ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বালিগঞ্জে দলের প্রার্থী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাবুল সুপ্রিয়র নাম ঘোষণা করেছেন রবিবার সকালে। বিকেলেই সেই চত্বরে প্রচারে নেমে পড়লেন বাবুল। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির একটি মাঠে ক্রিকেট ম্যাচের মধ্যে দিয়ে শুরু হল বাবুলের ‘খেলা’। সোমবার দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে একটি বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা বাবুলের।
বালিগঞ্জ তৃণমূলের গড়। ভবানীপুরের পাশের বিধানসভা। স্বাভাবিকভাবেই হাইভোল্টেজ এলাকা। এদিন বিকেলে বালিগঞ্জের ভোটের সেই গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বারবার তৃণমূলনেত্রীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন বাবুল। সকালে যখন তাঁর নেত্রীর সঙ্গে কথা হয়, তখনই বিকেলের ক্রিকেট ম্যাচে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে নেন। পরে বালিগঞ্জ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, “সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এলাকা। আলাদা গুরুত্ব রয়েছে এ জায়গার। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশের বিধানসভা। ফলে যথেষ্ট সিরিয়াসলি আমায় লড়তে হবে। দল যেভাবে বলবে সেভাবে লড়ব। মাঠে যখন নেমে পড়েছি তখন খেলা হবে।”
[আরও পড়ুন: ইউক্রেনে নিহত ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর প্রাক্তন সাংবাদিক, জখম আরও এক সংবাদকর্মী]
আগামী ১২ এপ্রিল আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের সঙ্গে ভোট বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের। দু’টিই উপনির্বাচন। গণনা ১৬ এপ্রিল। আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয় পদত্যাগ করায় আসনটি ফাঁকা হয়। বালিগঞ্জ ফাঁকা হয় প্রাক্তন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার দু’টি কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন তৃণমূলনেত্রী। আসানসোলে ইতিমধ্যেই শত্রুঘ্ন সিনহার নামে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে।
বালিগঞ্জের রেকর্ড বলছে এই এলাকায় একে একে নিজেদের ভোট বাড়িয়েছে তৃণমূল। ২০১১ সাল থেকে টানা সেখানে প্রার্থী ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি সেবার ভোট পান ৬১ শতাংশ। ২০০৬ সাল থেকে এই কেন্দ্রে জিতছে তৃণমূল। সেবার প্রার্থী ছিলেন মন্ত্রী জাভেদ খান। পঞ্চাশ শতাংশের কাছাকাছি ভোটের শতাংশ ছিল তাঁর। তারপর থেকেই বাড়তে থাকে ভোট। গতবার অর্থাৎ একুশের নির্বাচনে সুব্রতবাবু পান ৭১ শতাংশ ভোট। জয়ের ব্যবধান ছিল ৭৫ হাজার ৩৫৯ ভোটের।
এই যখন ভোটের অঙ্ক, তাতে বাবুলকে নিয়ে নানা জল্পনার পর অবশেষে তাঁর নাম ঘোষণা বালিগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর বাবুল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন। সে সময় বলেছিলেন তিনি ‘প্লেয়িং ইলেভেনে’ থাকতে চান। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে বাবুলকে নিয়ে প্রত্যাশা অনেকটা। এই পরিস্থিতিতে তিনি দলীয় নেতৃত্বকে কতটা নিজের পাশে আশা করছেন, সে প্রশ্নের জবাবে বলেন, “দল এত বড় সুযোগ দিয়েছে এতেই আমি ধন্য। দিদি আমায় বলেছিলেন মন দিয়ে কাজ করো, মন দিয়ে গান করো। এটা আমার জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস। এবার দলের কথামতো কাজ করব। নেত্রী যা দায়িত্ব দেবেন তাই করব।”
বালিগঞ্জে বাবুলের নাম ঘোষণা করে যে চমক দিয়েছেন মমতা, তাতে উজ্জীবিত দলের কর্মীরাও। এর মধ্যে তাঁরাও নেমে পড়েছেন সাংগঠনিক জরুরি কাজে। সোমবার এই এলাকার ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনে বৈঠকও রয়েছে দুপুরে। সেখানে থাকবেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি দেবাশিস কুমার নিজে। তারপর সাংগঠনিক বৈঠক। বাবুলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়। বলেছেন, “খুব ভাল প্রার্থী বেছেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকলের পছন্দ হবে। নানা মত নির্বিশেষে তাঁকে সমর্থন দেবেন সকলে। নিশ্চয়ই বাবুল জিতবেন।”