মণিশংকর চৌধুরি, গুয়াহাটি: অসমের নাগরিকপঞ্জিতে যাঁদের নাম রয়েছে, দীর্ঘ টালবাহানার পর তাঁদের জীবনে অন্তত স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু ফের তাঁদের রাতের ঘুম উড়তে পারে। কারণ নাগরিকপঞ্জি পুনর্যাচাইয়ের জন্য এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে অসম সরকার। ফলে প্রয়োজনে ফের ডাকা হতে পারে এনআরসি তালিকাভুক্তদেরও।
[আরও পড়ুন: ‘মুসলিম তাড়াতে চেয়ে এনআরসির পরিকল্পনা বিজেপির কাছে বুমেরাং’, মন্তব্য তরুণ গগৈর]
বিষয়টা আরও একটু বিস্তারিতভাবে বলা যাক। নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা তৈরির পদ্ধতি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ কোথাও বাদ পড়েছেন ভূমিপুত্ররাই, তো কোথাও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের আত্মীয়-পরিজনরা। তাহলে টানা ৬ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার নেতৃত্বে কাজ কি দায়সারাভাবেই হয়েছে? উত্তর অধরা। তবে নাগরিকপঞ্জির তালিকা তৈরির পদ্ধতিতে যে কোনও পক্ষই বিশেষ খুশি নয়, তা আর গোপন নেই। আর সেই কারণেই এবার তা পুনর্যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অসম-বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্তবর্তী জেলা যেমন ধুবড়ি, বড়পেটা, দক্ষিণ শালমারা, কাছার, কমিরগঞ্জ এবং হাইলাকান্দির ২০ শতাংশ রি-ভেরিফিকেশনের দাবি জানানো হবে। বাকি জেলাগুলির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ পুনর্যাচাইয়ের দাবি তোলা হয়েছে। এই মর্মে অল অসম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, APW-সহ অন্যান্য সংগঠনগুলিকে জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কিন্তু এই দাবি জোরাল হয়ে ওঠায় আরও একবার বিপাকে পড়তে পারেন নাগরিকপঞ্জির তালিকাভুক্তরা। পুনর্যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় দরকার পড়লে তাঁদেরও ডাকা হতে পারে। ফলে ফের অসমজুড়ে পরিবেশ থমথমে।
[আরও পড়ুন: বঞ্চিত ভাষা শহিদদের পরিবার, অসংগতিপূ্র্ণ এনআরসি ঘিরে ফের অশান্তির আশঙ্কা অসমে]
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে বিজেপির তরফে বারবার বলা হয়েছিল, এতে হিন্দু বাঙালিদের স্বার্থ রক্ষিত হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল উলটো ছবি। এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর গোটা বিষয়টা বিজেপির কাছেই বুমেরাং হয়ে এসেছে। বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও। তিনি বলেন, “যে হিন্দু বাঙালিরা ভোট দিয়ে ওদের এনেছিল, তাদের বেশিরভাগেরই নাম নেই। হিন্দিভাষী, গোর্খা, মুসলিম অনেকেরই নাম নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই নাম বাদ যাওয়ার তালিকার অধিকাংশই হিন্দু বাঙালি। ওরা হিন্দুর নামে ভোট দিয়েছিল, আর ওদেরই সবচেয়ে খারাপ করল বিজেপি। এখানে হিন্দু বাঙালিরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।” গোটা প্রক্রিয়ায় অসন্তুষ্ট বিজেপি বিধায়ক হিমন্ত বিশ্বশর্মাও। সেই কারণেই পুনর্যাচাইয়ের জন্য তিনি সমস্ত সংঠনগুলিকে পাশে চেয়েছেন। প্রসঙ্গত, আগামী সপ্তাহেই অসমে আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গভর্নর জগদীশ মুখী এবং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।
The post নাগরিকপঞ্জি পুনর্যাচাইয়ে সুপ্রিম কোর্টে অসম সরকার, নয়া সংকটে তালিকাভুক্তরা appeared first on Sangbad Pratidin.