মণিশংকর চৌধুরি,গুয়াহাটি: মাটি থেকে শিকড় উপড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রহর গুণছেন ৪১ লক্ষ অসমবাসী। রাতারাতি ভূমিহীন, বলা ভাল দেশহীন হওয়ার আশঙ্কায় লক্ষ লক্ষ মানুষের নাওয়া- খাওয়া মাথায়। অথচ এই নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের অন্ত নেই। এতদিন যে বিজেপি এনআরসি নিয়ে জোর সওয়াল করে আসছে-চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের ঠিক প্রাক-মুহূর্তে সেই বিজেপির অন্দরেই তীব্র টানাপোড়েন। এনআরসির প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তুষ্ট খোদ রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তাঁর আশঙ্কা, নাগরিকপঞ্জিতে হিন্দু বাঙালি আবেদনকারীদের নাম বেশি কাটা যাচ্ছে, অথচ মুসলিমরা বহাল তবিয়তে তালিকায় ঢুকে বসে রয়েছেন। এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগের রাতে সংবাদ প্রতিদিনকে ফোনে অসম বিজেপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা তথা রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী যা বললেন, তার সারমর্ম এটাই।
[আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব পরীক্ষার ফলাফল, এনআরসিতে নাম না থাকলে ফের দীর্ঘ পথ পরিক্রমা]
হিমন্ত এদিন সাফ বললেন,”যারা রাম আর কৃষ্ণের নাম করে, তাঁরা এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছে। অথচ, অন্য ধর্মের মানুষের নাম তালিকায় রয়েছে। এনআরসির সঙ্গে আমাদের যে আবেগ জড়িত ছিল, তা আর এখন নেই। কারণ, বাংলাদেশে লাগোয়া দক্ষিণ শালমারা জেলায় কম সংখ্যক আবেদনকারীদের নাম কম কাটা গিয়েছে। অথচ কার্বি আংলং জেলা, যেটা কিনা উপজাতি অধ্যুষিত, সেখানে বেশি সংখ্যক আবেদনকারীর নাম এনআরসি তালিকায় ওঠেনি। ফলে প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে তা নিশ্চিত।”
অসমের উপমুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, এনআরসির এই তালিকাই নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ নয়। প্রয়োজনে সরকার নতুন কোনও আইন আনতে পারে বা এই বছরের মধ্যেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করানো হতে পারে। কারণ, হিন্দু বাঙালিদের নাম যদি এনআরসির তালিকা থেকে কাটা যায়, তাহলে সেটা বিজেপির ভোটব্যাংকের জন্যও ধাক্কা হবে। হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলছেন, “আমরা বিদেশি শনাক্ত করার নতুন রাস্তা খুঁজছি। কোনওভাবেই এনআরসিকে জাতীয় দলিল বলতে পারছি না। এখন যেনতেনপ্রকারে কোনওরকম একটা তালিকা প্রকাশ হোক। আইনশৃঙ্খলা বজায় থাক। যে আধিকারিকরা নিজেদের কাজকর্ম কামায় করে, এনআরসির কাজ করছেন তাঁরা নিজেদের কাজে ফিরুক। তারপর দেখা যাবে।”
হিমন্তর ‘কৃষ্ণকথা’র মধ্যে আবার মেরুকরণের রাজনীতি দেখছে অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। তাঁরা বলছেন, এনআরসি তালিকা নিয় আশঙ্কায় থাকা উপমুখ্যমন্ত্রী এবার ধর্মীয় তাস খেলছেন। অবশ্য একা হিমন্ত নন, ধর্মের তাস খেলতে পিছপা হচ্ছেন না কংগ্রেস নেতাদের একাংশও। দলগতভাবে এনআরসির বিরোধিতা না করলেও, কংগ্রেস যে প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হচ্ছে, তাঁর বিরোধিতা করছে। প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা অর্ধেন্দু দে-রও আশঙ্কা, এনআরসি তালিকায় হিন্দু বাঙালিদের নাম তুলনায় বেশি কাটা যাবে। এদিকে, এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে হিমন্ত বিশ্বশর্মার হিন্দু বাঙালি প্রেম চিন্তায় রাখছে বিজেপির জোটসঙ্গী অসম গণ পরিষদকেও। হিন্দু বাঙালিদের নিয়ে বিজেপির এই কুম্ভীরাশ্রু পছন্দ হচ্ছে না এজিপির।
[আরও পড়ুন: দেশের অর্থনীতিতে অশনি সংকেত, চলতি ত্রৈমাসিকে রেকর্ড পতন জিডিপি-র]
হিন্দু বাঙালিদের বাদ যাওয়া নিয়ে আশঙ্কা এতটাই যে, সরকার আগে থেকেই আসরে নেমেছে। বোঝানো হচ্ছে, তালিকা থেকে বাদ পড়া মানেই আপনি বিদেশের নাগরিক হয়ে যাননি। আপনাকে ডিটেনশন ক্যাম্পেও পাঠানো হবে না। বরং, আপনি আবেদন করতে পারবেন ফরেনার্স ট্র্যাইব্যুনালে। সেখানেও সরকারই আইনি সহায়তা করবে। রাজ্যজুড়ে এক হাজার ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। যেখানে ‘বিদেশি’ তকমাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা গিয়ে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে তথ্য পেশ করতে পারবেন। এর সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। ৬০ দিনের বদলে ১২০দিন করা হয়েছে।
The post বাদ যাচ্ছে বেশিরভাগ হিন্দু বাঙালির নাম! NRC ইস্যুতে অন্তর্কলহের আশঙ্কায় অসম বিজেপি appeared first on Sangbad Pratidin.