শেখর চন্দ্র, আসানসোল: গত আগস্টে সিবিআইয়ের জালে ধরা পড়েন অনুব্রত। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শেষেও জেল থেকে মুক্তি পেলেন না বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি। এখনও আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারেই দিন কাটছে তাঁর। কবে জামিন মিলবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতার। শুক্রবার আদালতে বসেও ফিসফিস করে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের ‘দাওয়াই’ দিলেন অনুব্রত।
এজলাস থেকে বিচারক বেরিয়ে যাওয়ার পর বীরভূমের বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা-কর্মী ফের ঢুকে পড়েন। অনুব্রতকে ফিসফিস করে বেশ কিছু কথা বলেন। যার মধ্যে শোনা যায় শুভেন্দু অধিকারীর বীরভূম সফর সংক্রান্ত নানা কথাবার্তা। ঘাড় নাড়লেও অনুব্রত কোনও উত্তর দেননি। এদিন অনুব্রত ছিলেন একেবারেই সাবধানী। তাঁর কথা যেন বাইরে লোক শুনতে না পায় তিনি নজর রাখছিলেন। দলীয় কর্মীর বাইরে কেউ উঁকিঝুঁকি মারলেই তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন কে তুমি? তোমার পরিচয় কী? তুমি আমাদের কথা কেন শুনছো? বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ শুনানির পর এজলাস থেকে বেরিয়ে যান অনুব্রত মণ্ডল। বিচার চলাকালীন নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে অনুব্রত মণ্ডল বেশ কয়েকবার উচ্চস্বরে কেশে উঠেন। জানান তাঁর ঠান্ডা লেগেছে। সোয়েটার আনতে ভুলে গিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তারির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জামিন সাকেতের, দেখা করলেন TMC প্রতিনিধি দলের সঙ্গে]
অনুব্রত মণ্ডলকে শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ সিবিআই আদালতের এজলাসে আনা হয়। যখন তিনি এজলাসে ঢোকেন তখন অন্য একটি মামলা নিয়ে বিচারক ব্যস্ত ছিলেন। অনুব্রতর অনুগামীদের দেখে জিজ্ঞেস করেন তাঁরা কারা? এত লোক কেন এখানে ঢুকেছেন? তিনি সেই সমস্ত বাড়তি লোকজনদেরকে এজলাস থেকে সরে যেতে বলেন। উল্লেখ্য, বারবারই অভিযোগ উঠেছিল বিচারক চলে যাওয়ার পর ওই এজলাসে বসেই দলীয় বৈঠক করছেন অনুব্রত। এরকম বৈঠক যেন না হয় সেজন্য বিচারক এদিন প্রথম থেকেই দলীয় কর্মীদের বা অনুগামীদের বের করে দেন।
শুনানি চলাকালীন এদিন ১৪ দিনের তদন্তের আপডেট বিচারকের কাছে জমা দেন গরু পাচার মামলার সিবিআইয়ের আইও সুশান্ত ভট্টাচার্য। ফাইল দেখতে গিয়ে কার্যত অবাক হয়ে যান বিচারক। আইওকে ডেকে একটি কাগজে আঙুল দেখিয়ে ফিসফিস করে বেশ কিছু কথা বলেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। তিনি তদন্তকারী অফিসারকে বলেন, “আমার ২০ বছরের সার্ভিস লাইফে এ জিনিস শুনিনি। দেখা তো দূরের কথা।” সেই সিডি বা কেস ডায়েরি এখন বিচারকের কাছে। কি এমন তথ্য দিল সিবিআই ? তা নিয়ে রহস্য ক্রমশ জমাট বাঁধছে। অনুব্রত মণ্ডলের পরবর্তী শুনানি ২২ ডিসেম্বর। ততদিন জেল হেপাজতে থাকবেন তিনি।