গৌতম ব্রহ্ম: জৈব চাষে রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও ঝাড়গ্রাম। দুই জেলাতেই চার হাজার হেক্টর করে করা হয়েছে গত তিনবছরে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বীরভূম। রাঙামাটির এই জেলার ৩ হাজার হেক্টর জমিতে জৈব চাষ হয়েছে। তারপরেই রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর। পশ্চিমাঞ্চলের এই তিন জেলায় ২ হাজার করে মোট ৬ হাজার হেক্টর জমিতে জৈব চাষ হয়েছে।
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ারেও জৈব চাষ বেড়েছে। উত্তরবঙ্গের এই তিন জেলায় এক হাজার করে মোট ৪ হাজার হেক্টর জমিতে জৈব চাষের তথ্য রয়েছে প্রশাসনের কাছে। সবমিলিয়ে গত তিন বছরে রাজ্যে মোট ২১ হাজার হেক্টর জমিতে জৈব চাষ হয়েছে। ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীর উদ্যোগে আরও জমিতে জৈব চাষ চলছে রাজ্যে।
অনেকদিন ধরেই জৈব চাষে হাত পাকাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। 'পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা'-র অধীনে সার্টিফায়েড জৈব চাষ বাড়ছে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় নিজে রাসায়নিকমুক্ত চাষের সম্প্রসারণে আগ্রহী। এই ব্যাপারে বিহারের কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নে বৈঠকও করেছিলেন। বিহার জৈব চাষে অনেকটা এগিয়েছে। পড়শি সিকিমেও দীর্ঘদিন ধরে চাষ হচ্ছে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এ রাজ্যে সেভাবে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হচ্ছিল না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। সাধারণ মানুষ 'অর্গানিক ফুড'-এর গুরুত্ব বুঝতে পারছে। বাজারও তৈরি হয়েছে। তিরিশটিরও বেশি কৃষক গোষ্ঠী জৈব চাষে এগিয়ে এসেছে। চাল, ডাল, তৈলবীজ, সবই জৈব পদ্ধতিতে চাষ করছে। সবজি চাষেও জৈব পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ অর্গানিক খাবার খাচ্ছেন। একাধিক বিপণি খুলেছে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। এমনটাই জানালেন রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত কৃষি আধিকারিক ড. অনুপল পাল।
রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত কৃষি আধিকারিকের কথায়, রাজ্যে দুধরনের জৈব চাষ হচ্ছে। সার্টিফায়েড ও নন-সার্টিফায়েড। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে স্বাভাবিক উপায়েই জৈব চাষ হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেও রাসায়নিক সার মুক্ত প্রাকৃতিক চাষ হচ্ছে। যা জৈব চাষেরই নামান্তর। অনুপমবাবুর দাবি, জৈব চাষের বিরুদ্ধে একটি লবি বরাবর সক্রিয়। সবুজ বিপ্লব তারই ফসল। বিখ্যাত পরিবেশবিদ বন্দনা শিবের 'ভায়োলেন্স অফ গ্রিন রেভলিউশন' বইটিতে সবুজ বিপ্লবের কুফল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনুপমবাবুর পর্যবেক্ষণ, গোটা দেশে ৮২ হাজার দেশীয় প্রজাতির ধান রয়েছে। বাংলায় এই সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি। বিশ্বে এখনও এমন কোনও হাইব্রিড ধান আবিষ্কার হয়নি, যা দেশীয় প্রজাতিকে টেক্কা দিতে পারে।