shono
Advertisement

জন্মের পরই মাতৃহারা যমজ, সোশ্যাল মিডিয়ার আবেদনে ব্যাপক সাড়া, স্তন্যদানে রাজি ৫০ জন মা!

'এখন তো সবাই ওদের মা', সকলের ভালবাসা দেখে আপ্লুত সদ্যোজাতদের পরিবার।
Posted: 11:03 AM Dec 10, 2021Updated: 11:05 AM Dec 10, 2021

নব্যেন্দু হাজরা: অন্য মায়ের বুকের ওমে উষ্ণতা খুঁজবে দুই একরত্তি! মায়ের নাভি থেকে সবেমাত্র বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তারা। পার হয়েছিল মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। ভাগ্যের পরিহাস এমনই যে মায়ের আঙুলটুকু ছুঁয়ে থাকা আর হয়নি। হয়নি জীবনের প্রথম অমৃত – মাতৃদুগ্ধ (Breast Milk) পানও। দুই ভাইকে দুনিয়ার আলো দেখিয়েই চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে মা। গল্পটা শুরু এখান থেকেই…।

Advertisement

একটা ছোট্ট আর্তি। একটুখানি হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানান দেওয়া। ‘কলকাতাতে কারও চেনাজানা ব্রেস্ট মিল্ক ডোনার থাকলে একটু জানান। বাচ্চাগুলোর অবস্থা খুব একটা ভাল নয়।’ পোস্টগুলো ছিল এমনই কাতর আবেদনে ভরা। কী হতে পারে এর পর? সেটাই দেখিয়ে দিল আবেগঘন মহানগর। বুকের দুধ দিয়ে অচেনা, অজানা যমজ শিশুদের বাঁচাতে এই শহরের মায়েরা উজাড় করে দিল ভালবাসা। নিজের সন্তানের পাশাপাশি দুই শিশুকে বুকে আঁকড়ে ধরতে চাওয়ার স্নেহে কয়েক ঘণ্টায় পঞ্চাশজনেরও বেশি মা জানিয়ে দিলেন, তাঁরা রাজি শিশুদের স্তন্যপান (Breastfeed) করাতে।

[আরও পড়ুন: এবার নিজের রক্তেই বাঁচবে রোগীর প্রাণ, যুগান্তকারী ব্যবস্থা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের]

ঢাকুরিয়ায় বাড়ি অঙ্কিতা মিশ্রর। রবিবার এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে রবিবার তাঁর কোলে আসে ফুটফুটে যমজ পুত্র। সমস্যা ছিল একটাই। শিশু দুটি প্রিম্যাচিওর। তবে তাতে তাদের কোনও সমস্যা হয়নি। পরিবারে খুশির আবহ অবশ্য স্থায়ী হল না বেশিক্ষণ। সোমবার দুপুরেই জীবনদীপ নিভে গেল অঙ্কিতার। স্ত্রীকে হারিয়ে দিশাহারা স্বামী অমর্ত্য সিনহা। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “সোমবারই চিকিৎসকরা জানান, আপাতত কাজ চালাতে বেবি ফুড (Baby Food) দেওয়া হবে। কিন্তু মাতৃদুগ্ধ শিশুর জন্য সব থেকে ভাল। কিন্তু আমি কী করব? ভাবছিলাম, আমার সন্তানরা মায়ের দুধ বোধহয় আর পাবে না।”

এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন তাঁরই এক বান্ধবী। সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘‘একজন দিদি টুইনস্ বেবির জন্ম দিয়ে কার্ডিয়াক অ্যাটাকে হঠাৎ মারা যান। বাচ্চাগুলোর অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। এসএসকেএম-এ ভরতি আছে। কারও চেনা কেউ থাকলে প্লিজ যোগাযোগ করুন।’’ ব্যস, এইটুকুই দিয়েছিলেন সরিতা আহমেদ। অমর্ত্যর কথায়, “কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ৫০ জন মহিলা আমার শিশুদের মাতৃদুগ্ধ দিতে চেয়েছেন। কেউ বলেছেন বাড়ি এসে খাইয়ে যাবেন। কেউ বলেছেন, সংরক্ষণ করে রাখবেন। সময় করে দিয়ে যাবেন আমাদের। সবাই মোটামুটি বাড়ির কাছাকাছিই থাকেন। টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া, যাদবপুর, বাঘাযতীন চত্বরে। ওঁদের ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। এও সম্ভব!”

[আরও পড়ুন: সম্পর্কের টানাপোড়েনের জের, বাগুইআটিতে মহিলাকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা যুবকের]

এদিন অমর্ত্য হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন তাঁর মা-হারা সন্তানদের। ওদের দাদুর কথায়, “মা-হারা কোথায়? ওদের তো এখন সবাই মা।” ‘আমার মা না হয়ে তুমি, আর কারও মা হলে, ভাবছো তোমায় চিনতেম না, যেতেম না ওই কোলে?’– ভালবাসার এই শহরের মায়েদের কুর্নিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement