দুলাল দে: সবুজ-মেরুনের সবুজ তোতা। লাল-হলুদ শেকলের শক্তি কোথায় তাঁকে আটকে রাখে? তাই একবার নয়। শুধু সবুজ মেরুন জার্সিতেই ১৭ বার লাল-হলুদের জাল কাঁপিয়েছেন তিনি। শতবর্ষের কলকাতা ডার্বির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। এহেন পারফরম্যান্সের পরও কিন্তু ডার্বি খেলতে নামলে বেশ চাপেই থাকতেন ব্যারেটো।
রিলায়েন্স অ্যাকাডেমির বাচ্চাদের প্র্যাকটিস করিয়ে উঠে বলছিলেন, “সেন্টার করে খেলা শুরু হয়ে যাওয়ার মিনিট তিনেক পর কিছুটা ধাতস্থ হতাম। তার আগে পর্যন্ত দিব্যি শুনতে পেতাম, গ্যালারির গর্জন। চোখ তুললেই দেখতাম, গ্যালারি ভর্তি সবুজ-মেরুন পতাকা। সেটা ওই মিনিট তিনেক পর্যন্ত। তারপর খেলা শুরু হয়ে গেলে, গ্যালারির দিকে তাকালেও তখন আর কিছু দেখতে পেতাম না। গ্যালারির কোনও আওয়াজও কানে আসত না। তখন শুধু একটাই দেখতাম, প্রতিপক্ষর গোল আর প্রতিপক্ষর লাল-হলুদ জার্সি।”
[আরও পড়ুন: আরসিবি-র মিউজিক ভিডিওয় বিরাট কোহলির আগুন ধরানো নাচ, ভাইরাল ভিডিও]
ডার্বির কিছুদিন আগে থেকেই না পারতেন বাড়ি থেকে বের হতে, না পারতেন ঠিকভাবে ক্লাবে আসতে। ব্যারেটোকে (Jose Ramirez Barreto) ঘিরে আকাশ সমান দাবি থাকত সমর্থকদের। বলছিলেন, “এটা ঠিক যে, এই ডার্বি ঘিরে কয়েকদিন আগে থেকেই সমর্থকরা এমন সব দাবি করতেন যে, রীতিমতো চাপে পড়ার অবস্থা হত। যেখানে যেতাম, এক কথা। শুধু ইস্টবেঙ্গলকে হারানো নয়। আমাকে গোলও করতে হবে। করোনা আবহে অবশ্য এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan), এসসি ইস্টবেঙ্গলের (SC East Bengal) কোনও ফুটবলারকেই মাঠের বাইরের এই চাপ সহ্য করতে হচ্ছে না। তার উপর গ্যালারিতেও দর্শক থাকবে না। ফলে ম্যাচের আগে নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ পাবে। গ্যালারিতে লোক না থাকাটা কিন্তু একদিক থেকে বেশ খারাপও। আমার নিজেরই তো ভরা গ্যালারি দেখলে, নিজেকে তাতাতে অনেক সুবিধে হত। মাঠের ব্যাপারস্যাপার যা-ই হোক, এটিকে মোহনবাগানের যা আক্রমণশক্তি, তাতে কিন্তু এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারানো উচিত হাবাসের। দলটা এমনিতেই ভাল ছিল। তার উপর বুমোস দলে আসায় আরও শক্তিশালী হয়ে গেছে। ”
এটিকে মোহনবাগান এবং এসসি ইস্টবেঙ্গলের একটি করে খেলা দেখার ভিত্তিতে ব্যারেটোর মনে হয়েছে, “হঠাৎ করে সন্দেশ চলে যাওয়ার জন্য, ডিফেন্স নিয়ে হাবাসের পরিকল্পনা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, এবারের হাবাসের বিদেশি রিক্রুট দেখে মনে হচ্ছে, ভেবেছিলেন, যখন সন্দেশের মতো ডিফেন্ডার আছে, তখন আক্রমণে রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামসের পাশে কাউকো এবং হুগো বুমোসকে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এখন তিরিকে ডিফেন্স খেলিয়ে আক্রমণে একজন বিদেশি কম খেলাতে হচ্ছে। এমনকী ডিফেন্সিভ ফর্মেশনেও অনেক বদল এনেছেন। তবুও যে দলটা হাবাস ধরে রেখেছেন, তাতে শনিবারের ডার্বিটা এটিকে মোহনবাগানের জেতা উচিত। শুধু আইএসএল কেন, এএফসির দিকে লক্ষ্য রেখে বছরের শুরু থেকেই দলটার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সেখানে এসসি ইস্টবেঙ্গল নতুন একটা দল।
গত বছরেও জামশেদপুরের বিরুদ্ধে পয়েন্ট পেয়েছিল রবি ফাউলারের দল। তাই প্রথম ম্যাচে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ড্র দেখে এখনই বিশাল কিছু নম্বর দিতে পারছি না। বরং হুগো বুমোস যদি মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, ডিয়াজ কাকে দিয়ে আটকাবেন বুঝতে পারছি না। তবুও এখনই শেষ কথা বলতে চাই না। নিজেই তো কতবার পিছিয়ে থেকে ডার্বিতে ম্যাচ বার করে দিয়েছি। এটুকু বলতে পারি, হাবাসের জেতা উচিত।’’