সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অভিজ্ঞতা, সক্রিয়তা – অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (AICC) সদস্য হওয়ার জন্য যে দুই মাপকাঠি আবশ্যক, এবারের নতুন তালিকা তার ব্যতিক্রম। অভিজ্ঞ, বর্ষীয়ান ও সক্রিয় অনেক সদস্যই বাদ পড়েছেন AICC’র সদস্য তালিকা থেকে। তালিকা খতিয়ে দেখলে বোঝা যাচ্ছে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) ঘনিষ্ঠরাই ঠাঁই পেয়েছেন এআইসিসি-তে। যার জেরে ব্যাপক ক্ষোভ কংগ্রেসের অন্দরে। যোগ্যতা নয়, ‘লবি’র জোরেই AICC সদস্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাদ পড়া সদস্যরা।
বাদ পড়া সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাম – কৌস্তভ বাগচী, ইন্দ্ররাজ চট্টোপাধ্যায়, সরিৎ বোস, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, আলম দেওয়ান, তাপস ফ্রান্সিস বিশ্বাস, সৌরভ ঘোষ। এঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের সক্রিয় তরুণ সদস্য কৌস্তভ AICC সদস্য হতে না পেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তাঁর নাম সুপারিশ করা হলেও শেষপর্যন্ত চূড়ান্ত তালিকায় নাম নেই। কৌস্তভের কথায়, সম্মানের সঙ্গে দল করাটা তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে কংগ্রেসের সঙ্গত্যাগের জল্পনাও উড়িয়ে দিয়েছেন কৌস্তভ। যদিও এআইসিসির এক সিনিয়র নেতা কৌস্তভের এই ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। দলের অন্যতম মুখপাত্রকে ‘কাল কা যোগী’ বলে কটাক্ষ করে বলেছেন, “এদের উচ্চাশা অনেক বেশি। একদিন ক্ষোভ দেখিয়ে কিছু না পেলে কালকেই তৃণমূলে চলে যেতে পারে। চিদম্বরমকে কালো পতাকা দেখিয়ে পরিচিতি পেয়েছিল। কিন্তু সংগঠনে কোনও ভূমিকা নেই। যে বিকাশ ভট্টাচার্য সাইবাড়ি নিয়ে এত বড় বড় কথা বললেন কৌস্তভকে দেখা গেল তাঁরই পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে। এরা ছোট ছোট নেতা, এদের কোনও গুরুত্ব নেই। সংবাদমাধ্যমে দুদিন নাম তুলে সহজ পদ্ধতিতে নেতা হয়ে জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা।”
অশোক ভট্টাচার্য, প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্রর এই তালিকায় নাম নেই। যদিও তাঁর এ নিয়ে ক্ষোভ নেই। বলেছেন, “দল আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। এখন নানাভাবে দলের কাজ করে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সময়। এই তালিকায় নাম নেই বলে আমার কোন ক্ষোভ নেই। প্রদেশ নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়েছে।”
[আরও পড়ুন: জামিন পেয়েই পালটা, পৃথ্বী শ’র বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের স্বপ্না গিলের]
অন্যদিকে নিলয় প্রামাণিক, অতসী চৌধুরী-সহ আরও অনেকের নামই রয়েছে AICC সদস্য তালিকায়। যাঁরা ২-৩ বছর ধরে দলের কাজ করছেন, তাঁদেরও অনেকে নতুন তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। আর সেটাই ক্ষোভের অন্যতম বড় কারণ বলে হাত শিবিরের একাংশের। মুখ দেখানোর রাজনীতি চলছে বলছে দলে নানা স্তরে আবার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু হয়েছে। অভিযোগ, বহরমপুরের জেলা নেতৃত্বের অনেকেই এআইসিসি সদস্য হয়েছেন অধীর চৌধুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে। অনেক বর্ষীয়ান নেতা, যেমন হিরন্ময় কালী, সোমেশ্বর বাগুই, অশোক ভট্টাচার্যদের নাম নেই নতুন তালিকায়। আবার মিল্টন রশিদ, আল বিরুনী, আসিফ মেহবুবরা প্রাক্তন বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও মনোনীত সদস্য হলেন।
রাজ্য প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, AICC সদস্য করার জন্য ৯৮ জনের নামের তালিকা সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছিল। চূড়ান্ত তালিকায় নাম এসেছে ৮৮ জনের। তাদের মধ্যে কুড়িজন মনোনীত। বাকিরা নির্বাচিত। যে দশ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, রায়পুরের প্লেনারি স্টেশনে তাদের মধ্য থেকে বা প্রদেশের পাঠানো তালিকার বাইরে থেকেও কিছু নাম সংযোজন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘রেডিও শুনো না, কাগজ পড়া বন্ধ করো’, অজিদের পরামর্শ বর্ডারের]
তবে প্রদেশ নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, এই তালিকার থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশের কোন সদস্যের ভোটাধিকার আছে কিনা। দেখা যাবে এআইসিসির তালিকায় নাম আছে এমন অনেকেরই এ আইসিসি সভাপতি নির্বাচনের মতো মূল পর্বে অংশ নেওয়ার অধিকার নেই। তাদের ক্ষেত্রে এআইসিসির তালিকায় নাম থাকা আহামরি কোন বিষয় নয়। নেতৃত্বের একাংশের কথায়, প্রদেশের নির্বাচিত সদস্য হয়ে এআইসিসি নির্বাচনে অংশ নিতে পেরেছে কিনা, সেটাই বড় বিষয়।