অর্ণব আইচ: দাগী ডাকাতের ‘টেরর লিঙ্ক’? কলকাতা থেকে উদ্ধার বিপুল অস্ত্র ও গুলির সূত্র ধরে এমনই তথ্য হাতে এসেছে বলে দাবি পুলিশের। সেই সূত্র ধরে ওই অস্ত্র বাংলাদেশে পাচার করার ছক কষা হয়েছিল কি না, সেই তথ্যও খতিয়ে দেখছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স।
শনিবার মধ্য কলকাতার মুচিপাড়া এলাকার সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অদূরে অস্ত্র পাচার করার অভিযোগে মহম্মদ ইজরায়েল খান নামে এক ব্যক্তিকে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে তিনটি ওয়ান শটার, দু’টি সেভেন এমএম পিস্তল ও ৯০টি বুলেট উদ্ধার করা হয়। ওই ৯০টির মধ্যে রয়েছে ৫০টি ৮ এমএম ও ৪০টি ৭.৬৫ এমএম বুলেট। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, রাজাবাজারের পাটোয়ার বাগান লেনে ইজরায়েল এখন পরিবার নিয়ে থাকলেও তার আসল বাড়ি ঝাড়খণ্ডের চাতরা জেলার ঘাংড়ির হান্টারগঞ্জ এলাকায়। ঝাড়খণ্ডে যাতায়াতের সূত্র ধরেই অস্ত্র পাচারের মতো অপরাধে হাত পাকাতে শুরু করে সে। শেষ পর্যন্ত হাতে পর্যাপ্ত অস্ত্র আসার পর রীতিমতো ডাকাত দল তৈরি করে ফেলে সে।
২০১৪ সালে উত্তর কলকাতার সিঁথি এলাকার একটি দোকানে ঢুকে হাতে রিভলভার নিয়ে ডাকাতি করে ইজরায়েল। সিঁথি থানার পুলিশ ও লালবাজারের গোয়েন্দারা তদন্ত করে জানতে পারে যে, ওই ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড রাজাবাজারের অস্ত্র পাচারকারী মহম্মদ ইজরায়েল খান। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ডাকাতির মামলায় জেল থেকে বের হওয়ার পরও সে থেমে থাকেনি। ফের শুরু করে অস্ত্র পাচার। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে অস্ত্র পাচারের অভিযোগে ইজরায়েল গ্রেপ্তার হয়েছে।
রবিবার ইজরায়েলকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী আদালতে জানান, বেআইনি অস্ত্র নিয়ে ওই ব্যক্তি ধরা পড়েছে। বেআইনি অস্ত্র কারবারী তথা পাচারকারী হিসাবে তার বদনামও রয়েছে। এই অস্ত্র পাচারে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। অভিযুক্ত জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছে। তার সঙ্গে ‘টেরর লিঙ্ক’ বা জঙ্গিযোগ পাওয়া যেতে পারে। তাকে জেরা করে আরও কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। তাদের গ্রেপ্তার করার প্রয়োজন। অভিযুক্তর আইনজীবী তার জামিনের আবেদন জানান। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে অভিযুক্তকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, মূলত বিহারের মুঙ্গের থেকেই অস্ত্র সংগ্রহ করে সে। সেই মুঙ্গেরি রিভলভার ও পিস্তল এজেন্টের মাধ্যমে কখনও সড়কপথ, কখনও বা রেলপথে নিয়ে আসে কলকাতায়। ক্রেতা বুঝে সেগুলি চড়াদামে বিক্রি করে সে। সামনেই বিভিন্ন জেলায় উপনির্বাচন। তার আগে কলকাতায় এই অস্ত্র পাচারের ঘটনা চাঞ্চল্য বাড়িয়েছে। যদিও অনেক সময়ই কলকাতা থেকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে এজেন্ট মারফৎ অস্ত্র পাঠানো হয়। সীমান্ত পার হয়ে কয়েক গুণ দামে অস্ত্র ও বুলেট বিক্রি করা হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশে এখন জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তাই তাদের অস্ত্র বিক্রি করা এখন অনেক সহজ। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।