সুকুমার সরকার, ঢাকা: গণ অভ্যুত্থানের জেরে প্রধানমন্ত্রীর গদি হারিয়েছেন শেখ হাসিনা। ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়ার পর থেকে একের পর এক মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে মামলার সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গিয়েছে। ৭টি গণহত্যার অভিযোগও আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে ফিরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুজিবকন্যা হাসিনাকে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পরই ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে, তার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই নয়া সরকার। সেই মতোই বৃহস্পতিবার শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। আর বিচার শুরুর প্রথম দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এই মুহূর্তে ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন হাসিনা। তাঁকে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে শুনানির জন্য হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ এই নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মহম্মদ গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত বাকিদের বিরুদ্ধে শুনানি এখনও চলছে। শুনানির শুরুতে বিডিআর বিদ্রোহে ৭৪ জনকে হত্যা, শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যা, র্যাবের বিচার বহির্ভূত হত্যা, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা-সহ আওয়ামি শাসনকালে মানবতা বিরোধী অপরাধ তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। হাসিনা-সহ পলাতক অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল তৎকালীন আওয়ামি লিগ সরকার। এই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামাত-বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বিচার হয়েছে। পরে তাঁদের সেই সাজা কার্যকরও করা হয়। এবার এই ট্রাইব্যুনাল হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল। ফলে এবার ভারতের অবস্থান কী হবে সেদিকে নজর ওয়াকিবহাল মহলের।