সুকুমার সরকার, ঢাকা: উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইলিশ ধরার উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাংলাদেশ সরকার। তবু কিছু মৎস্যজীবী রাতের অন্ধকারে নদ-নদীতে ইলিশ ধরছেন কিছু মৎস্য়জীবী। ইতিমধ্যে শতাধিক শখের ইলিশ শিকারী পাকড়াও হয়েছে পুলিশের হাতে। ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় আরও ৫৮ মৎস্যজীবীকে আটক করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৬ লক্ষ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ১০টি মাছ ধরার নৌকা এবং ৩০০ কেজি ইলিশ।
উৎপাদন বাড়াতে সরকার প্রতি বছরের মতো এবারও ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই সময় কার্ডধারী মৎস্যজীবীদের নির্দ্দিষ্ট পরিমাণ চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপণ্য দেওয়া হয়। গত ১২ অক্টোবর থেকে জারি হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত।
[আরও পড়ুন: Durga Pujo 2023: চতুর্থীর সকালে দুর্ঘটনা, কাজে যাওয়ার পথে হাতির হানায় মৃত ১]
অন্যদিকে দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠিতে ভিন্ন চেহারা। জেলার নলছিটি উপজেলাধীন সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ইলিশ শিকার করছেন অনেকে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বিষখালী নদীর হদুয়া লঞ্চঘাট, পুরান হদুয়া বাজার, নলবুনিয়া, ভবানীপুর, ইসলামপুর, তেঁতুলবাড়িয়া লঞ্চঘাট ও সুগন্ধা নদীর অনুরাগ, দপদপিয়া, মাটিভাঙা এলাকায় চলছে অবাধে ইলিশ নিধন। আগে নদীতে জাল ফেললে দু-চারটে ইলিশ ধরা পড়ত। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা চলাকালে নদীর নির্দিষ্ট পয়েন্টে জাল ফেলতে পারলেই ডিমওয়ালা ইলিশের সঙ্গে প্রচুর খোকা ইলিশও ধরা পড়ছে। ধরার পরপরই প্রশাসনের নজর এড়াতে, মৎস্যজীবীরা নৌকা থেকে নামিয়ে নদীর তীরের ঝোপ-জঙ্গলে ও কচুরিপানার মধ্যে ইলিশ লুকিয়ে রাখছে। সস্তায় ইলিশ কিনতে ক্রেতারা মোটরবাইক ও বাইসাইকেলে করে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে এসব ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় কার্ডধারী কোনো মৎস্যজীবী মা ইলিশ শিকার করতে গিয়ে ধরা পড়লে ‘জেলে কার্ড’ বাতিল-সহ তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। প্রশাসনের এমন সর্তকতা কারণে কার্ডধারী অনেক মৎস্যজীবী নিজে নদীতে না নেমে নৌকা ও জাল দিয়ে মৌসুমি মৎস্যজীবীদের সহযোগিতা করছে। এসব মৌসুমি ইলিশ নিধনকারীরা স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে নৌকাপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকার চুক্তি করে নদীতে নৌকা ভাসায় ইলিশ নিধনের জন্য। এছাড়া প্রশাসন নদীতে অভিযানে এলে সঙ্গে সঙ্গে মৎস্যজীবীদের মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করা হয় তথ্য সরবরাহকারী। বিনিময়ে তাঁদের প্রত্যেককে ৫০০-৬০০ টাকা করে দেওয়া হয়। তাঁদের কাজ হল নদী পাড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং নদীতে প্রশাসন অভিযানে এলেই মা ইলিশ নিধনকারী মৌসুমি জেলেদের সাবধান করে দেওয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মৌসুমি মৎস্যজীবী বলেন, “বর্তমানে প্রচুর ইলিশ জালে উঠছে। দিনের চেয়ে রাতেই বেশি নিরাপদ। তাই তারা রাতেই বেশি জাল ফেলছেন। বিক্রির জন্য তাদের কোনও চিন্তা করতে হয় না।”