দীপঙ্কর মণ্ডল: দেশজুড়ে লকডাউন। করোনা সতর্কতার জেরে এ রাজ্যেও বন্ধ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসবের মধ্যেই মিল্লি আল-আমিন কলেজের এক শিক্ষিকাকে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের ওএসডি পদে বসানো হল। শুক্রবার উচ্চশিক্ষা দপ্তর এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে। যা নিয়ে বিস্মিত শিক্ষামহল।
মিল্লি আল-আমিন কলেজের অধ্যক্ষা পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়ে আগেই ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন অধ্যাপক বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’ সপ্তাহ পরেও তা গৃহীত হয়েছে কি না তা জানায়নি উচ্চশিক্ষা দপ্তর। শনিবার বৈশাখী জানিয়েছেন, “আমাদের কলেজের এক শিক্ষিকা নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। অভিযুক্তর নাম সাবিনা নিশাত ওমর। দপ্তরকে সবকিছু জানিয়েও ফল হয়নি। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁকেই যদি মাথায় বসানো হয় তাহলে বিচারের যে শেষ আশাটুকু ছিল তা নিভে গেল।” প্রসঙ্গত, মিল্লি আল-আমিন কলেজের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বেশ পুরনো। সাবিনার আমলেই ২০১৩ সালে তিন শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করা দিয়ে শুরু। পরে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং কর্মীদের বড় অংশ বৈশাখীর পাশে দাঁড়ান। কিন্তু পরিচালন সমিতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষার বিরুদ্ধে অনড় থাকে। বিকাশ ভবনে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত বদল, শুরু হওয়ার আগেই স্থগিত পড়ুয়াদের ভারচুয়াল ক্লাস]
কিন্তু সমস্যা যে তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে গিয়েছে। এমনকি এই সংখ্যালঘু মহিলা কলেজে বিবাদের খবর গিয়েছে নবান্ন পর্যন্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে বৈশাখীর। তারপর রাজ্য রাজনীতিতে কিছুটা চমক দেখা গিয়েছিল। প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ এক কাউন্সিলরকে বেহালা পূর্বে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক করা হয়েছিল। সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল রত্না চট্টোপাধ্যায়কে। কয়েকদিন পরে মিল্লি আল-আমিন কলেজ নিয়ে এক বৈঠকের মাঝেই বিকাশ ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন বৈশাখী। তাঁকে যোগ্য সম্মান করার পরিবর্তে অসম্মানের অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার একদিন পরেই নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়ে চিঠি পাঠান বৈশাখী।
উচ্চশিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, একটি কমিটি গড়া হয়েছে। বৈশাখীর ইস্তফাপত্র গৃহীত হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবে কমিটি। বিকাশ ভবনে বৈঠকের সময়েই রাজ্যে শুরু হয় করোনা সতর্কতা। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব প্রতিষ্ঠানেই ছুটি ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। আপাতত ঠিক আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খুলবে ১৬ এপ্রিল। বিকাশ ভবনের এক কর্তা দাবি করেছেন, নিয়ম মেনেই সাবিনা নিশাত ওমরকে ডিপিআই অফিসের ওএসডি করা হয়েছে। কিন্তু লকডাউন চলাকালীন কি এমন জরুরি দরকার পড়ল, যে তড়িঘড়ি এমন নিয়োগ করা হল? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি ওই কর্তা। দৃঢ় গলায় বৈশাখী জানিয়েছেন, “আমাকে অপমান করতে এবং শোভনবাবুকে রাজনৈতিকভাবে একঘরে করতেই তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিয়েছে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। আগেও বারবার আঘাত এসেছে। তবে এটাই শেষ আঘাত। যা আমি মাথা পেতে নিলাম।”
[আরও পড়ুন: লকডাউনে ভাঁড়ারে টান, খরচে রাশ টানতে নতুন নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত রাজ্যের]
The post উচ্চশিক্ষা দপ্তরের উঁচু পদে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শিক্ষিকা, মর্মাহত বৈশাখী appeared first on Sangbad Pratidin.