সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তাক্ত দিন ২০১৬ সালের ১ জুলাই। সেদিন রাজধানী ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। ওই ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ২ পুলিশ আধিকারিক। তাঁদের স্মৃতিতেই তৈরি করা হয়েছিল ‘দীপ্ত শপথ’ স্মারক। এবার সেই ভাস্কর্যই গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্মারক বেদি ভেঙে সেখানে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরিরের পোস্টার।
আট বছর আগে ওই দিনেই বেকারিতে ঢুকে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছিল বেশ কয়েকজন জঙ্গি। ১৮ জন বিদেশি-সহ ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তারা। মৃতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, ৭ জন জাপানের, ১ জন ভারতীয় এবং ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। ভয়াবহ ওই হামলার দায় নেয় আইএস। জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হন ২ পুলিশ অফিসার। এর পর ২০১৮ সালে পুরনো গুলশন থানার সামনে ‘দীপ্ত শপথ’ স্মারক উন্মোচন করে ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশ। সেখানে নিহত দুই পুলিশ অফিসারের দুটি মূর্তি বসানো হয়। প্রত্যেক বছর ১ জুলাই সেখানে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হত। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতে দেখা যায় মূর্তি দুটিকে বেদি থেকে ভেঙে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পাশেই নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরিরের তিনটি পোস্টারও লাগানো ছিল। পোস্টারগুলোতে বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন: এবার বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিশেষ নিরাপত্তা প্রত্যাহার, হাসিনাকে কোণঠাসা ইউনুস সরকারের?]
প্রশ্ন উঠছে এবার কি ইসলামিক রাষ্ট্র হওয়ার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ? চলতি মাসে পদ্মা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুথানে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। দেশে ছেড়ে তিনি এখন রয়েছেন ভারতে। হাসিনার দেশত্যাগের পর কার্যত 'ধবংসযজ্ঞ' চলেছে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে। দিকে দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়। মুজিবকন্যার গদিচ্যুত হওয়ার পর থেকে নাকি হিজবুত তাহরিরের সদস্যদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে এই জঙ্গি সংগঠনটি বাংলাদেশে ঘাঁটি মজবুত করে। কিন্তু ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আওয়ামি লিগ সরকার হিজবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। জনগণের নিরাপত্তার জন্য এই সংগঠনটি বিপজ্জনক বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শুধু বাংলাদেশই নয় বিশ্বের বহু মুসলিম দেশেই হিজবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাসিনা সরতেই ফের মাথাচারা দিচ্ছে তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, হিজবুত তাহরিরকে মদত দেওয়ার পিছনে জামাতের হাত থাকতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে হিংসাত্মক করে তোলার অভিযোগে জামাত-ই-ইসলামি ও ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল তৎকালীন হাসিনা সরকার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত এই নয়া সরকার ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার ডাক দিলেও বাস্তবে তা কতটা হচ্ছে, সেনিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। কয়েকদিন আগেই জামাতের সঙ্গে বৈঠক করে হেফাজতে ইসলামের প্রধানরা বলে খবর। এখন সরকারের বিভিন্ন পদে হাসিনাপন্থীদের সরিয়ে জামাতের মতো সমমনা দলগুলো সদস্যদের বসানো হচ্ছে। ফলে এই ঘটনাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে।