shono
Advertisement

কলকাতায় পাখি পাচারে বাংলাদেশ যোগ, চিড়িয়াখানার টাউকান চুরি রহস্যে নয়া তথ্য

আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাখির খাঁচা থেকে চুরি যায় তিনটি ‘কিল বিলড টাউকান’।
Posted: 11:27 AM Mar 22, 2021Updated: 01:10 PM Mar 22, 2021
অর্ণব আইচ: বাংলাদেশের (Bangladesh) চুয়াডাঙার আজমত মুসারিফ। অথবা, উত্তর ২৪ পরগনার ঘোজাডাঙার ইলিয়াস হোসেন গাজি বা হারুন রশিদ। বাংলাদেশ সীমান্তে পাখি পাচারে গ্রেপ্তার হওয়া এই দাগিরাই এখন চিড়িয়াখানা থেকে ‘কিল বিলড টাউকান’ চুরির রহস্য সমাধানের পাখির চোখ। আবার বসিরহাটের পানিতারের বাসিন্দা রেহান মণ্ডলই বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে কলকাতায় পাখি পাচারচক্রের ‘কি পার্সন’, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও এখনও অধরা সে।

[আরও পড়ুন: প্রতিশ্রুতিপত্র নয়, নির্বাচনী ইস্তাহার কেন ‘সংকল্পপত্র’? ব্যাখ্যা দিলেন অমিত শাহ]

তদন্ত শুরু করার পর লালবাজারের গোয়েন্দারা জেনেছেন, বাংলাদেশ থেকেই উত্তর ২৪ পরগনায় পাচার হচ্ছে বিদেশি ও বিভিন্ন ধরনের বিরল পাখি। পাচারকারীদের কাছে থাকে বাংলাদেশি সিমকার্ড। তার মাধ্যমেই প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের পাখি পাচার চক্রের পাণ্ডাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে উত্তর ২৪ পরগনার পাচারকারীরা। ওই জেলা থেকে পাচার হওয়া পাখি চলে আসে কলকাতায়। গত বছরের আগস্ট মাসে উত্তর ২৪ পরগনার আংরাইল ও অক্টোবর মাসে তেঁতুলবেড়িয়া সীমান্ত থেকে বিএসএফের হাত থেকে উদ্ধার হয়েছিল ‘কিল বিলড টাউকান’। গোয়েন্দারা জেনেছেন, এগুলি কলকাতায় নিয়ে আসার কথা ছিল। কারণ, বাংলাদেশ থেকে পাখি পাচার হয়ে শেষ পর্যন্ত যে কলকাতায় আসে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত গোয়েন্দারা। টাউকান-সহ উদ্ধার হওয়া চোরাই পাখি উত্তর কলকাতার গ্যালিফ স্ট্রিটে পাচার করা হত, এমন সম্ভাবনা পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। যদিও তদন্তে কলকাতার ‘চোরবাজারে’রও হদিশ মিলেছে। সেই ক্ষেত্রে চাঁদনি অথবা শিয়ালদহের মার্কেটে পাখি পাচার চক্রের পান্ডারা রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাখির খাঁচা থেকে চুরি যায় তিনটি ‘কিল বিলড টাউকান’। সম্প্রতি একটি পাখির চঞ্চু বা ঠোঁটজোড়া উদ্ধার হয়েছে খাঁচার কাছেই একটি গাছের তলা থেকে। ফলে সেই পাখিটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। বাকি দু’টি পাখি চোরাপথে পাচার করা হয়েছে, এমন সম্ভাবনা গোয়েন্দারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। বাংলাদেশ থেকে আসা পাখি পাচারকারীরা কাদের হাতে চোরাই পাখি তুলে দেয়, তাদের পরিচয় ও বিবরণ জানতে পারলে টাউকানের হদিশ মিলতেও পারে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। তবে কলকাতা থেকে ভিনরাজ্যের কোনও জায়গায় এই পাখিগুলিকে ইতিমধ্যেই পাচার করে দেওয়া হয়েছে, এমন সম্ভাবনা গোয়েন্দা পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না।

Advertisement

এদিকে, বিএসএফের গোয়েন্দাদের সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ৮৮০টি বিরল ও বিদেশি পাখি উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার ৬টি কাকাতুয়া পাচার করতে গিয়ে বিএসএফের গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে এক পাচারকারী। তাকে জেরা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের মতে, এই তথ্য অনুযায়ী কলকাতার পাখি পাচারকারীদের সন্ধান মিলতে পারে। সেই সূত্র ধরেই পৌঁছনো যেতে পারে চিড়িয়াখানা থেকে চুরি যাওয়া টাউকানের কাছে।

উত্তর ২৪ পরগনার ঘোজাডাঙা এলাকা থেকে বিএসএফের গোয়েন্দারা একটি স্কুটি আটক করেন। চালক ইলিয়াস হোসেন গাজিকে গ্রেফতার করা হয়। সে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থানা এলাকার পানিতারের ঘোজাডাঙার মাজিদপাড়ার বাসিন্দা। জেরার মুখে সে বিএসএফের গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, সে গত পাঁচ বছর ধরে পাখি পাচারের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার ডুমরার বাসিন্দা পাখি পাচারচক্রের পাণ্ডা হারুনের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। ইলিয়াসের দাদা নাসিরুদ্দিন গাজিও এই কারবারের সঙ্গে জড়িত। পাখি পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ঘোজাডাঙার বাসিন্দা শাহাবউদ্দিন মণ্ডল, রাজু মণ্ডল, রেহান মণ্ডল। ইলিয়াসের দাবি, পানিতরের নিখিলপাড়ার বাসিন্দা রেহান মণ্ডলই বিরল পাখি কলকাতায় পাচার করে। রেহানের কাছে বাংলাদেশের সিমকার্ড থাকে বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। ওই ব্যক্তিকে ধরতে পারলে টাউকানের খোঁজও মিলতে পারে। এদিকে, গত নভেম্বরে রঙ্গিপোতা সীমান্ত থেকে পাখি-সহ গ্রেপ্তার হয়েছে বাংলাদেশের চুয়াডাঙার আজমত মুসারিফ। বাংলাদেশের আজমতের বিরুদ্ধে লাগু হয়েছে বিদেশি আইনও। টাউকানের রহস্য সমাধানে তাকেও জেরা করতে চান গোয়েন্দারা।

[আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ-সত্যজিতের নামে বিশ্বমানের পুরস্কার, ইস্তাহারে সংস্কৃতিতে বিশেষ নজর BJP’র]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement