সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ধর্মতলার সভা থেকে লোকসভা ভোটের ডঙ্কা বাজিয়ে দিলেন অমিত শাহ (Amit Shah)। সভার শুরুতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে মেরুকরণের বার্তা! কলকাতার সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে উসকে দিলেন ‘ডাইরেক্ট অ্য়াকশন ডে’র স্মৃতি। তাঁর গলায় শোনা গেল ‘গোপাল পাঁঠা’র নাম। কীভাবে তিনি ভারত থেকে বাংলার বিচ্ছেদ রুখেছিলেন সেই ইতিহাসও কিছুটা তুলে আনলেন শাহ। উঠে এল রামমন্দির প্রসঙ্গও। এমনকী, গোটা দেশের মধ্যে নাকি বাংলায় মুসলিমদের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ বলে দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যা দেখে রাজনৈতিক মহলের দাবি, লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে ভালো ফল করতে একদিকে যেমন তৃণমূলের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে ধস নামানোর চেষ্টা করছেন শাহ, অন্যদিকে তেমনই বাংলার মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার স্মৃতি উসকে ধর্মের তাস খেললেন।
এদিন সভার শুরুতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্য়ায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শাহ। একই সারিতে বসিয়ে সম্মান জ্ঞাপন করেন গোপাল মুখোপাধ্যায় ওরফে গোপাল পাঁঠাকেও। বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে কালো দিন ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট। কারণ, সেই সময় দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের জন্মদাতা মহম্মদ আলি জিন্নাহ। তাঁদের দাবি নিয়ে মাঠে নামে মুসলিম লিগ। শুরু হয় সাম্প্রদায়িক অশান্তি। এটা ভারতের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন গোপাল মুখোপাধ্যায় ও তাঁর ভারতীয় জাতীয় বাহিনী। সেই লড়াইয়ের কথাই উঠে এল অমিত শাহের গলায়। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শাহিদ হুসেন সুরাবর্দির আমলে কলকাতার রাস্তায় যে রক্ত ঝরেছিল, সে ভয়াবহ স্মৃতিই এদিন আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, কলকাতা, হাওড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে ময়দানে দাঁড়িয়ে ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-র ডাক দিয়েছিলেন সুরাবর্দি। কেননা ১৬ আগস্ট শুরু হয় ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’। চারদিন ধরে চলতে থাকা এই হানাহানিতে মৃতের সংখ্যা নাকি ছাড়িয়েছিল দশ হাজার! সেদিন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ‘গোপাল পাঁঠা’। এদিন শাহ বলেন, “সুরাবর্দি যখন বাংলাকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন গোপাল পাঁঠাই। সেই জন্যই বাংলা ভারতের অংশ হিসেবে রয়েছে।” রাজনৈতিক মহলের মতে, এই স্মৃতি উসকে ফের ভেদাভেদ তৈরির চেষ্টা করলেন বিজেপি নেতা।
[আরও পড়ুন: জেলে জ্যোতিপ্রিয়, সংগঠন সামলাতে উত্তর ২৪ পরগনায় কোর কমিটি গঠন করলেন মমতা]
ধর্মের তাসে শান দিয়ে শাহের অভিযোগ, অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরিতে বাধা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সঙ্গীরা। সেই বাধা অতিক্রম করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার রামমন্দির তৈরি করেছে। শুধু হিন্দুত্ব নয়, বাংলার মুসলিমদেরও নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করেন শাহ। বলেন, দেশের মধ্য়ে বাংলার মুসলিমদের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। তাঁদের ভোটের অঙ্ক হিসেবেই ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ তাঁর।