবি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর]
নির্বাচনী হাওয়া তোলার ক্ষেত্রে ধীরে সুস্থে চলার প্রসঙ্গে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, “ভোট হতে এখন কয়েক মাস বাকি। এখন থেকে ভোটের হাওয়া তুলতে শেষের দিকে তা টানা মুশকিল হয়ে পড়বে। সবকিছুই সময়মতো হবে। বাংলায় প্রচারের হাওয়া তুলতে বিজেপির পরিকল্পনাও সময় হলেই সকলে জানতে পারবেন।” রাজ্য বিজেপির (BJP West Bengal) এক প্রথম সারির নেতাও একই সুরে বলেছেন, “বিজেপির প্রতি মানুষের যে সমর্থন রয়েছে তাতে এখন থেকে হাওয়া তুললে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে। আর হাওয়া তো বিজেপি তুলবেই। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) মাঠে নামবেন।”