সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নাগরিক পঞ্জি থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। তার উপর অসমীয়া জাতীয়তাবাদের জিগির তুলে আসরে নেমেছিল ‘অসম জাতীয় পরিষদ’ নামের নতুন এক রাজনৈতিক দল। সঙ্গে শাসকবিরোধী শিবির খুলেছিলেন কৃষক নেতা অখিল গগৈ। ফলে এবারের ভোটে অসমে টক্কর যে কাঁটায় কাঁটায় তা বলেই দিয়েছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু সব সমীকরণ বদলে দিয়ে, সমস্ত জল্পনাকে ভুল প্রমাণিত করে অসমে ফের ক্ষমতা দখলের পথে বিজেপি (BJP)।
[আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে বিজয় উৎসব! এফআইআরের নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের]
বেশ কয়েক দফা গণনার পর এই মুহূর্তে অসমের ১২৬টি আসনের মধ্যে বিজেপিজোটের দখলে ৪৮টি আসন। তারা এগিয়ে রয়েছে ২৪টি আসনে। অর্থাৎ ম্যাজিক ফিগার ৬৪ স্বচ্ছন্দে পেরিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। রাজ্যের শাসকদলের শরিক ‘অসম গণ পরিষদ’ ও ‘ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবারেল’ ভাল ফল করেছে। অন্যদিকে, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘মহাজোট’ হম্বিতম্বি করলেও আপাতত ৪৮টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। বদরুদ্দিন আজমলের ‘অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট’ ও হাগ্রামা মহিলারির ‘বড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্টে’র সঙ্গে কংগ্রেসের জোট যে আশানুরূপ ফল দেয়নি, তা বেলা গড়াতেই স্পষ্ট। একইভাবে প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন ‘অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ বা আসু সমর্থিত ‘অসম জাতীয় পরিষদ’ও এই নির্বাচনে তেমন ছাপ ফেলেনি। প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে কৃষকনেতা অখিল গগৈর পার্টি ‘রাইজর দল’। যদিও শিবসাগর থেকে আপাতত এগিয়ে অখিল। সব মিলিয়ে অসম যে ফের গেরুয়া হতে চলেছে, তা স্পষ্ট। তবে বলে রাখা ভাল, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন।
এদিকে, নিজের বিধানসভা কেন্দ্র মাজুলি থেকে জিতে গিয়েছেন অসমের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল। জয়লাভ করেছেন অসমের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। নাহারকাটিয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পরাজিত হয়েছেন ‘অসম জাতীয় পরিষদ’-এর প্রার্থী লুরিনজ্যোতি গগৈ। ইতিমধ্যে সর্বানন্দ সোনওয়াল জানিয়ে দিয়েছেন যে শরিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে ফের সরকার গড়ছে বিজেপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে সাফ হয়ে গিয়েছে যে নাগরিকপঞ্জি ঘিরে তৈরি হওয়া বিভ্রাটের পরও হিন্দু বাঙালি ও অসমীয়াভাষীদের বড় অংশ বিজেপিতেই ভরসা রেখেছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে অসমে তীব্র প্রতিবাদ হলে ‘ভূমিপুত্র’দের স্বার্থরক্ষা নিতে শাসকদল যে আশ্বাস দিয়েছে তাতে অসমীয়াদের ক্ষোভ অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে।পাশাপাশি, করোনা আবহে অসম সরকার যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, বিশেষ করে হিমন্ত বিশ্বশর্মা যেভাবে মাঠে নেমে কাজ করেছেন, তাতে সুফল মিলেছে। সব মিলিয়ে অসমে বিজেপির ক্ষমতা দখল সময়ের অপেক্ষা মাত্র।