তরুণকান্তি দাস: পুরনো আলুর অভাব নেই। কিন্তু আবহাওয়া সঙ্গ দিচ্ছে না বলে এবার পিছিয়ে যাবে আলুচাষ। নতুন আলু উঠবে দেরিতে। এবং পুরনো আলু চলবে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। তাই এখন যা মজুদ রয়েছে সেখান থেকে বাড়তি মুনাফার ধান্দায় রয়েছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
পরিস্থিতি এখন যেখানে দাঁড়িয়েছে তাতে করে কোনওভাবেই পাইকারি বাজারে বাছাই আলুর দাম ১৫ টাকার নিচে নামবে না, বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের। গড় আলু থাকবে ১২ থেকে ১৩ টাকার মধ্যে। সোমবার ও মঙ্গলবার কলকাতার একাধিক বাজারে নামেন এনফোর্সমেন্ট বিভাগের অফিসাররা। বিধাননগর, মানিকতলা এমনকি হুগলি, বর্ধমানের একাধিক বাজারে হানা দেন তাঁরা। অভিযানে দেখা গিয়েছে, খুচরো বিক্রেতারাই বাড়তি মুনাফার লোভে অনেক বেশি দামে বিক্রি করছেন। তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে। এমনকি পাইকারি বাজারে কত করে আলু কিনেছেন তার রসিদ দেখতে চাওয়া হয়। নির্দেশ দেওয়া হয়, আগামীতেও রসিদ রাখা অবশ্যিক। যাতে করে অসাধু পাইকারি বিক্রেতাদের ধরা যায়।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্সের বৈঠকের পর পাইকারি বাজারে দাম কমেছে অনেকটাই। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু কিছু অসাধু বিক্রেতা এখনও বাড়তি দাম নিচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু আড়তদার অবশ্য বাড়তি দামে আলু কেনা রয়েছে বলে দাবি করে এখনও নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। তাঁদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও অজুহাতে মানুষের উপর বাড়তি বোঝা চাপানো চলবে না। এবার বুলবুল এবং তার আগে তিন দফায় অসময়ের বৃষ্টি আলুর নাবি ফলনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নতুন আলু বাজারে আসবে কম করে দু’সপ্তাহ দেরিতে। অর্থাৎ জানুয়ারিতে। কিন্তু এখনই উত্তরপ্রদেশ এবং পঞ্জাব থেকে সামান্য হলেও নতুন আলু ঢুকছে। ওড়িশাতেও সময়ে আলু উঠবে। ফলে সেখানকার বাজারে আর বাংলার আলুর তেমন জোগান লাগবে না। যা রাজ্যের পক্ষে মঙ্গল বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
[আরও পড়ুন: বুধ-সকালে কলকাতায় শীতের আমেজ, এক লাফে ২ ডিগ্রি কমল তাপমাত্রা ]
হিমঘর মালিক সংগঠনের কর্তা পতিতপাবন দে বলেন, “সোমবার পর্যন্ত হিমঘর থেকে ৮৪ শতাংশ আলু বেরিয়েছে। যে ১৬ শতাংশ আলু রয়েছে তার মধ্যে মোটামুটি চার শতাংশ লাগবে বীজের জন্য। বাকিটা, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত লাখ টনের কিছু বেশি আলু বাঙালির হেঁশেলের চাহিদা মেটাবে।” আসলে বুলবুলের আগের দিন এবং পরবর্তী দু’দিন, সাধারন মানুষ এবং কিছু ব্যবসায়ী আতঙ্কে বাড়তি মজুদ করেছিলেন। সেটাও সমস্যা বাড়িয়েছে। গতবারের ঝড় ফণীর স্মৃতি মানুষের মনে টাটকা। তার প্রভাবেই বুলবুলের সময় এই অবস্থা। তার জের পড়েছে বাজারে। কারণ বুলবুলের ঠিক আগে প্রচুর আলু নিয়েছে ওড়িশা। সেখানে ব্যবসায়ীরা মজুদ করেছেন। ফলে হঠাৎ দাম বাড়িয়ে বাঙালির আবশ্যিক তালিকাভুক্ত সবজিটি অনেক জায়গায় ২৫ টাকা পর্যন্ত কেজি ছুঁয়ে যায়। নবান্নে বৈঠকের পর প্রশাসনিক চাপে যা নেমে এসেছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। আগামী দু’-তিন দিনে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে ধারণা। কমবে দাম।
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা দিলীপ প্রতিহার বলেন, “সমস্যাটা অন্য জায়গায়। এবার নাবি ফলনে সমস্যা হবে। এখন যদিও বাজারের চাহিদা তা সামলানো যায়, কিছুদিন পর সামান্য হলেও ভাঁড়ারে টান পড়বে। যা মজুদ রয়েছে তা দিয়ে নতুন আলুর ব্যাপক জোগান বাজারে না এলে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত চালানো যাবে না। সেই ঘাটতি মেটানোটা দুষ্কর।”
[আরও পড়ুন: সুস্বাস্থ্যের আশায় চাহিদা বাড়ছে ড্রাগন ফ্রুটের, উৎপাদনে মন পুরুলিয়ার কৃষকদের ]
The post আকাশছোঁয়া দাম, ডিসেম্বরের শেষেই মধ্যবিত্তের পাত থেকে উধাও হতে পারে আলু appeared first on Sangbad Pratidin.