সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন মূল হত্যাকারী আমানুল্লাহ। ঢাকা পুলিশের দাবি, আমানুল্লাহ একেকবার একেক কথা বলে গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। কেন খুন তা নিয়ে এখনও কিছুই স্পষ্ট করেনি অভিযুক্ত। হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়ানোর চেষ্টার পাশাপাশি নিজের পরিচয় নিয়েও মিথ্যা তথ্য দেন। নিজেকে আমানুল্লাহ বলে পরিচয় দিলেও তার আসল নাম শিমুল ভূঁইয়া। তিনি খুলনা অঞ্চলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী এবং চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা।
তদন্তকারীদের দাবি, হত্যার বিষয়েও আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছেন। কখনো বলছেন মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, কখনো বলছেন চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে পরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আবার কখনো বলছেন, খুনের সময় তিনি (শিমুল) ফ্ল্যাটের ওপরে ছিলেন। কী কারণে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, সে বিষয়ে বারবার জিজ্ঞেস করলেও তিনি কোনো কারণ স্পষ্ট করছেন না। শুধু বলছেন, সব জানেন শাহিন। তাকে শুধু বলা হয়েছে হত্যার জন্য, তাই তিনি হত্যা করেছেন।
[আরও পড়ুন: পোর্শেকাণ্ডের মধ্যেই ফের মহারাষ্ট্রে যুবকের গাড়ি পিষল ৭ জনকে! সংকটজনক তিন মাসের শিশু]
১৩ মে কলকাতায় সাংসদকে নৃশংসভাবে হত্যার দুদিন পর দেশে চলে আসেন হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। সেখান থেকে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাকে হেফাজতে নিয়ে জেরা শুরু করে। সেখানেই সে স্বীকার করে সাংসদকে তার নেতৃত্বেই খুন করা হয়েছে। এই খুনের মাস্টারমাইন্ড সাংসদের বন্ধু ও ব্যবসায়িক সহযোগী আক্তারুজ্জামান শাহিন। তবে পুলিশ যে তাদের হদিশ পেতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি অভিযুক্তরা। তাঁরা ভেবেছিল খুনের পর দেহ এমনভাবে লোপাট করা হবে যাতে কেউ কোনও দিন তা খুঁজে না পায়। সেভাবেই খুনের পর তারা আবার দেশে ফিরে আসে। এবং নির্বিঘ্নেই দিন কাটাতে থাকে।
[আরও পড়ুন: যোগীরাজ্যে একাকী লড়াই মমতার ‘সৈনিকে’র, অখিলেশের সমর্থনে জয়ের স্বপ্ন ললিতেশপতির]
এদিকে আমানুল্লাহ গ্রেপ্তারের পর প্রকাশ্যে আসে তার আসল পরিচয়। পুলিশের দাবি, অভিযক্ত খুলনার অপরাধ জগতের অন্যতম মাথা এবং সাধারণ মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। তার স্ত্রী ও ভাই প্রকাশ্য রাজনীতিতে রয়েছেন। স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন মুক্তা খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য। তবে পুলিশের খাতায় হত্যা মামলার আসামি। ছোট ভাই শরিফ মোহাম্মদ ভূঁইয়া শিপলু দামোদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল একসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। সে সময় স্থানীয় ডুমুরিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান ইমরানকে হত্যার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে। রাজশাহীতে থাকাকালীন ১৯৯১ সালে একটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে সাত বছর জেল খাটে অভিযুক্ত। ২০০০ সালে যশোরের অভয়নগরে অন্য একটি খুনের মামলায় ১৩ বছর পর্যন্ত জেল খাটে শিমুল ভূঁইয়া। এ ছাড়া তার নামে অসংখ্য খুনের মামলা রয়েছে।