সুকুমার সরকার, ঢাকা: শুরু হয়ে গিয়েছে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। ধুমধাম করে দুর্গাপুজো পালিত হচ্ছে বাংলাদেশের নানা জায়গায়। কিন্তু শারদোৎসব শুরু হওয়ার আগে থেকে নানা হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন হিন্দুরা। উঠেছে এমন অভিযোগও। কিন্তু যেকোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে উৎসব উদযাপন করতে সচেষ্ট ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সেই লক্ষ্য়ে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। দুর্গাপুজোয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দর্শণার্থীদের ব্যাগ, থলে বা পোটলা সঙ্গে নিয়ে মণ্ডপে প্রবেশ না করতে অনুরোধ করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবের নিরাপত্তায় কোনও ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী। রবিবার বিকেলে ঢাকার রমনা কালীমন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের মুখমুখী হয়ে তিনি বলেন, "দুর্গাপুজো যেন ভালোভাবে নির্বিঘ্নে হয়, সেজন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে ৮ দফা নির্দেশনা প্রতিটি পুজোমণ্ডপে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, এসপি, ডিসি, ইউএনও, ওসিসহ আমাদের প্রশাসনে যাঁরা রয়েছেন, সকলকে আমরা নোটিস পাঠিয়েছি। পুজো কমিটিগুলো ভালো আয়োজন করেছে। সেচ্ছাসেবীরা ২৪ ঘণ্টা থাকবেন। এবার কোনও ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। পুজো এবার নির্বিঘ্নে হবে।" এছাড়া উৎসব চলাকালীন উস্কানির বিরুদ্ধে সত্য ঘটনা তুলে ধরতে গণমাধ্যমকে আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামি লিগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাড়িঘর ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়। যার পর থেকে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে। তবে দুর্গাপুজো ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে আশ্বস্ত করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, সোশাল মিডিয়া মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন কোনও ধরনের গুজব বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক শান্তি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বাড়তি নজর দিচ্ছে পুলিশ। এছাড়া পুজোমণ্ডপে যাওয়া নারী ও পুরুষ দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক প্রবেশ ও প্রস্থান পথের তৈরি করা হয়েছে। পুজোমণ্ডপে কোনও ব্যাগ, থলে করা যাবে না। মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া পুজো চলাকালীন আতশবাজি ও পটকা ফাটানো থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ। পুজো মণ্ডপের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে তাদের আলাদা পোশাক, পরিচয়পত্র ও ‘স্বেচ্ছাসেবক’ লিখিত আর্মড ব্যান্ড দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিমা বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রার নির্ধারিত রুট ব্যবহার করতে হবে। পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন হলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কন্ট্রোল রুমের ০২২৩৩৮০৬৬১, ০২২৩৩৮১৯৬৭, ০১৩২০০০১২৯৯, ০১৩২০০০১৩০০ নম্বর দেওয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কন্ট্রোল রুম: ০২২২৩৩৫৫৫০০, ০১৮১৭৬০২০৫০ এ যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে। এছাড়া ঢাকেশ্বরী মন্দির সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম: ৯৬১১৩৫৩, ০১৭০৫৫০৫৫২৯; র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কন্ট্রোল রুম: ০১৭৭৭৭২০০২৯; ফায়ার সার্ভিস সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম: ০২২২৩৩৫৫৫৫৫, ০১৭১৩০৩৮১৮১, ০১৭১৩০৩৮১৮২, ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯ নম্বরেও যোগাযোগ করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার ও থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট (www.police.gov.bd) থেকে নম্বর সংগ্রহ করার জন্য বলা হয়েছে।