দীপঙ্কর মণ্ডল: আরও ২২ বছর চাকরি ছিল অধ্যাপক বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Baisakhi Banerjee)। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ‘উসে উখাড় কে ফেক দো’ আহ্বানে ‘অপমানিত’ বৈশাখী চাকরিই ছেড়ে দিলেন। বুধবার সন্ধেয় তিনি ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee)। ই-মেলের প্রতিলিপি গিয়েছে রাজভবনে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এবং উচ্চশিক্ষা দপ্তরে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বৈশাখী বেশ কয়েক বছর ধরে সমস্যায় আছেন। মিল্লি আল আমিন কলেজে অধ্যাপনা করার সময় তিনি বারবার হেনস্তার অভিযোগ করেছেন। অপমানিত হয়েছেন। সরকারকে জানানো সত্ত্বেও তা মেটেনি। পরে তাঁকেই ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয় সরকার। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee) এবং তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে সমস্যা আরও বাড়ে। গত জুন মাসে অধ্যক্ষের পদে ইস্তফা দেন বৈশাখী। যদিও তা গৃহীত হয়েছে বলে তাঁকে জানানো হয়নি। সম্প্রতি মিল্লি আল আমিন কলেজে নানা দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করেন। সেখানে গিয়ে পুরমন্ত্রী বলেছিলেন, বৈশাখীকে সমূলে উৎপাটিত কর। শোভন এবং বৈশাখী দুজনে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছে ফিরহাদের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। পরের দিনই বৈশাখীকে মিল্লি আল আমিন থেকে রামমোহন কলেজে বদলী করা হয়। চারদিন আগে পর পর এই ঘটনাগুলো ঘটে। করোনা সতর্কতায় রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ। তার মাঝে এমন তড়িঘড়ি বদলি মেনে নিতে পারেননি বৈশাখী। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরিতার্থ করতে তাঁকে অন্য কলেজে পাঠানো হল বলে তিনি আগেই জানিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: সংকটজনক হলেও চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বুদ্ধবাবু, হাসপাতালে গেলেন উদ্বিগ্ন মমতা]
ইস্তফা প্রসঙ্গে বৈশাখী এদিন বলেন, “রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) আমাকে উৎখাত করবেন বলেছিলেন। তার পরেই আমাকে মিল্লি আল আমিন কলেজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষক জীবনে আসল কথা হল সম্মান। যেভাবে আমাকে অপমান করা হল তারপর আর ছাত্রীদের সামনে দাঁড়ানো যায় না। সম্মান রক্ষার জন্যই আমি শিক্ষকতা ছেড়ে দিলাম।” শিক্ষামন্ত্রীকে এদিন তিন পাতার ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন বৈশাখী। বাম জমানায় তাঁকে কিভাবে লড়াই করে কলেজের কাজ চালাতে হত তা উল্লেখ করেছেন। অন্য একটি কলেজের পরিচালন সমিতি, শাসকদলের অধ্যাপক সংগঠনের পদ কেড়ে নেওয়া এবং অধ্যাপনার কাজে স্থানীয় রাজনীতিকদের লাগাতার অসম্মান তাকে ব্যথিত করেছিল বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তাঁকে সম্প্রতি যে বদলির চিঠি ধরানো হয়েছে সেখানে কারণ হিসেবে জনস্বার্থের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বৈশাখীর বক্তব্য, জনস্বার্থে নয় রাজনৈতিক কারণেই তাকে বদলি করা হয়েছে। ইস্তফাপত্রে বৈশাখী জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী চাইলে তাঁর চাকরি জীবনের বকেয়া টাকা নাও দিতে পারেন। এমনকি ২২ বছর আগে তাঁকে অবসর নিতে বাধ্য করায় শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন বৈশাখী।