সুকুমার সরকার, ঢাকা: নাশকতার আশঙ্কা ছিল। আর তা এড়াতে দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন পুজোমণ্ডপ ঢেকে ফেলা হয়েছিল কড়া নিরাপত্তার চাদরে। শারদীয়া সেখানে নির্বিঘ্নেই চলছিল। কিন্তু গন্ডগোল বাঁধল একেবারে শেষ লগ্নে। শুক্রবার রাতে পুরাতন ঢাকার তাঁতিবাজারের একটি পুজোমণ্ডপে ছোড়া হল ‘পেট্রলবোমা’! তাতে সামান্য আগুন ধরলেও কেউ হতাহত হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুজোমণ্ডপের পাশের একটি গলি থেকে কয়েকজন যুবক মণ্ডপ লক্ষ্য করে একটি বোতল ছুড়ে মারে। স্বেচ্ছাসেবকেরা হামলাকারীদের ধরতে গেলে তারা ছুরিকাঘাত করে। এতেই অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। কালো হয়ে যাওয়া সলতে-সহ পেট্রলভর্তি কাচের বোতলটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ঢাকা পুলিশের মহাপরিদর্শ (আইজিপি) মহম্মদ ময়নুল ইসলাম এই হামলার বিষয়টি এড়িয়ে বলেছেন, ‘‘এবারের দুর্গাপুজো অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। অনেকেই দুর্গাপুজো ঘিরে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পুজো শুরুর আগে আপনাদের আশ্বস্ত করেছি, শান্তিপূর্ণভাবে পুজো উদ্যাপিত হবে। এবার দুর্গাপুজো অনেক জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়েছে।'' রাজধানীর বনানী পুজোমণ্ডপ পরিদর্শন করে এসব জানান আইজিপি। তাঁর কথায়, ''দেশে ৩২ হাজারের বেশি পুজোমণ্ডপে দুর্গাপুজো উদযাপিত হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যার প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত ৩৫টি অপ্রীতিকর ঘটনায় ১১টি মামলা ও ২৪টি জিডি হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে।''
এদিকে তাঁতিবাজার পুজোমণ্ডপে হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এটা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। আটক একজনের কাছ থেকে একটি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাঁতীবাজার পুজো উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় শাহ বলেন, ''পেট্রলবোমা হামলা ও ছিনতাই দুটি পৃথক ঘটনা। পুজোমণ্ডপে নাশকতার জন্য পেট্রলবোমা হামলা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পেট্রল ভর্তি একটি বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ।'' ছুরিকাঘাতে জখম দীপ্ত দে, ঝন্টু ধর, খোকন ধর, সাগর ঘোষ ও মহম্মদ রমিজ উদ্দিন। সকলের বয়স ২৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। তাঁরা স্যর সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সবাই আশঙ্কামুক্ত বলে কোতোয়ালি থানার এসআই মো. লিটন জানিয়েছেন।
এই ঘটনায় আটক তিনজন গাইবান্ধার আকাশ, পটুয়াখালির মহম্মদ হৃদয় ও নোয়াখালির মহম্মদ জীবন। তারা কোতোয়ালি থানা হেফাজতে আছে। পুজোমণ্ডপটি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। সেখানকার একটি ফুটেজে দেখা গেছে, পুজোমণ্ডপের পাশের একটি গলিতে তিন যুবক জড়ো হয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। এর কিছুক্ষণ পরে তারা পুজোমণ্ডপের কাছে গিয়ে হামলা করে।