অঞ্জলি তেণ্ডুলকর: শচীন (Sachin Tendulkar) আর আমি একে অন্যকে চিনি তেত্রিশ বছর হয়ে গেল। যা কিনা ওর জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ। আর এটুকু বলতে পারি যে, শচীন আর আমি মানুষ হিসাবে অনেক জায়গায় একই রকম, যা আমাদের পরিচয়। এটা ঠিক যে, কিছু কিছু জায়গায় আমরা সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা একই রকম মত পোষণ করি।
প্রথমে দু’জনের তফাত নিয়ে বলি। যন্ত্রপাতি বা গ্যাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে শচীন আর আমার ফারাক আছে।
নতুন কিছু কিনলে আমি সব দেখেশুনে নিই, কী লেখা আছে পড়ি, নির্দেশিকা অনুসরণ করি। কিন্তু শচীন সে সমস্তর ধার ধারে না। ও স্রেফ কিনে নিয়ে নিজের মতো করে সেটা চালাতে শুরু করে দেয়। চিরকাল ও এ রকমই। কিন্তু যখন জীবন শিক্ষার বিষয় আসে, মূল্যবোধের ব্যাপার আসে, তখন আমি আর শচীন সব সময় এক ভাবে ভাবি, এক ভাবে বিচার করি।
[আরও পড়ুন: জাদেজার জাদু, কনওয়ের কেরামতিতে কুপোকাত হায়দরাবাদ, IPL জমিয়ে দিল ধোনির চেন্নাই]
আমরা দু’জনে সম্পূর্ণ ভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে আসা। পড়াশোনাগত ভাবেও আমরা আলাদা। কিন্তু তার পরেও আমাদের দু’জনের মূল্যবোধ এক। আমরা আমাদের বন্ধুবান্ধব বা স্টাফদের সঙ্গে যে ভাবে মিশি, আচরণ করি, গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও করি। কেউ যদি আমাদের বাড়িতে আসেন, তিনি আমাদের অতিথি। আমরা একই কাপে চা খাই, একই উষ্ণতায় সবাইকে একই ভাবে আপ্যায়ন করি। আর অভিভাবক হিসাবে আমরা আমাদের সন্তানদের মধ্যেও একই মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের কাছে অর্থ বা সাফল্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল, মনুষ্যত্ব।
শচীন যখন ভারতের হয়ে খেলত, আমি ওকে ‘স্পেস’ দিতাম, নিজের মতো থাকতে দিতাম। টেনশনের মধ্যে থাকলে শচীনের ভেতরে ভেতরে যে কী চলছে, বুঝতে পারতাম আমি। ও কথা বলতে না চাইলে, জোরাজুরি করতাম না আমি। তার পর শচীন কথা শুরু করলে বলতাম, আমার কী মনে হচ্ছে? তার পর ঠিক করতাম, কী করা উচিত।
অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন যে, শচীনের পঞ্চাশতম জন্মদিন নিয়ে আমি কী ভাবছি। কী পরিকল্পনা করছি। এটুকু বলতে পারি, বিশাল কোনও পার্টির বন্দোবস্ত করব না। হয়তো কাছের কয়েক জন বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে কিছু একটা করব, কিন্তু এমন কিছু করব না, যার সঙ্গে আমরা নিজেদের মেলাতে পারব না।