সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার রাতে অনুব্রত মণ্ডল দিল্লি পৌঁছতেই চরম নাটক। মধ্যরাতে তাঁকে হাজির করা হয় সিবিআই আদালতের বিচারক রাকেশ কুমারের বাড়িতে। সেখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক দু’পক্ষের আইনজীবীর তীব্র বাগযুদ্ধের পর অনুব্রতর ১০ মার্চ পর্যন্ত ঠাঁই হয় দিল্লির ইডি অফিসে। রাত দেড়টার পর বিচারক তাঁর রায় দেন।
রায়ে বলা হয়েছে, রোজ অনুব্রতর (Anubrata Mandal) স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে, আধঘণ্টা তাঁকে তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে একান্তে কথা বলতে দিতে হবে এবং আইনজীবীর সামনে জেরা করতে হবে। রাত ন’টা নাগাদ অনুব্রত দিল্লি পৌঁছলে তাঁকে প্রথমে ইডি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য আনা হয় রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে। এরপর ইডি অফিস থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুব্রতকে হাজির করানো হয় সিবিআই কোর্টে। কিন্তু অনুব্রতর আইনজীবীর আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে বারোটায় অনুব্রতকে নিয়ে যাওয়া হয় বিচারকের বাড়িতে। সেখানে এক ঘণ্টা বাদানুবাদ চলে।
মঙ্গলবার সকালে অনুব্রতকে আসানসোল জেল থেকে কলকাতায় এনে জোকা ইএসআই হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরে। জোকা ইএসআই হাসপাতাল থেকে বেরনোর সময় অনুব্রতকে দেখে ‘গরু চোর’ স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে চিকিৎসা করতে আসা মানুষজনকে। সন্ধে পৌনে সাতটা নাগাদ তাঁকে নিয়ে রওনা হয় বিশেষ বিমান। হাসপাতাল তাঁকে ফিট সার্টিফিকেট দিলেও বিমানবন্দরে আসার পর তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। এ সময় তাঁকে চেকইনে না নিয়ে থ্রিসি গেটের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি ইনহেলার ব্যবহার করেন। উল্লেখ্য, রাখি পূর্ণিমার দিন সিবিআই তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। দোল পূর্ণিমার দিন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল দিল্লিতে। বিশেষ পঞ্জিকা দেখেই কি রাজ্যছাড়া করা হল কেষ্টকে, উঠছে প্রশ্ন।
[আরও পড়ুন: দোলযাত্রা নয়, ‘অনুদা’কে দিল্লি যাত্রার শুভেচ্ছা! অনুব্রতকে কটাক্ষ করে ফের ছড়া রুদ্রনীলের]
অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার বিষয়টির নেপথ্যে রাজনীতি দেখছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে এত মামলার তদন্ত হচ্ছে, অথচ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে একজন ভাল সংগঠককে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আইন আইনের পথে চলবে। তাঁর আইনজীবীরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবেন। এদিকে, শুভেন্দুর মতো তোলাবাজ এফআইআরে নাম থাকা সত্ত্বেও ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’’ এদিন, স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর ইডির হাতে কেষ্ট যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।
যদিও দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার পরেও অনুব্রত মণ্ডলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফের করানো হয়। এদিন এক চিকিৎসক তাঁর সঙ্গে বিমানে ছিলেন। দোলের দিন সকাল ৬.৪৩ মিনিটে অনুব্রত মণ্ডল আসানসোল জেল থেকে বেরিয়ে আসেন। এসময় বিজেপি কর্মীরা জেলের বাইরে ঢাক পেটান, গঙ্গাজল ছিটিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন, পাপমুক্ত হল। চারটি গাড়ির কনভয়ের মধ্যে তিনটি পুলিশের ও একটি অ্যাম্বুল্যান্স যাতে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী ছিলেন। কলকাতায় যাওয়ার পথে শক্তিগড়ে তাঁর গাড়ি থামে। শক্তিগড়ে একটি রেস্তরাঁতে কচুরি, ছোলার ডাল, ল্যাংচা, রাজভোগ দিয়ে ব্রেকফাস্ট করেন অনুব্রত মণ্ডল। ব্রেকফাস্ট টেবিলে তিন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। জানা গিয়েছে, তার মধ্যে একজন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কৃপাময় ঘোষ। দ্বিতীয় জন তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের গাড়ির চালক তুফান মৃধা ও তৃতীয় জন জামবনির ছোটন সিং। এরই মাঝে আবার দল পাশে রয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের, এমনই বার্তা দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম।